মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের অবকাঠামোগত পরিকল্পনাতে বৈদ্যুতিক যানবাহন এবং নবায়নযোগ্য শক্তির সম্প্রসারণের প্রতিশ্রুতির সাথে সাথে পরিবেশবান্ধব নীতিমালা আরো বেশি সম্ভাবনা লাভ করেছে এবং আবহাওয়া পরিবর্তন অগ্রাধিকার হিসাবে পরিগণিত হতে যাচ্ছে। এর ফলে দেশটির খনিজ সরবরাহের উৎসগুলি আবারও আলোচনায় উঠে এসেছে।
এদিকে ইউএস জিওলোজিক্যাল সার্ভের হিসাবে, ২০১৯ সালে এমন বিরল খনিজের ৮০ শতাংশ আমদানি করতে হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রকে। আর গত বছর ইউরোপীয় কমিশন জানিয়েছিল যে, বছরে তাদের এ খনিজ যতটা প্রয়োজন হয়, তার ৯৮ শতাংশ আসে চীন থেকে। ভবিষ্যতের পরিবেশবান্ধব জ্বালানির পথে এই দুষ্প্রাপ্য খনিজগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। আর এক্ষেত্রে চীনের আধিপত্য পশ্চিমাদের জন্য নিশ্চিত মাথাব্যথার কারণে হতে পারে।
গাড়ি ও টারবাইন
নিওডিমিয়াম, প্রাসিওডিমিয়াম ও ডিসপ্রোসিয়ামের মতো বিরল খনিজগুলো ভবিষ্যতের উইন্ড টারবাইন ও ইলেক্ট্রিক গাড়ি তৈরিতে ব্যবহৃত ম্যাগনেটের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া স্মার্টফোন, কম্পিউটার স্ক্রিন ও টেলিস্কোপ লেন্সের মতো পণ্যতে এসব খনিজ এখনও ব্যবহৃত হয়। আবার গ্লাস পলিশিং ও অপটিক্যাল লেন্সেও এসবের ব্যবহার রয়েছে।
এ সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট এ ধরনের খনিজের সরবরাহ ব্যবস্থায় উন্নতির জন্য একটি আইন পাস করেছে। ফেব্রুয়ারিতে দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এ সংক্রান্ত একটি নির্বাহী আদেশ জারি করেছিলেন।
দুষ্প্রাপ্য এসব খনিজসহ লিথিয়ামের উৎপাদন আরও বাড়াতে চায় ওয়াশিংটন। এ লক্ষ্যে ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগীদের ওপর নির্ভরতা কমাতে মিত্র দেশগুলো ও অংশীদারদের সাথে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্র।
উৎপাদন বাড়োনোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় আশা হতে পারে ক্যালিফোর্নিয়ার মাউন্টেন পাস খনি। বিশ্ববাজারে একসময় এ খনির দাপট থাকলেও তাতে ভাগ বসিয়েছে চীন। এ খাতে চীনা সরকার বড় ভর্তুকি দিয়ে আসছে।
২০১৭ সালে এমপি ম্যাটেরিয়াল এ খনি থেকে নুতন করে উৎপাদন শুরু করে। প্রতিষ্ঠানটি এটিকে যুক্তরাষ্ট্রের শিল্পের জন্য পুনর্জন্ম বলে আখ্যায়িত করতে চায়। কোম্পানিটির লক্ষ্য হলো প্রত্যেকটি খনি থেকে পাওয়া প্রত্যেকটি দুষ্প্রাপ্য খনিজ আলাদা করে ফেলা। তারপর ২০২৫ সালের মধ্যে এই শিল্পে ব্যবহৃত ম্যাগনেট উৎপাদন করা। বাজারে নেতৃত্ব দেওয়া চীনা ফার্ম এখন এভাবেই কাজ করছে।
ইউরোপের জন্য জটিলতা
উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে চলতি মাসে একটি কর্মপরিকল্পনা পেশ করা হবে ইউরোপীয় কমিশনের সামনে। তবে ব্যাটারি ও ইলেক্ট্রিক কার বিশেষজ্ঞ ডেভিড মেরিম্যান বলছেন, লক্ষ্য অর্জনে ইউরোপকে আসলে বেশ জটিল পথের ভেতর দিয়ে যেতে হবে। তিনি বলছেন, ইউরোপ আসলে কাঁচামালের জন্য মূলত আমদানির ওপরই নির্ভর করতে চায়। তারা মূলত প্রোসেসিং বা পুনঃউৎপাদনের দিকে ঝুঁকতে চায়।
দুষ্প্রাপ্য খনিজের বাজারে চীনা আধিপত্য আরও কিছুদিন চলবে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে ইউরোপ যদি পুনঃউৎপাদনের দিকে পুরোপুরি চলে যেতে পারে তবে ২০৩০ সালের মধ্যে সেখানে প্রয়োজনীয় দুষ্প্রাপ্য খনিজগুলোর ২০ থেকে ৩০ শতাংশ তারা নিজেরাই যোগান দিতে পারবে, যেটা এখন আক্ষরিক অর্থেই শূন্য।
মূলত কম্পিউটিং ও অটোমোটিভ শিল্পে ব্যবহৃত সেমিকন্ডাক্টরের স্বল্পতার পরই এসবের উৎপাদন বাড়ানোর বিষয়টি নিয়ে চিন্তা শুরু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। এখন এর বেশিরভাগই উৎপাদন হয় এশিয়াতে।
এমপি ম্যাটেরিয়ালসের একজন মুখপাত্র বলছেন, বৈশ্বিক উৎপাদকদের তাদের কাঁচামালের যোগান নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। বেশ কিছু ইউরোপীয় অটোমোটিভ ও উইন্ড পাওয়ার ফার্ম ইতোমধ্যে এ ভাবনা শুরু করেছে।
তবে, বিশ্বের ৮০ শতাংশ লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি উপাদান পরিশোধন, যা বিশ্বের ৭৭ শতাংশ ব্যাটারি সেল ক্ষমতা এবং বিশ্বব্যাপী ব্যাটারি উপাদান উৎপাদনের ৬০ শতাংশ বর্তমানে চীনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে দুষ্প্রাপ্য খনিজের বাজার এবং বাণিজ্য চুক্তিতে সমর্থন বাড়ানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রচুর সুযোগ রয়েছে।
এসডব্লিউ/এমএন/এফএ//২০১৩
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ