কুষ্টিয়ার খোকসার রতনপুরে পুকুরে মাছ ধরার অভিযোগে জসিম উদ্দিন (৩০) নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আয়ুব আলী নামে স্থানীয় এক ইউপি চেয়ারম্যান ও তার ছেলেদের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উঠেছে। জসিম উদ্দিন একই গ্রামের রওশন আলীর ছেলে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, রতনপুর গ্রামের মাঠে বেশ কয়েক বিঘা জমিতে চেয়ারম্যান আইয়ুব আলীর মাছ চাষের পুকুর রয়েছে। গতকাল রাতের কোনো এক সময় জসীম ওই পুকুরে মাছ ধরেছেন—এমন খবর শোনার পর চেয়ারম্যান তার লোকজন দিয়ে তাকে নিজের বাড়িতে ধরে আনান। এ সময় তাকে পিটিয়ে জখম করা হয়। স্থানীয় লোকজন রাতেই তাকে খোকসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ সকাল ৯টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
খোকসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক কামরুজ্জামান সোহেল বলেন, জসীম নামে একজন রাতে ভর্তি হন। তার মাথা, বুক ও পায়ে মারাত্মক জখম ছিল। ওই যুবকের মাথায় গুরুতর জখম থাকায় তার মৃত্যু হয়েছে।
খোকসা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈয়দ আশিকুর রহমান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, খোকসার রতনপুরে এক যুবককে পিটিয়ে আহত করার পর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক যুবকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। কী কারণে হত্যাকাণ্ড তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে।
চেয়ারম্যানের স্ত্রী জাহিদা বেগম ও চেয়ারম্যানের ভাতিজা সালাউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করেছে উল্লেখ করে তিনি আরও জানিয়েছেন, অভিযুক্তদের মধ্যে গ্রেপ্তারকৃত সালাউদ্দিন নিহত জসিমকে মারধরের সঙ্গে সরাসরি জড়িত।
নিহত জসিমের বাবা রওশন গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘চেয়ারম্যানের লোকজন জসিমকে মধ্যরাত ১২টার দিকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। তাদের মধ্যে চেয়ারম্যানের ভাতিজা সালাউদ্দিন ছিলেন। জসিমের বিরুদ্ধে মাছ চুরির অভিযোগ এনে তাকে অনেক মারধর করা হয়েছে। তিনি আরও জানিয়েছেন, তিনি চেয়ারম্যানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করে তাকে জানান যে জসিম মাছ চুরি করেনি। কিন্তু, চেয়ারম্যান তাকে উল্টো গালাগাল করেছেন।
বিশেষজ্ঞরা জানান, স্থানীয় চেয়ারম্যানদের বিরুদ্ধে প্রায়ই বিভিন্ন রকমের অভিযোগ আসে। তারা জনপ্রতিনিধি হয়েও বিভিন্ন দুর্নীতি, সরকারি অনুদান চুরি, জোর করে জমি দখলসহ আরো বিভিন্ন অপকর্মের সাথে জড়িয়ে পড়েন যা অত্যন্ত গর্হিত কাজ। জনগণের পাশে থাকার জন্য নির্বাচিত হলেও তারা আদতে নিজেদের ফায়দা লুটার জন্য নির্বাচনে দাঁড়ান বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলছেন, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে নিজেরা এতোটাই প্রভাবশালী ও ক্ষমতাশালী বনে যান তারা মনে করেন তাদের শাসনেই চলতে হবে ইউনিয়নকে। ইউপি চেয়ারম্যানদের বিরুদ্ধে প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন অভিযোগ আসে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ক্ষমতা বলে তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ থেকে পার পেয়ে যান বলে তারা স্থানীয় পর্যায়ে নানা অপকর্মে উৎসাহী হয়ে ওঠেন। তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া চললে এমনটি হবার ঘটনা অনেকটাই নেমে আসবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এবিষয়ে সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনের যথাযথ ভূমিকা পালনের দাবি জানান তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/এফএ/১৫৩০
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ