ভারতে মন্দিরের ‘নিরাপত্তা’ নিশ্চিতের কারণ দেখিয়ে গোরক্ষনাথ মন্দির লাগোয়া ১২ টি মুসলিম পরিবারকে বাড়ি-ঘর ও সম্পত্তি খালি করার নোটিস পাঠিয়েছে উত্তরপ্রদেশ সরকার। খবর আল জাজিরা
যে মন্দিরটির জন্য জায়গা অধিগ্রহণ করা হচ্ছে সেটির প্রধান পুরোহিত হচ্ছেন উত্তরপ্রদেশ মুখ্যমন্ত্রী ও বিজেপি নেতা যোগী আদিত্যনাথ। এরআগে মন্দিরটির প্রধান পুরোহিত ছিলেন তার বাবা মহন্ত অবৈদ্যনাথ। তিনি ২০১৪ সালে মারা গেলে বাবার স্থলাভিষিক্ত হোন যোগী আদিত্যনাথ। এছাড়া ২০১৭ সাল থেকে যোগী আদিত্যনাথ উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর দায়ীত্ব পালন করে আসছেন। এরআগে তিনি উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুর থেকে একটানা পাঁচবার সংসদ সদস্যও ছিলেন।
আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, মন্দিরে আশপাশের প্রায় ১২টি সংখ্যালঘু মুসলমান পরিবারকে সম্মতিপত্রে সই করতে বলা হয়।
স্বাক্ষরকারীদের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষ তাদের বাড়িঘর খালি করতে বলেছে।
ভারতীয় রেলওয়ে থেকে অবসরপ্রাপ্ত ৭১ বছর বয়সী জাভেদ আখতার জানান, সম্প্রতি তার বাড়িতে আসেন গোরক্ষপুর জেলার কয়েকজন উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মকর্তা ও স্থানীয় পুলিশ। এসময় তাদের বাড়ি ও আশপাশের কিছু জমি পরিদর্শন করেন তারা।
পরদিন পুলিশ তাকে একটি কাগজে স্বাক্ষর দিতে বলে। যেখানে লেখা ছিল স্থানীয় গোরক্ষনাথ মন্দিরের নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের বাড়িটি ছেড়ে দিতে হবে। জায়গাগুলো মন্দিরের জন্য অধিগ্রহণ করা হবে।
শুধু জাভেদ আখতারই নয় সেখানকার কয়েকটি মুসলিম পরিবারের সাথেই ঘটেছে এমন ঘটনা। জাভেদ আখতার আল-জাজিরাকে বলেন এরইমধ্যে কিছু পরিবার পেপারে স্বাক্ষর করে দিয়েছে।
আখতার বলেন, কয়েকটি পরিবারকে তিনি এরই মধ্যে সম্মতিপত্রে সই করতে দেখেছেন।
তিনি বলেন, ‘কর্মকর্তারা আমাদের বলেছেন, সম্মতিপত্রে সই না করলে অন্য উপায়ে তারা আমাদের সই জোগাড় করে নেবেন। তাদের কথায় আমরা চাপ বোধ করি।’
আখতার বলেন, গোরক্ষপুরের স্থানীয় কর্মকর্তারা স্বাক্ষরকারীদের জানান, জমি ও সম্পত্তির জন্য তাদের ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো ক্ষতিপূরণ চাই না। আমরা এখানেই থাকতে চাই। কারণ আমাদের মা-বাবা, দাদা-দাদি এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে এই জায়গায় ছিলেন।’
আখতার বলেন, গোরক্ষপুরে বিজেপির ঘাঁটি শক্ত হলেও হিন্দু ও মুসলমানরা দীর্ঘদির ধরে এই অঞ্চলে শান্তি ও সম্প্রীতির মধ্যে বাস করে আসছে।
এদিকে মুসলমান পরিবারগুলোর কাছ থেকে জোর করে সই নেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছে স্থানীয় প্রশাসন।
গোরক্ষপুরের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বিজয়েন্দ্র পান্ডিয়ান বলেন, ‘এ অভিযোগ শতভাগ মিথ্যা। জমি হস্তান্তর করবে কি করবে না, তা পুরোপুরি স্থানীয়দের ওপর নির্ভর করছে।’
তিনি বলেন, ‘সম্মতি ছাড়া আমরা কারো জমি নিতে পারি না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যেসব নথি পোস্ট করা হয়েছে, তা সবই মিথ্যা। আইটি অ্যাক্টের আওতায় আমরা এফআইআর করতে যাচ্ছি।’
তবে উত্তর প্রদেশ কংগ্রেসের সংখ্যালঘু বিভাগের চেয়ারম্যান শাহনাওয়াজ আলম বলেন, মন্দিরের পাশের বাসিন্দাদের কাছ থেকে স্থানীয় প্রশাসন জোর করে সম্মতিপত্রে সই নিয়েছে, তা নিয়ে খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হয়।’
তিনি বলেন, ‘কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বদলে রাজ্য সরকার উল্টো ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে (এনএসএ) সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকি দিচ্ছে।’
দুই কোটি ২০ লাখ জনসংখ্যার এ রাজ্যের ২০ শতাংশ মুসলিম। উত্তরপ্রদেশে ধর্মীয় সহিংসতার লম্বা ইতিহাস রয়েছে। রোজা পালন করতে বাধা, মাদ্রাসায় মাইকের ব্যবহার বন্ধ করতে চাপ দেওয়া হয়ে থাকে। শান্তির জন্য অনেক মাদ্রাসায় বাধ্য হয়ে মাইকের ব্যবহার বন্ধও করে দিয়েছে৷ তবে হিন্দু সম্প্রদায়ের বেশিরভাগ মানুষ যদিও যোগীর রাজ্যের ধর্মীয় মেরুকরণকে সমর্থন করেছেন৷
রাজনীতিকদের মতে, এমন সুকৌশলে হিন্দুত্ববাদকে সকলের মনে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে যে তাতেই নাকি এমন বিরোধিতা তাদের৷
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২০৩৪
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ