করোনায় বিপর্যস্ত গোটা বিশ্বই কারবালার ময়দান। তবে এখানে তরবারি নয় বরং এখানে স্টেথোস্কোপ কাঁধে চিকিৎসকেরাই ফ্রন্টলাইন যোদ্ধা। কীভাবে সামলাচ্ছেন তারা! সুরক্ষা সরঞ্জামের অভাব, হাসপাতালগুলো বেডশূন্য, অক্সিজেনের জন্য হাহাকার, মানুষের মৃত্যু, স্বজনদের লাশ গ্রহণে অস্বীকার— এটাই আজকের বিশ্ব। এই বিপর্যস্ত গোটা বিশ্ব আজ তাকিয়ে আছে চিকিৎসকদের দিকে। কিন্তু এই মুহূর্তে তারা কতটাই-বা সাহায্য পাচ্ছে সরকার এবং সংশ্লিষ্ট প্রশাসন থেকে, সেই প্রসঙ্গেই ‘স্টেট ওয়াচ’ কথা বলেছে মনোরোগ চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডাঃ মোঃ রমজান সরকার সাজ্জাদের [এমবিবিএস, এমপিএইচ, পিএইচডি (মেন্টাল হেলথ, কোর্স), সিসিডি (বারডেম)] সাথে।
স্টেট ওয়াচ: করোনার শুরুতে চিকিৎসকেরা যখন চিকিৎসা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল, এটাকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
মোঃ রমজান সরকার সাজ্জাদ: করোনার শুরুতে আমাদের রাষ্ট্র স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন ছিলো না, করোনার সংক্রমণ ক্ষমতা নিয়ে উচ্চমহল জনসাধারণকে যথাযথ অবগত করতে অসমর্থ হচ্ছিলো। কিন্তু চিকিৎসকগণ ওয়াকিবহাল ছিলো এর ভয়াবহতা সম্পর্কে। এমনিতেই আমাদের দেশের সরকারি হাসপাতালগুলি অব্যবস্থাপনার দরুন নাজুক অবস্থায় থাকে, প্রয়োজনের তুলনায় চিকিৎসক বা নার্সিং স্টাফ সংকট ও বেড সংখ্যা বা উন্নত চিকিৎসা সুবিধার অপ্রতুলতার শিকার তার ওপর পুরোপুরি সেফটি প্রটোকলের আওতায় না এনেই চিকিৎসকদের অতিমারীর সামনে ফ্রন্টলাইনার করা শুরু হয়ে গিয়েছিলো, চিকিৎসকরা দ্রুত আক্রান্তও হচ্ছিলেন, এমতাবস্থায় সার্বিক স্বাস্থ্যঝুকির মধ্যে কাজ করতে অপারগতা প্রকাশ সেই সময়ের প্রেক্ষিতে স্বাভাবিক ছিলো।
স্টেট ওয়াচ: চিকিৎসকদের সুরক্ষা কতটা নিশ্চিত করতে পেরেছে প্রশাসন? পরিস্থিতি এখন কেমন? করোনা ওয়ার্ডের বাইরে অন্যান্য চিকিৎসকরা কতটা ঝুঁকিতে?
মোঃ রমজান সরকার সাজ্জাদ: এখন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর শুরুর তুলনায় মিনিমালি সু-সংগঠিত, তবে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল বাড়লেও অক্সিজেন সাপ্লাই বা আইসিইউ বেড এর সংকট রয়েই গেছে। এক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে আরো সুদূরপ্রসারী সিদ্ধান্ত কাম্য ছিলো। করোনা ওয়ার্ডের বাইরের ওয়ার্ডগুলিতেও চিকিৎসকগণ বা নার্সিং স্টাফগণ যে ঝুঁকিমুক্ত তা যেমন সত্য নয় তেমনি তাদের ঝুঁকির বিপরীতে সরকারি মেডিকেল কলেজ বা জেলা পর্যায়ের টার্শিয়ারি লেভেল হাসপাতালে স্বাস্থ্যনিরাপত্তার পর্যাপ্ত উদ্যোগ নাই বলাটা অসংগত নয়।
স্বাস্থ্য বা অন্যান্য জরুরি সেবা সেক্টরগুলি প্রণোদনার সুনির্দিষ্ট সুবিধাগুলোর মুখ এখন অব্দি যথাযথভাবে দেখেনি।
স্টেট ওয়াচ: করোনাক্রান্ত হলে যে ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করা হয়েছে, সে বিষয়ে আপনার চিন্তা ভাবনা কী? আরও কী করা যেত বা উচিত?
মোঃ রমজান সরকার সাজ্জাদ: আমরা এখনো পরিস্কারভাবে অবগত নই প্রণোদনার নীতিমালা বিষয়ে। কিন্তু সার্বিকভাবেই চিকিৎসকগণ এবং নার্সিং স্টাফেরা নিজ নিজ দায়বদ্ধতাতেই ২য় ওয়েভে এবং আসন্নপ্রায় ৩য় ওয়েভের চলমান উচ্চঝুঁকিসম্পন্ন কোভিডের ভারতীয় ধরণ ছড়িয়ে পড়বার হাই রিস্ক টাইমেও নিজ নিজ কাজে ফ্রন্টলাইনার হিসেবেই আবির্ভূত। তারা সরকার ও স্বাস্থ্য বা অন্যান্য জরুরি সেবা সেক্টরগুলি প্রণোদনার সুনির্দিষ্ট সুবিধাগুলোর মুখ এখন অব্দি যথাযথভাবে দেখেনি।
স্টেট ওয়াচ: করোনা মোকাবিলায় আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থা কতটা প্রস্তুত ছিল? আর কতটা সফল হলো?
মোঃ রমজান সরকার সাজ্জাদ: সত্যিটা হলো আমাদের স্বাস্থ্যবিভাগ করোনা মোকাবিলার জন্য কোনোভাবেই প্রস্তুত ছিলো না। তবে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করে এখন যা হোক কিছুটা স্ট্যাবিলিটি এসেছে ব্যবস্থাপনায় যার ফলস্বরূপ ১ম লকডাউন হতে ২য় ওয়েভ অব্দি পরিস্থিতি সাহসিকতার সাথে সামাল দেয়া গেছে। তবে ভারত সংলগ্ন সীমান্ত পর্যায়ের অ-দূরদর্শী পদক্ষেপের দরুণ আমরা এখন ৩য় ও আরো ভয়াবহ সংক্রমণের মুখে এসে পড়েছি।
স্টেট ওয়াচ: করোনার মধ্যে রোগীদের চিকিৎসা দেয়া যেহেতু ঝুঁকিপূর্ণ, পরিবারকে কীভাবে সামলেছেন?
মোঃ রমজান সরকার সাজ্জাদ: চিকিৎসকগণ এবং চিকিৎসা সহযোগী কর্মকর্তা কর্মচারী সকলেই সরাসরি রোগীদের ডিল করার বাস্তবতায় কেউই স্বস্তিতে ছিলেন না বা এখনো নেই। এই পরিস্থিতিতে যার যার পরিবার নিয়ে সবাই অবর্ণনীয় দুর্ভাবনার মধ্য দিয়ে গিয়েছেন ও যাচ্ছেন। প্রায় সবাইকেই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সময় হোম আইসোলেশনের শিকার হতে হয়েছে এসময়।
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ