ইসরায়েলে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন প্রবীণ রাজনীতিবিদ আইস্যাক হেরজোগ। দেশটির পার্লামেন্টে অনুষ্ঠিত ভোটে দেশটির ১১তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। আগামী ৯ জুলাই ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেবেন তিনি।
এদিকে ইসরায়েলের বিরোধী দলগুলো নতুন সরকার গঠনে চুক্তিতে পৌঁছেছে। আর এর মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ১২ বছরের শাসনের অবসান হতে যাচ্ছে। নেতানিয়াহুর স্থলাভিষিক্ত হতে চলেছেন নাফতালি বেনেট। বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে
ইসরায়েলের নতুন প্রেসিডেন্ট আইস্যাক হেরজোগ
বুধবার ইসরাইলের পার্লামেন্ট নেসেটে ভোটে তিনি নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ভোটের লড়াইয়ে দেশটির সাবেক প্রধানশিক্ষিকা মিরিয়াম পেরেৎজকে হারিয়েছেন হেরজোগ (৬০)। নির্বাচিত হওয়ায় বর্তমান প্রেসিডেন্ট রিউভেন রিভলিনের স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন তিনি।
২০১৪ সালে দেশটির পার্লামেন্টের আলঙ্কারিক প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন রিউভেন রিভলিন।
ইসরায়েলের পার্লামেন্টের প্রেসিডেন্ট পদের ক্ষমতার পরিধি খুবই সীমিত। প্রাথমিকভাবে পার্লামেন্টে ভোটাভুটির মাধ্যমে নির্বাচিত হওয়ার পর প্রেসিডেন্ট দেশটির রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে বৈঠক এবং সরকার গঠনের জন্য সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে কাজ করেন। আর দেশটির নির্বাহী কর্তৃত্ব এককভাবে থাকে প্রধানমন্ত্রীর।
তবে প্রেসিডেন্ট অপরাধীদের রাষ্ট্রীয় ক্ষমার ঘোষণা দিতে পারেন; প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু প্রতারণা, ঘুষগ্রহণ এবং বিশ্বাস ভঙ্গের অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি হওয়ায় নতুন প্রেসিডেন্টের এই ক্ষমা ঘোষণার ক্ষমতা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন বেনেট
জোট সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করছে ইসরায়েলের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরোধীরা।
ইসরায়েলের বিরোধী দল ইয়েস আতিদ পার্টির চেয়ারম্যান ইয়ার লাপিড বৃহস্পতিবার ঘোষণা দিয়েছেন যে, আটটি দলের একটি জোট গঠন হয়েছে।
চুক্তি অনুযায়ী, প্রথমে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করবেন ইয়ামিনা পার্টির নাফতালি বেনেট।
এক বিবৃতিতে লাপিড বলেন, জোট গঠনের বিষয়টি প্রেসিডেন্ট রিউভেন রিভলিনকে জানানো হয়েছে। আমি আশা করছি, এই সরকার ইসরায়েলের সব নাগরিকের জন্য কাজ করবে। যারা আমাদের ভোট দিয়েছেন এবং যারা দেননি সবার জন্য কাজ করবে এ সরকার।
‘এ জোট বিরোধীদের সম্মান করবে এবং ইসরাইলের সমাজকে ঐক্যবদ্ধ ও সংযুক্ত করার জন্য যা যা করার দরকার তার সবটাই করবে।’
প্রেসিডেন্টকে দেওয়া নোটে বলা হয়, বেনেটের পর প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেবেন লাপিড। তিনি দায়িত্ব নেবেন ২০২৩ সালের ২৭ আগস্ট থেকে। প্রেসিডেন্ট যত দ্রুত সম্ভব পার্লামেন্টে আস্থা ভোট আয়োজনের নির্দেশনা দিয়েছেন।
জোটের অন্য দলগুলো হচ্ছে- ইয়েস আতিদ। যাদের আসন সংখ্যা ১৭। বেনি গান্টজ নেতৃত্বাধীন ব্লু অ্যান্ড হোয়াইট পার্টি। যাদের আসন সংখ্যা ৮। এর পর এভিগডোর লিবারম্যানের ইসরাইল বেইতেইনু। এ দলের আসন সংখ্যা ৭। মেরেভ মিখাইলের লেবার পার্টির আসন ৭টি, নাফতালি বেনেটের ইয়ামিনা পার্টির আসন ৭টি, গিডেউন সারের নেতৃত্বাধীন নিউ হোপের আসন ৬টি, নিটজান নিতজান হোরোভিটসের নেতৃত্বাধীন মেরেটজের আসন ৬টি এবং মনসুর আব্বাস নেতৃত্বাধীন রাম পার্টির আসন সংখ্যা ৪।
যদি বিরোধী এ জোট ১২০ আসনের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিতে ব্যর্থ হয় তবে গত দুই বছরের মধ্যে পঞ্চমবারের মতো আবারও ভোট আয়োজন করতে হবে দেশটিতে। নেসেটে ৬১ আসন পেলে তবেই সরকার গঠন করতে পারবে বিরোধী এ জোট।
এর আগে গত দুই বছরের মধ্যে চারবার সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ইসরায়েলে। এর মধ্যে কোনোবারই এককভাবে কোনো দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। নেতানিয়াহু ১২ বছর ধরে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে। শেষ পর্যন্ত তার যুগের অবসান ঘটতে চলেছে।
কঠিন প্রতিপক্ষ হতে পারেন নেতানিয়াহু
ইসরায়েলের মুখ হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে পরিচিত বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এক দশকেরও বেশি সময় দেশটির প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বপালনের পর রাজনৈতিকভাবে পার্শ্বচরিত্র হয়ে যাচ্ছেন, কিন্তু বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবেও তিনি কঠিন প্রতিপক্ষ হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আদালতে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা চললেও অভিযোগ অস্বীকার করা নেতানিয়াহু ডানপন্থি, মধ্যপন্থি ও আরব দলগুলোর নড়বড়ে জোটের নতুন শাসকগোষ্ঠীকে চাপে রাখবেন বলেই পর্যবেক্ষক মহলের ধারণা।
ইসরায়েলের নতুন এ রাজনৈতিক জোটের অংশীদারদের মধ্যে নেতানিয়াহুকে ক্ষমতাচ্যুত করার বিষয়ে ঐক্য ছাড়া আর কোনো ক্ষেত্রে কোনো মিল নেই।
৭১ বছর বয়সী কড়া অভিব্যক্তির নেতানিয়াহু এরইমধ্যে এই জোটকে আক্রমণ করে তারা ‘বিপজ্জনক, বামপন্থি সরকার’ গঠন করেছে বলে সমালোচনা করেছেন, জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
রোববার তার সহকর্মী ডানপন্থি নেতা নাফতালি বেনেট তার বিপক্ষে গিয়ে মধ্যপন্থি বিরোধীদলীয় নেতা ইয়ার লাপিডের জোটে যোগ দিলে ক্রোধান্বিত নেতানিয়াহু একে ‘শতাব্দির সবচেয়ে বড় প্রতারণা’ বলে উল্লেখ করেন, কারণ বেনেট ওই জোটে যোগ দেবেন না বলে প্রকাশ্য প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
রাজনৈতিকভাবে বহুধা বিভক্ত ইসরায়েলে, যেখানে অচলাবস্থা নিরসনে বারবার নির্বাচনে যাওয়া সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে সেখানে লাপিড-বেনেট জোটের বিচিত্র গঠনই একে নির্দিষ্টভাবে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে।
এর মানে দাঁড়াচ্ছে, রাজনৈতিকভাবে নেতানিয়াহুর আবার ফিরে আসার সম্ভাবনাকে বাতিল করে দেওয়া যাচ্ছে না।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩০৬
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ