নাইজেরিয়ায় শিক্ষার্থী অপহরণের ঘটনা নাটকীয়ভাবে বেড়ে গেছে। চরম বিশৃঙ্খল নাইজেরিয়ায় ফের কলেজ থেকে শিক্ষার্থীদের অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। একইসঙ্গে অপহরণ করা হয়েছে ৫ জন শিক্ষককেও। এসময় সশস্ত্র হামলাকারীদের হাতে এক পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হন।
বৃহস্পতিবার (১৭ জুন) দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় কেব্বি প্রদেশে এই ঘটনা ঘটে।
এদিকে অপহৃত শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেশিরভাগই মেয়ে। ফলে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন অভিভাবকরা। নিরাপত্তার কারণে মেয়েকে স্কুলে না পাঠিয়ে ভাবছেন তাদের বিয়ে দিয়ে দেওয়ার কথা।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার কেব্বি প্রদেশের বিরনিন ইয়াউরি শহরের ফেডারেল গভর্নমেন্ট কলেজে এই হামলার ঘটনা ঘটে। হামলার পর ৫ জন শিক্ষকসহ অজ্ঞাত সংখ্যক শিক্ষার্থীকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়। আফ্রিকার এই দেশটিতে একমাসেরও কম সময়ের মধ্যে কোনো স্কুলে বা কলেজে হামলা ও শিক্ষার্থীদের অপহরণের এটি তৃতীয় ঘটনা।
নাইজেরীয় কর্তৃপক্ষের দাবি, মুক্তিপণ আদায়ের জন্য সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো এ ধরনের হামলা ও অপহরণের ঘটনা ঘটিয়ে থাকে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবর অনুসারে, গত তিন সপ্তাহের মধ্যে এটি উত্তরপশ্চিমাঞ্চলীয় নাইজেরিয়ায় তৃতীয় গণঅপহরণের ঘটনা। দস্যুরা মুক্তিপণের জন্য এসব ঘটনা ঘটিয়েছে বলে দাবি স্থানীয় কর্তৃপক্ষের।
জানা যায়, অপহৃত শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেশিরভাগই মেয়ে। তাদের সন্ধানে আশপাশের জঙ্গলে তল্লাশি চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
উসমান আলিয়ু নামে এক স্কুলশিক্ষক জানান, বন্দুকধারীরা কমপক্ষে ৮০ শিক্ষার্থীকে অপহরণ করেছে। যার মধ্যে বেশিরভাগই মেয়ে। তারা এক পুলিশ সদস্যকে হত্যা করে স্কুলের গেট ভেঙে সোজা ক্লাসরুমে ঢুকে যায়।
স্থানীয় এক বাসিন্দা ঘটনার কিছুক্ষণ পর স্কুলে গিয়ে দেখেন লোকজন আতঙ্কিত। তারা সন্তানদের খুঁজে বেড়াচ্ছে, ছাত্র-শিক্ষকরা কান্নাকাটি করছে। তিনি বলেন, “আমার ভাই আমাকে জানিয়েছেন, তার দুই সন্তানকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা জানিনা তারা অপহৃতদের মধ্যে আছে কি না।”
কেব্বি প্রদেশের পুলিশের মুখপাত্র নাফিউ আবু বকর আল জাজিরাকে জানিয়েছেন, কলেজে হামলার পর সন্ত্রাসীদের সঙ্গে গুলি বিনিময়ের সময় এক পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। এছাড়া গুলিতে আহত এক শিক্ষার্থীকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার কতোজন শিক্ষার্থীকে অপহরণ করা হয়েছে, সেটা নির্ধারণে আমরা কাজ করছি। তবে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পাঁচজন শিক্ষককেও অপহরণ করেছে দুর্বৃত্তরা।’
অপহৃত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের খোঁজে পার্শ্ববর্তী জঙ্গলে তল্লাশি অভিযান চালানো হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
নাইজেরিয়ায় গত ডিসেম্বর থেকে এ পর্যন্ত একাধিক ঘটনায় আট শতাধিক শিক্ষার্থীকে অপহরণ করেছে দুষ্কৃতরা। এদের মধ্যে কিছু সংখ্যক মুক্তি পেলেও বাকিরা এখনো নিখোঁজ।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নাজেরিয়ায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের অপহরণের ঘটনা বেড়েই চলছে। এর ফলে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন অভিভাবকরা। নিরাপত্তার কারণে মেয়েকে স্কুলে না পাঠিয়ে ভাবছেন তাদের বিয়ে দিয়ে দেওয়ার কথা। সম্প্রতি বিবিসির খবরে এমনই তথ্য উঠে এসেছে।
বলা হচ্ছে, গত বছরের ডিসেম্বরের পর ৮০০ জনেরও বেশি ছাত্রীকে অপহরণ করা হয়েছে। বাবা-মায়েরা সন্তানের নিরাপত্তার কথা ভেবে এখন ছাত্রীদের শিক্ষাদান বন্ধ করে বিয়ে দেয়ার প্রস্তুতিতে বেশি মনোযোগী।
গত কয়েক বছর ধরে নাইজেরিয়ায় স্কুল শিক্ষার্থীদের অপহরণের বিষয়টি উদ্বেজনক হারে বেড়েছে। এর আগেও একাধিকবার দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এমন ঘটনা ঘটেছে। সাধারণত ছাত্র/ছাত্রীদের অপহরণ করে বড়সড় মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারীরা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২০০৫
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ