শ্রীলঙ্কার পশ্চিম উপকূলে জ্বালানি তেলসহ রাসায়নিক পণ্য বহনকারী একটি জাহাজ ডুবতে বসেছে। আর এতে পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা ছড়িয়ে পড়েছে।
সিঙ্গাপুরে নিবন্ধিত এক্স-প্রেস পার্ল নামের জাহাজটির আগুন এই সপ্তাহে নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। তার আগে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে জ্বলতে থাকে। এটি ডুবে গেলে এর জ্বালানি ট্যাংক থেকে শত শত টন তেল সাগরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। আর তাতে বিপর্যস্ত হবে আশেপাশের সামুদ্রিক পরিবেশ। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
দেশটির সরকার ও নৌবাহিনী এ ঘটনাকে শ্রীলঙ্কার ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ সামুদ্রিক বিপর্যয় বলে উল্লেখ করেছে।
গত কয়েকদিন ধরেই যৌথভাবে জাহাজের আগুন নেভানো এবং এটি ভেঙে গিয়ে যেন ডুবে না যায় সেজন্য কাজ করে যাচ্ছে শ্রীলঙ্কা ও ভারতের নৌবাহিনী। কিন্তু সাগর উত্তাল থাকায় এবং তীব্র মৌসুমি বায়ুর কারণে উদ্ধার অভিযান বাধাগ্রস্ত হয়েছে। কলম্বো বন্দরের বাইরেই এই ডুবে যাওয়ার পথে রয়েছে।
খবরে বলা হয়, গত ১৫ মে ভারতের গুজরাটের একটি বন্দর থেকে শ্রীলঙ্কার উদ্দেশে ছেড়ে আসে সিঙ্গাপুরে নিবন্ধিত এমভি এক্স-প্রেস পার্ল নামের একটি পণ্যবাহী জাহাজ। ওই সময় জাহাজটিতে ১ হাজার ৪৮৬টি কনটেইনার ছিল। এসব কনটেইনারে ২৫ টন নাইট্রিক অ্যাসিড ছাড়াও নানা ধরনের রাসায়নিক সামগ্রী ও কসমেটিকস রয়েছে।
খবরে বলা হয়, কলম্বো উপকূলে পৌঁছানোর পর জাহাজটিতে আগুন ধরে যায়। ১৩ দিন ধরে আগুন জ্বলার পর গত মঙ্গলবার তা নিয়ন্ত্রণে আনার ঘোষণা দেয় কর্তৃপক্ষ।
এর আগেই উদ্ধার করা হয়েছে জাহাজে থাকা ভারত, চীন, রাশিয়া ও ফিলিপাইনের ২৫ নাবিককে। তবে হঠাৎই ডুবতে শুরু করেছে পণ্যবাহী জাহাজটি।
নেদারল্যান্ডসের উদ্ধারকারী সংস্থা এসএমআইটি জাহাজটির পুড়ে যাওয়া সামগ্রী সরানোর চেষ্টা করছে। তবে ৩১ হাজার ৬০০ টন ওজনের নৌযানটি ডুবতে শুরু করায় সে প্রচেষ্টা স্থগিত করা হয়েছে। জাহাজটিতে এখনো প্রায় ৩০০ টন জ্বালানি তেল অবশিষ্ট রয়েছে।
শ্রীলঙ্কা নৌবাহিনীর মুখপাত্র ক্যাপ্টেন ইন্দিকা সিলভা বলেন, ‘জাহাজটি ডুবে যাচ্ছে। উদ্ধারকারীরা ডোবার আগে জাহাজটিকে গভীর সমুদ্রে পাঠানোর চেষ্টা করছে যাতে সমুদ্র দূষণের ক্ষয়ক্ষতি অপেক্ষাকৃত কম হয়। কিন্তু জাহাজটির পেছনের অংশ ভেঙে গেছে।’
জাহাজটি ডুবতে শুরু করার পর শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে প্রাচীন বিচগুলোর একটি নেগোমবো শহরের কাছে উপকূলে ইতোমধ্যে তেল ও ধ্বংসাবশেষ দেখা যাচ্ছে। দেশটির মৎস্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নেগোমবো এবং আশেপাশের এলাকার প্রাণ রক্ষায় জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। পানাদুরা থেকে নেগোমবো পর্যন্ত মাছ ধরা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
শ্রীলঙ্কার কর্মকর্তাদের বিশ্বাস নাইট্রিক এসিড লিক হওয়া থেকেই জাহাজে আগুন লাগে। গত ১১ মে থেকে জাহাজের কর্মীরা ওই লিকের বিষয়ে জানতেন। জাহাজটির মালিক কোম্পানি এক্স-প্রেস শিপিং নিশ্চিত করেছে যে কর্মীরা লিকের বিষয়ে জানতো। কিন্তু আগুন শুরু হওয়ার আগে কাতার ও ভারত জাহাজটিকে নিজেদের সীমানায় প্রবেশের অনুমতি দেয়নি। পরে শ্রীলঙ্কা এটিকে প্রবেশের অনুমতি দেয়। আর তা নিয়ে দেশটিতে ক্ষোভ দেখা যাচ্ছে।
জাহাজটির ক্যাপ্টেনের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন দেশটির কর্মকর্তারা। ক্যাপ্টেনসহ জাহাজের কর্মীদের গত সপ্তাহে উদ্ধার করা হয়েছে। মঙ্গলবার জাহাজটির ক্যাপ্টেন এবং প্রকৌশলীকে ১৪ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। ক্যাপ্টেন এবং প্রকৌশলীর শ্রীলঙ্কা ত্যাগের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে দেশটির একটি আদালত।
জ্বালানি তেল ও রাসায়নিক পণ্য নিয়ে জাহাজটি ডুবতে শুরু করায় সামুদ্রিক পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কায় পড়েছে শ্রীলঙ্কা। কলম্বো বন্দরের আশপাশে ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
দেশটির নৌবাহিনীর মুখপাত্র ক্যাপ্টেন ইন্দিকা ডি সিলভা বলেন, ‘জাহাজটি রক্ষার চেয়ে উপকূলে জ্বালানি তেল ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে এখন বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। সমুদ্রে তেল ছড়িয়ে পড়লে তা ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনবে। তবে আমরা আগে থেকেই বিভিন্ন ধরনের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিয়ে রেখেছি।’
পরিবেশবিদ ড. অজন্তা পেরেরা বিবিসিকে বলেছেন, জাহাজ ডুবির এই ঘটনা পরিবেশের সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি তৈরি করতে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘বিপজ্জনক সব পণ্য, নাইট্রিক এসিড এবং অন্যান্য সব পণ্য এবং তেল নিয়ে জাহাজটি যদি ডুবে যায় তাহলে এটি সমুদ্রের পুরো তলদেশ মূলত ধ্বংস করে দেবে।’
তিনি বলেন, ‘গভীর সমুদ্রে ডুবিয়ে দেওয়ার আগে জাহাজটি পরীক্ষা করে দেখতে ডুবুরিদের পাঠানো উচিত’।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৪০০
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ