দক্ষিণ-পূর্ব ফ্রান্সে সফরে যাওয়া দেশটির প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁর গালে কষে চড় মারা ছিল রাজনৈতিক অসন্তুষ্টি। আজ বৃহস্পতিবার (১০ জুন) জিজ্ঞাসাবাদে এই তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা। একইসাথে এটা পূর্বপরিকল্পিত ছিল না বলেও জানা গেছে। খবর দ্য গার্ডিয়ান
ড্যামিয়েন ট্যারেল (২৮) নামের ওই যুবক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন যে, তিনি সরকারবিরোধী বিক্ষোভ আন্দোলনের ঘনিষ্ঠ ছিলেন এবং ম্যাক্রোঁ প্রেসিডেন্ট হওয়ায় তাকে নাড়া দিয়েছিল। তাই তিনি প্রেসিডেন্টের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়েই কোনো রকম চিন্তাভাবনা না করেই চড় মেরেছেন বলে স্বীকার করেন।
গার্ডিয়ান জানায়, প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাঁক্রোর গালে কষিয়ে চড় মারা সেই যুবক ইউরোপের ঐতিহ্যবাহী মার্শাল আর্টের প্রশিক্ষণ নিতেন। ঘটনার পর ওই যুবককে আটক করেছে নিরাপত্তাকর্মীরা। পাশাপাশি তার এক সহযোগীকেও আটক করা হয়েছে।
আটক যুবকের নাম ড্যামিয়েন ট্যারেল (২৮)। দক্ষিণ-পূর্ব সেন্ট-ভ্যালিয়ের শহরে বসবাস করেন তিনি। এই শহরে ট্যারেলের পরিচিতরা তাকে ঝামেলা সৃষ্টিকারী নন বলে বর্ণনা করেছেন।
গার্ডিয়ান জানিয়েছে, আটক যুবক ট্যারেল দেশটিতে একটি ক্লাব পরিচালনা করতেন। এই ক্লাবের সদস্যরা মধ্যযুগীয় তলোয়ার যুদ্ধ ও মার্শাল আর্টে উৎসাহী। তবে ওই যুবকের বিরুদ্ধে অতীতে কোনো অপরাধের প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
সরকারি কর্মকর্তাকে হেনস্থার অভিযোগে ট্যারেলের বিরুদ্ধে তদন্ত চলমান রয়েছে বলে স্থানীয় একজন প্রসিকিউটর জানিয়েছেন।
সূত্র বলছে, ট্যারেল এবং তার এক সহযোগী এখনো পুলিশি জিম্মায় আছেন। ফ্রান্সের আইনে সরকারি কর্মকর্তাকে হেনস্থার দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ড এবং ৪৫ হাজার ইউরো জরিমানার বিধান রয়েছে।
গত ৮ জুন দক্ষিণ-পূর্ব ফ্রান্সের ভ্যালেন্স শহরের কাছেই একটি রাস্তায় হাঁটছিলেন প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ। তাকে দেখার জন্য রাস্তার ধারে ব্যারিয়ারের ওপর দিকে দাঁড়িয়েছিলেন অনেকেই। হাঁটতে হাঁটতে হালকা মেজাজে দু’চারটে কথাও বলছিলেন ম্যাক্রোঁ। সেইসময় এক ব্যক্তিকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আরও এক যুবকের দিকে করমর্দনের উদ্দেশ্যে হাত বাড়িয়ে দেন তিনি। কিন্তু সকলকে অবাক করে দিয়ে ম্যাক্রোঁর গালে সপাটে চড় বসিয়ে দেয় ওই ব্যক্তি। পাশাপাশি, ‘ম্যাক্রোঁবাদ নিপাত যাক’ বলেও চিৎকার করে ওঠে হামলাকারী।
আকস্মিকতা কাটিয়ে মুহূর্তের মধ্যে প্রেসিডেন্টকে সরিয়ে নিয়ে যান তার নিরাপত্তারক্ষীরা। সঙ্গে সঙ্গে গ্রেপ্তার করা হয় অভিযুক্ত যুবক-সহ দু’জনকে। এই ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে নেটদুনিয়ায়।
এই ঘটনায় তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে ফ্রান্সে। নিন্দায় সরব হয়েছেন শাসকদল থেকে শুরু করে বিরোধী নেতারা। হামলার ঘটনার কিছুক্ষণের মধ্যেই ফ্রান্সের জাতীয় সংসদে বিবৃতি দেন প্রধানমন্তী জিন ক্যাসটেক্স।
তিনি বলেছেন, “কোনও ক্ষেত্রেই হিংসা বা হামলার ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না।”
ফরাসি প্রেসিডেন্টের সমর্থনে বক্তব্য পেশ করেছেন অতি দক্ষিণপন্থী নেতা ম্যারিন লি পেন। তার কথায়, “গণতান্ত্রিক আলোচনা অনেক সময় তিক্ত হয়ে ওঠে। তবে হামলার ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না।”
জনসম্মুখে চড় খাওয়ার পর এক প্রতিক্রিয়ায় ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ জানিয়েছেন, তিনি নিজের সুরক্ষা নিয়ে ভয় পাচ্ছেন না। আঘাতের পরেও জনসাধারণের সাথে হাত মেলানো অব্যাহত রেখেছিলেন ম্যাক্রোঁ। তিনি এগিয়ে যাবেনই এবং কিছু তাকে থামাতে পারবে না বলেও উল্লেখ করেছেন ফ্রেঞ্চ প্রেসিডেন্ট।
করোনাভাইরাস মহামারীর দাপটে আতঙ্কিত গোটা বিশ্ব। নানা বিধিনিষেধে পালটে গিয়েছে পরিচিত জীবন। ফ্রান্সে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে করোনাভাইরাস সংক্রমণ। খানিকটা শিথিল হয়েছে বিধিনিষেধ। এহেন পরিস্থিতিতে জনতার মনোবল বাড়াতে রাস্তায় ভ্রমণে বেরিয়েছিলেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। সেই সময়ই তিনি অনাকাঙ্ক্ষিত এক চড় হজম করলেন!
২০১৬ সালে ফ্রান্সের অর্থমন্ত্রী থাকাকালীন একবার ডিম হামলার শিকার হয়েছিলেন এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। সেই সময় শ্রম আইন সংস্কারের বিরুদ্ধে দেশটির কট্টর-বামপন্থী ট্রেড ইউনিয়নের সদস্যদের ডাকা ধর্মঘট থেকে ম্যাক্রোঁকে লক্ষ্য করে ডিম ছোড়া হয়।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২১২৬
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ