করোনা মহামারির কারণে ২০২০ সাল তরুণদের জীবনে মহাসংকট বয়ে নিয়ে এসেছিল। ২০২১ সালে এসেও করোনার দ্বিতীয় ঢেউ যেন আরো ভয়াবহ। তথাপি বেকার তরুণ জনগোষ্ঠী একের পর এক সংকটের সম্মুখীন। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার তথ্যানুসারে, মহামারিতে সবচেয়ে বেশি কাজ গেছে তরুণ ও নারীদের। বেকারত্বের হার সবচেয়ে বেশি ২৫ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার তথ্যানুসারে, ২০২০ সালে সারা বিশ্বে তরুণদের বেকারত্বের হার দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক ৬ শতাংশ। তবে ২৫-এর বেশি বয়সী মানুষের বেকারত্বের হার দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ২ শতাংশ।
মহামারিতে মধ্য আয়ের দেশগুলোর তরুণেরা সবচেয়ে বেশি বেকার হয়েছেন। যেমন আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকা ও পেরু। এ দেশগুলোর অর্থনীতি পর্যটনের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। আর এ পর্যটন খাতে সবচেয়ে বেশি কর্মসংস্থান হয় তরুণদের। স্বাভাবিকভাবে তাদের শরীরেই ধাক্কাটা বেশি লেগেছে।
এ ছাড়া উন্নত দেশগুলোর মতো সক্ষমতা তাদের নেই। ফলে দীর্ঘমেয়াদি লকডাউন দিয়ে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও কর্মীদের জন্য বড় অঙ্কের প্রণোদনা ঘোষণা করাও তাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি।
আইএলওর তথ্যে দেখা যায়, যেসব দেশে প্রণোদনা বা সরকারি সহায়তা কম দেওয়া হয়েছে, তারাই সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে।
তার মানে অবশ্য এই নয় যে উন্নত দেশের তরুণদের গায়ে আঁচ লাগেনি। ইউরোপের তরুণেরাও আক্রান্ত হচ্ছেন। মহামারির শুরুতে স্পেন ও ইতালি ইউরোজোন সংকট কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছিল। স্পেনের পুনরুদ্ধার কার্যক্রম উল্টো পথে হাঁটতে শুরু করেছে।
তবে তরুণদের তুলনায় তরুণীদের জীবনে কোভিড-১৯-এর বেশি প্রভাব পড়েছে। কাজ তাদেরই বেশি গেছে। অংশত, পর্যটন খাতসহ যেসব খাত মহামারিতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে, সেসব খাতে নারীদের অংশগ্রহণ বেশি হওয়া এর একটি কারণ।
আইএলওর হিসাব অনুসারে, সারা বিশ্বের পর্যটন, হোটেল ও ক্যাটারিংয়ের ৫৫ শতাংশ কর্মী নারী। এ ছাড়া লকডাউনের মধ্যে স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শিশুদের দেখাশোনা ও পড়ানোর বাড়তি দায়িত্বও নারীকে পালন করতে হয়েছে।
আইএলওর তথ্যে দেখা যায়, মধ্য আয়ের দেশগুলোতে পুরুষের বেকারত্বের হার যেখানে ২৩ দশমিক ৭ শতাংশ, সেখানে নারীদের ক্ষেত্রে তা ২৯ শতাংশ।
এর আগে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) ‘ওয়ার্ল্ড আনএমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সোস্যাল আইটলুক : ট্রেন্ড ২০২১’ শীর্ষক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, কোভিড-১৯ মহামারির কারণে আগামী বছরের (২০২২ সাল) শেষ নাগাদ বিশ্বে কর্মসংস্থানহীন মানুষের সংখ্যা দাঁড়াবে সাড়ে ২০ কোটি। ২০১৯ সালে যা ছিল ১৮ কোটি ৭০ লাখ। করোনার কারণে এই সময় কর্মহীন মানুষ বেড়েছে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ। এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোয় চাকরি হারাতে যাচ্ছে সাড়ে ১২ কোটি মানুষ।
এতে বলা হয়েছে, বর্তমানে বিশ্বের পূর্ণ বা খণ্ডকালীন মোট কর্মশক্তির প্রতি পাঁচজনের মধ্যে চারজনের পেশা কোনো না কোনোভাবে কোভিড-১৯ এর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
আইএলও বলেছে, বিভিন্ন আয়ের মানুষজন এর ফলে ক্ষতির শিকার হবে। কিন্তু সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণি। ২০০৮-২০০৯ সালের বিশ্ব মন্দার সময় যত মানুষ চাকরি হারিয়েছেন, এই হার তার চেয়েও বেশি।
আইএলওর তথ্য অনুযায়ী, আবাসন ও খাদ্যের পাশাপাশি নির্মাণ, খুচরা বিক্রি, ব্যবসা এবং প্রশাসনিক খাতগুলো বিশেষ ঝুঁকিতে রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আমেরিকার দেশগুলোয় চাকরি হারাবে দুই কোটি ৪০ লাখ কর্মী, ইউরোপ ও মধ্য এশিয়ায় ২ কোটি (ইউরোপে এক কোটি ২০ লাখ), আরব দেশগুলোয় প্রায় ৫০ লাখ ও আফ্রিকায় এক কোটি ৯০ লাখ কর্মী।
আইএলও বলেছে, ২০০৮ সালে বৈশ্বিক মন্দার সময় যেভাবে বিশ্বব্যাপী সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, তেমনটা করা হলে সম্ভাব্য বেকারত্বের হার অনেক কম হতে পারে। সংস্থাটি বৈশ্বিক এ দুর্দশা থেকে রক্ষায় জরুরি, বৃহৎ ও সমন্বিত উদ্যোগের তাগিদ দিয়েছে। এর পাশাপাশি টিকা, আর্থিক প্রণোদনা এবং আয় ও চাকরির ক্ষেত্রে সহযোগিতা দেওয়ার কথাও বলেছে। এসব উদ্যোগের মধ্যে আছে সামাজিক সুরক্ষা, স্বল্পমেয়াদি কাজের পরিধির প্রসার, ছোট ও মাঝারি আকারের শিল্পের শুল্ক হ্রাস।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২২১৪
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ