ভারত বায়োটেকের তৈরি করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন কোভ্যাক্সিনের ৪০ লাখ ডোজ কিনতে যাচ্ছে ব্রাজিল। কয়েকটি শর্তের ভিত্তিতে এই ভ্যাকসিন আমদানির বিষয়ে অনুমতি দিয়েছে ব্রাজিলের সরকার।
এর আগে একবার অবশ্য ভারত বায়োটেকের তৈরি কোভ্যাক্সিন কেনা নিয়ে আপত্তি তুলেছিল ব্রাজিল। লাতিন আমেরিকার এই দেশটি সেসময় দাবি করেছিল, টিকা উৎপাদনের সময় নির্দিষ্ট মানদণ্ড হিসেবে পরিচিত গুড ম্যানুফ্যাকচারিং প্র্যাকটিস (জিএমপি) অনুসরণ করেনি ভারত বায়োটেক। সেই কারণে টিকা আমদানি সম্ভব নয়।
পরে সেই শর্ত মেনে টিকা তৈরি করায় আপাতত ৪০ লাখ ডোজ কোভ্যাক্সিন কেনার সিদ্ধান্ত নেয় ব্রাজিল। একইসঙ্গে রাশিয়ার স্পুটনিক-৫ টিকাও কিনছে দেশটি। প্রাথমিক ভাবে এই টিকা হাতে পাওয়ার পর সেগুলো প্রয়োগ করে ফলাফল পর্যবেক্ষণ করা হবে। এরপরই পরিস্থিতি বিবেচনা করে ভারত থেকে আরও টিকা কেনার বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে দেশটি।
এক বিবৃতিতে ব্রাজিল সরকারের স্বাস্থ্য বিষয়ক নজরদারি কমিটি জানিয়েছে, ‘নিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের জন্য ব্রাজিলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ভারত বায়োটেকের তৈরি কোভ্যাক্সিন আমদানি করতে পারবে। প্রাথমিক ভাবে ৪০ লাখ ডোজ টিকা আমদানি করা হবে। সরকারের বিশেষ কমিটির আলোচনায় শুক্রবার এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
এর আগে বছরের দ্বিতীয় ও তৃতীর ভাগে ২ কোটি ডোজ টিকা সরবরাহের বিষয়ে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ব্রাজিল সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয় ভারত বায়োটেক। তারপরই টিকা উৎপাদনের সময় নির্দিষ্ট মানদণ্ড অনুসরণ না করার অভিযোগ তোলে দেশটি।
একইসঙ্গে অচলাবস্থা কাটাতে মান নিশ্চিত করে উৎপাদিত টিকা সরবরাহের দাবি জানানো হয়। দাবি মেনে ভারত বায়োটেক ফের টিকা উৎপাদন করলে তা আমদানির অনুমতি দেয় দেশটি। এর আগেই অবশ্য কোভ্যাক্সিনের জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দেয় ব্রাজিল।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত, মৃত্যু ও সুস্থতার হিসাব রাখা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারস থেকে পাওয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, করোনা মহামারির শুরু থেকে ব্রাজিলে এখন পর্যন্ত মোট এক কোটি ৬৯ লাখ ৭ হাজার ৪২৫ জন ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়া মৃত্যুর সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৪ লাখ ৭২ হাজার।
ভারতের করোনা পরিস্থিতি
ভারতে দুই মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম করোনা শনাক্ত হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়। আজ রোববার এনডিটিভি অনলাইনের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে ১ লাখ ১৪ হাজার ৪৬০ জনের করোনা শনাক্ত হয়। আগের দিন (শুক্রবার) প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার করোনা শনাক্ত হয়।
গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে করোনায় মারা গেছেন ২ হাজার ৬৭৭ জন। আগের দিন (শুক্রবার) মারা যান ৩ হাজার ৩৮০ জন।
সবশেষ এ তথ্য নিয়ে ভারতে করোনায় সংক্রমিত মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৮৮ লাখ ৯ হাজার ৩৩৯। মারা যাওয়া ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৪৬ হাজার ৭৫৯।
ভারতে টানা ১৩ দিন ধরে ১০ শতাংশের নিচে করোনা শনাক্ত হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার ভারতে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৬৪ জন শনাক্ত হন। মারা যান ২ হাজার ৭১৩ জন। গত বুধবার শনাক্ত হন ১ লাখ ৩৪ হাজার ১৫৪ জন। মারা যান ২ হাজার ৮৮৭ জন। গত মঙ্গলবার শনাক্ত হন ১ লাখ ৩২ হাজার ৭৮৮ জন। মারা যান ৩ হাজার ২০৭ জন। গত সোমবার শনাক্ত হন ১ লাখ ২৭ হাজার ৫১০ জন। মারা যান ২ হাজার ৭৯৫ জন। গত রোববার (৩০ মে) ১ লাখ ৫২ হাজার ৭৩৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়। মারা যান ৩ হাজার ১২৮ জন।
গত মার্চের মাঝামাঝিতে ভারতে এক দিনে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ২০ হাজারের কাছাকাছি। তারপর দেশটিতে সংক্রমণ লাফিয়ে বাড়ে। গত মাসে ভারতে এক দিনে সর্বোচ্চ ৪ লাখ ১৪ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হন। ভারতে ২৪ মে দৈনিক করোনায় সংক্রমিত রোগী শনাক্তের সংখ্যা ১৪ এপ্রিলের পর প্রথম দুই লাখের নিচে।
৪ এপ্রিল ভারতে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দুই কোটির মাইলফলক ছাড়ায়। ২৩ মে করোনায় মৃত্যু তিন লাখের মাইলফলক ছাড়ায়।
৩০ এপ্রিল ভারতে প্রথম এক দিনে চার লাখের বেশি মানুষের করোনার সংক্রমণ ধরা পড়ে। তারপর একাধিক দিন দেশটিতে চার লাখের বেশি রোগী শনাক্ত হন। ৭ মে ভারতে প্রথম এক দিনে করোনায় চার হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। তারপর একাধিক দিন দেশটিতে চার হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়।
ভারতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে নতুন সংকট হিসেবে দেখা দিয়েছে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস। দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ বাড়ছে। এ সংক্রমণের জেরে মৃত্যুও হচ্ছে।
বিশ্বের কোনো দেশে এক দিনে সর্বোচ্চসংখ্যক করোনা রোগী শনাক্তের রেকর্ড ভারতের দখলে। ২২ এপ্রিলের আগপর্যন্ত এ রেকর্ড যুক্তরাষ্ট্রের দখলে ছিল। যুক্তরাষ্ট্রে গত জানুয়ারিতে এক দিনে সর্বোচ্চ ২ লাখ ৯৭ হাজার ৪৩০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল।
ওয়ার্ল্ডোমিটারস শুরু থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের করোনাবিষয়ক হালনাগাদ তথ্য দিয়ে আসছে। ওয়ার্ল্ডোমিটারসের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের পরেই রয়েছে ভারত। ভারতের পর রয়েছে ব্রাজিল। আর মৃত্যুর দিক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাজিলের পরই রয়েছে ভারত।
ভারতে সংক্রমণ ‘বিস্ফোরণের’ জন্য করোনার ভারতীয় ধরনকে অনেকাংশে দায়ী করা হয়। করোনার ভারতীয় ধরনগুলোর মধ্যে একটিকে ‘উদ্বেগজনক’ হিসেবে বিবেচনা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
করোনা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতির মুখে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। পাশাপাশি টিকাদান কার্যক্রম জোরদার করা হয়। গত ১ মে থেকে সব প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিককে (১৮ বছরের ঊর্ধ্বে) টিকাদানের কর্মসূচি হাতে নেয় ভারত। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ২৩ কোটির বেশি ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। তবে বিভিন্ন রাজ্য টিকার সংকটের কথা জানাচ্ছে।
এনডিটিভির তালিকা অনুসারে, ভারতে করোনার সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি মহারাষ্ট্রে। তারপর রয়েছে কর্ণাটক, কেরালা, তামিলনাড়ু, অন্ধ্র প্রদেশ, উত্তর প্রদেশ, দিল্লি, পশ্চিমবঙ্গ, ছত্তিশগড়, রাজস্থান, গুজরাট, ওডিশা ও মধ্যপ্রদেশ।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৬১২
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ