কৃষ্ণ সাগর অঞ্চলে তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। ক্রিমিয়া উপকূলের কাছে কৃষ্ণ সাগরে অবস্থানরত ব্রিটিশ নৌবাহিনীর ডেস্ট্রয়ার এইচএমএসের দিকে গুলি এবং বোমাবর্ষণ করেছে রাশিয়া। তবে যুদ্ধের জন্য নয়, জলসীমা লঙ্ঘন করায় সতর্ক করার জন্যই বুধবার ওই গোলা ছোঁড়া হয়েছে বলে জানিয়েছে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে। খবর দ্য সান।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, ব্রিটিশ ডেস্ট্রয়ার এইচএমএস ডিফেন্ডারকে রুশ জলসীমা লঙ্ঘন করলে অস্ত্র ব্যবহার করা হবে বলে প্রাথমিক হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে। তারা এতে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। তার পরই সেই জাহাজ লক্ষ্য করে টহলদারি নৌবাহিনীর বিমান থেকে বোমা ছোঁড়ে রাশিয়া।
যদিও রাশিয়াকে পালটা জবাব দেয়নি ব্রিটিশ রণতরী। শুধু তাই নয়, এরপরই নিজের পথও বদলে ফেলে এইচএমএস ডিফেন্ডার। পাশাপাশি ব্রিটিশ সেনাবাহিনী জানিয়ে দেয়, এই ঘটনার ক্ষেত্রে কোনওরকম আন্তর্জাতিক নিয়মই ভাঙা হয়নি। তারা আন্তর্জাতিক জলসীমানার সমস্ত নিয়ম মেনেই ইউক্রেনের পাশ থেকে যাতায়াত করেছেন।
রুশ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বুধবার ক্রিমিয়ার কেপ ফিওলেন্ট উপকূলে এ ঘটনা ঘটেছে। ব্রিটিশ যুদ্ধজাহাজটি সীমা পেরিয়ে তিন কিলোমিটার ভেতরে প্রবেশ করেছিল বলে দাবি করা হয়েছে।
রাশিয়া বলছে, তাদের একটি প্যাট্রল জাহাজ এইচএমএস ডিফেন্ডারের দিকে গুলি ছুড়ে সতর্ক করে এবং একটি এসইউ-২৪ যুদ্ধবিমান সেটির গতিপথ বরাবর চারটি বোমা ফেলে। এতে বাধ্য হয়ে ব্রিটিশ যুদ্ধজাহাজটি মুখ ঘুরিয়ে নেয়।
ইতিমধ্যে বিষয়টি নিয়ে রাশিয়ায় তীব্র হইচই শুরু হয়েছে। এমনকী রুশ প্রশাসন বিষয়টি নিয়ে ব্রিটিশ নৌসেনাকেও জানিয়েছে বলে খবর। সেদেশের একাধিক সেনেটরও বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছে। অনেকেই এই ঘটনাকে রাশিয়ার সার্বভৌমত্বে আঘাত হিসেবেও আখ্যা দিয়েছে। আর এই ঘটনা ঘিরেই মূলত কৃষ্ণসাগর এলাকায় ছড়িয়েছে তুমুল উত্তেজনা।
যদিও ব্রিটেন এই ঘটনার কথা অস্বীকার করেছে। তার পাল্টা দাবি করেছে, রুশ সেনারা মহড়া দিচ্ছিল। ব্রিটিশ জাহাজকে লক্ষ্য করে বোমা ছোঁড়ার মত কোনও ঘটনা ঘটেনি। এইচএমএস ডিফেন্ডার নিয়মমাফিক টহলদারি চালাচ্ছিল। তবে কোনও জলসীমা লঙ্ঘনও করেনি ওই জাহাজ।
কৃষ্ণসাগরে রাশিয়ার আন্তর্জাতিক জলসীমায় মাঝে মধ্যেই সীমা লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটে থাকে। কিন্তু এই প্রথম কোনও বাহিনীকে লক্ষ্য করে বোমা ছোঁড়ার ঘটনা ঘটল।
এদিকে, ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবা বলেছেন, এই ঘটনাটি কৃষ্ণ সাগর এবং পার্শ্ববর্তী আজোভ সাগরে রাশিয়ার আগ্রাসী এবং উস্কানিমূলক নীতির বহিপ্রকাশ ঘটিয়েছে। এ ধরনের কার্যকলাপের মাধ্যমে রাশিয়া অনবরত ইউক্রেন এবং এর মিত্রদের হুমকি দিচ্ছে। কৃষ্ণ সাগরে ইউক্রেনকে সহযোগিতা করতে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
ইউক্রেনের ক্রিমিয়া দ্বীপটি নিয়ে বহুদিন ধরেই রাশিয়া এবং বিশ্বের অন্য দেশগুলির মধ্যে বিবাদ চরমে। এর আগে বহুবার যুদ্ধের পরিস্থিতিও তৈরি হয়েছিল।
২০১৪ সাল থেকে ক্রিমিয়াকে নিজেদের অংশ বলে দাবি করে এসেছে রুশরা। অন্যদিকে, দ্বীপটি যে ইউক্রেনের অংশ, এমনটাই মনে করে ন্যাটো গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলি। এই নিয়েই মস্কোর সঙ্গে বিবাদ ব্রিটেন-আমেরিকার মতো দেশগুলির। এখন এই ঘটনা ফের একবার বিতর্কের আগুন উসকে দেয় কি না, সেটাই দেখার।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২০১২
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ