কথায় বলে বিপুল এ পৃথিবীর কতটুকু জানি? তাই হয়তো মহাসাগরের বুকে এতগুলো পর্বত থাকতে পারে তা আমাদের কাছে এতদিন অজানা ছিলো। স্যাটেলাইট মারফত প্রায় ২০ হাজার ডুবন্ত পর্বতের হদিস মিলেছে। গবেষকরা আর্থ অ্যান্ড স্পেস সায়েন্সে রিপোর্টটি প্রকাশ করেছেন। পৃথিবীর পৃষ্ঠের উপরে যেমন পাহাড় থাকে, তেমনি সমুদ্রের তলদেশের উপরেও সি-মাউন্টগুলি দেখা যায়।
পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু পর্বত, মাউনা কেয়া, এই সিমাউন্ট চেইনের অংশ। পানির নিচের পর্বতগুলো প্রায়ই সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যের হট স্পট। প্রায়শই এগুলি আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত থেকে গঠিত হয়। সিমাউন্টগুলি পুষ্টিসমৃদ্ধ পানির উৎস। এই জায়গা জুড়ে নাইট্রেট এবং ফসফেটের মতো উপকারী যৌগগুলি থাকে।
সান দিয়েগোর ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্ক্রিপস ইনস্টিটিউশন অফ ওশানোগ্রাফির একজন ভূ-পদার্থবিদ ডেভিড স্যান্ডওয়েল বলেছেন, তারা “এই পর্বতগুলো সমুদ্রে আলোড়ন সৃষ্টিকারী রডের মতো”।
২৪৬০০টিরও বেশি সিমাউন্ট খুঁজে পাওয়া গেছে। পৃথিবীপৃষ্ঠের মতো সমুদ্রের তলদেশ থেকেও পর্বতগুলো বেড়ে ওঠে। ভিত্তি থেকে শিখর পর্যন্ত পরিমাপ করলে পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু পর্বত হলো ‘মাউনা কেয়া’। এটি হাওয়াইয়ান-সম্রাট সিমাউন্ট চেইনের অংশ।
এই সূত্র মতে, মহাসাগরে পরিচিত পর্বতের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। গবেষকেরা স্যাটেলাইটের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করে মহাসাগরের পূর্বে অজানা প্রায় ২০ হাজার পর্বতের তথ্য ‘আর্থ অ্যান্ড স্পেস সায়েন্স’ বিজ্ঞান সাময়িকীতে প্রকাশ করেছেন।
সায়েন্স নিউজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গবেষক দলটি সমুদ্রের নিচে মোট ১৯ হাজার ৩২৫টি পর্বত আবিষ্কার করে। গবেষকেরা তাঁদের কিছু পর্যবেক্ষণকে ‘সোনার’ প্রযুক্তি দিয়ে শনাক্ত করা পর্বতের মানচিত্রের সঙ্গে তুলনা করেছেন। নতুন আবিষ্কৃত পর্বতগুলোর বেশির ভাগই ছোট আকারের। গবেষকদের অনুমান অনুযায়ী, পর্বতগুলো প্রায় ৭০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ মিটার পর্যন্ত লম্বা।
এই লুকানো পাহাড়গুলি খুঁজে বের করা একটি ব্যয়বহুল, সময় সাপেক্ষ প্রক্রিয়া। এর জন্য একটি জাহাজ প্রয়োজন। ভূ বিজ্ঞানী জুলি গেভরজিয়ান বলেছেন, সমুদ্রের প্রায় ২০ শতাংশ এইভাবে অনুসন্ধান করা হয়েছে। তাও অনেক ফাঁক থেকে গেছে।”
গেভরজিয়ান, স্যান্ডওয়েল এবং তাদের সহকর্মীরা স্যাটেলাইট পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে বিশ্বের মহাসাগরগুলির অনুসন্ধানে নেমেছেন। গবেষকরা সিমাউন্টের মহাকর্ষীয় প্রভাব দ্বারা সৃষ্ট সেন্টিমিটার-স্কেল বাম্পগুলির সন্ধান করেছিলেন।
যেহেতু শিলা পানির চেয়ে ঘন, একটি সিমাউন্টের উপস্থিতি সেই স্থানে পৃথিবীর মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রের সামান্য পরিবর্তন করে। “এই কৌশলটি ব্যবহার করে, দলটি পূর্বে ১৯৩২৫টি অজানা সিমাউন্ট খুঁজে পেয়েছে। নতুন আবিষ্কৃত পানির নিচের পর্বতগুলির বেশিরভাগই ছোট; প্রায় ৭০০ থেকে ২,৫০০ মিটার লম্বা।
ক্যালিফোর্নিয়াতে মন্টেরি বে অ্যাকোয়ারিয়াম রিসার্চ ইনস্টিটিউটের একজন সামুদ্রিক ভূতত্ত্ববিদ ডেভিড ক্লাগ বলেছেন,” পানিতে নেমে অনুসন্ধান নাবিকদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে পারে। দুর্ঘটনারও কারণ হতে পারে।”
২০২১ সালে, ইউএসএস কানেকটিকাট, একটি পারমাণবিক ডুবোজাহাজ, দক্ষিণ চীন সাগরে একটি অজানা সিমাউন্টে ধাক্কা খেয়েছিলো। ওয়াশিংটন রাজ্যের একটি শিপইয়ার্ডে জাহাজটির এখনও মেরামত চলছে।
এসডব্লিউ/এসএস/২০০৫
আপনার মতামত জানানঃ