টানা ১২ বছর ধরে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে আসছেন বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এবার তার বিদায়ের আভাস স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকারের যবনিকা টানতে চুক্তির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে দেশটির বিরোধী দলগুলো।
ইসরায়েলের মধ্যপন্থী দল ইয়েস আতিদের নেতা ইয়ার লাপিড জোট সরকার গঠনের লক্ষ্যে উগ্র জাতীয়তাবাদী নেতা নাফতালি বেনেটের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি করতে চলেছেন বলে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। রোববার এই চুক্তির পক্ষে অবস্থান জানিয়েছে বেনেটের দল, যাদের ছয়টি আসন ইসরায়েলে জোট সরকার গঠনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল।
গত দুই বছরে চারটি পার্লামেন্ট নির্বাচন হলেও দেশটিতে কোনো দলই সরকার গঠন করার মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেনি। শেষে বিরোধীদলীয় নেতা ইয়ার লাপিডকে নতুন একটি সরকার গঠনে ২৮ দিনের সময় বেঁধে দেওয়া হয়। আগামী বুধবার ওই সময়সীমা শেষ হবে। কিন্তু গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের ১১ দিনের হামলায় ওই প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত হয়। ওই হামলার জের ধরে লাপিডের জোট শরিক হওয়ার দৌড়ে থাকা আরব ইসলামিস্ট রাম পার্টি আলোচনা থেকে বেরিয়ে যায়।
এখন জোট সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় আসন জোগাড়ে লাপিডের (৫৭) হাতে ছিল আর মাত্র দুই দিন। শেষ সময়ে এসে উগ্র জাতীয়তাবাদী বেনেটের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হচ্ছেন তিনি। সম্ভাব্য এই চুক্তি অনুযায়ী ১২০ আসনের ইসরায়েলি পার্লামেন্টে মাত্র ছয় আসন নিয়েই ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন বেনেট (৪৯)।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, উভয় পক্ষ যে চুক্তিতে সম্মত হয়েছে, সেখানে আগামী দুই বছরের জন্য বেনেট ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করবেন। এরপর মেয়াদের বাকি দুই বছরের জন্য প্রধানমন্ত্রী হবেন লাপিড।
লাপিডের সরকার গঠনের বিষয়টি প্রধানত নির্ভর করছে চরম ডানপন্থী রাজনীতিক নাফতালি বেনেটের ওপর। কিংমেকার বলে পরিচিত এই নেতার দল ইয়ামিনা পার্টির পার্লামেন্টে ছয়টি আসন রয়েছে।
বেনেট রবিবার তার সিদ্ধান্তের কথা জানানোর কথা। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমে বলা হচ্ছে, লাপিডের মধ্যপন্থী ইয়েস আতিদ পার্টির সঙ্গে বেনেটের জোট গঠনে রাজি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। কিন্তু বেনেটকে আগে নিজ দলের নেতাদের রাজি করাতে হবে।
২৩ মার্চের নির্বাচনে কোনও দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় বেনেটের দলটিতে ঐক্য ভঙ্গুর হতে পারে। বিশেষ করে জোট গঠনে লাপিড পার্লামেন্টের আরব সদস্যদের জোটে নিতে চাচ্ছেন, যাদের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি বেনেটের দলের বিপরীত।
গত কয়েক দিন ধরে প্রকাশ্যে কথা বলেননি বেনেট। কিন্তু ইসরায়েলের রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, লাপিড জোট গড়ে সরকার গঠনের পথেই হাঁটবেন। সম্ভাব্য সমঝোতার আশঙ্কায় নেতানিয়াহু রবিবার শেষ চেষ্টায় নেমেছেন। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, টানা ১২ বছর ধরে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করার পর তার কিছু দিন বিরতি নেওয়া প্রয়োজন।
তার নেতৃত্বাধীন জোটের নেতাদের সঙ্গে একটি প্রস্তাবে তিনি পালাক্রমে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের প্রস্তাব দিয়েছেন। নেতানিয়াহুর প্রস্তাব অনুসারে, ডানপন্থী নিউ হরাইজন পার্টির প্রধান গিডিও সার ১৫ মাসের জন্য প্রধানমন্ত্রী হবেন। এরপর দুই বছরের জন্য নেতানিয়াহু এবং পরে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য বেনেট হবেন প্রধানমন্ত্রী।
লিকুড পার্টির সাবেক মন্ত্রী সার এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। টুইটারে তিনি লিখেছেন, নেতানিয়াহুর শাসন অবসানে আমাদের অবস্থান ও প্রতিশ্রুতি বদলায়নি।
এ বিষয়ে বেনেটের কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি। সাবেক এই প্রতিরক্ষামন্ত্রী এর আগেও নেতানিয়াহুকে উৎখাতের পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছেন।
নেতানিয়াহু দুর্নীতির মামলায় বিচারাধীন রয়েছেন। গত মার্চে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে চূড়ান্ত সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে ব্যর্থ হন। এটা ছিল গত দুই বছরে দেশটিতে চতুর্থবারের নির্বাচন যেখানে জোট গঠনে মিত্র পেতে ব্যর্থ হন তিনি।
৭১ বছর বয়সী নেতানিয়াহু ১২ বছর ধরে দেশটির শাসন ক্ষমতায় রয়েছেন এবং একটি প্রজন্ম ধরে তিনি ইসরায়েলি রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করছেন। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি তিনি।
নেতানিয়াহু বেনেটের বিরুদ্ধে ‘জনগণকে ভুল পথে চালিত করা’ এবং ‘শতাব্দীর সবচেয়ে বড় জালিয়াতি’ করার অভিযোগ এনেছেন। এর আগে এক টেলিভিশন ভাষণে ৪৯ বছর বয়সী বেনেট ঘোষণা দিয়ে বলেছিলেন, জোট গঠন করতে তার দল আলোচনায় অংশ নেবে।
প্রস্তাবিত জোট সরকারে ইসরায়েলি রাজনীতির ডান, বাম এবং মধ্যপন্থী-সবারই সন্নিবেশ ঘটবে। এই দলগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক মতৈক্য না থাকলেও তারা নেতানিয়াহুকে ক্ষমতাচ্যুত করার বিষয়ে একমত।
বিবিসি বলছে, এক যুগ ধরে ক্ষমতায় থাকা নেতানিয়াহুর বিরোধীদের মধ্যে রাজনৈতিক মতাদর্শের মিল খুব সামান্য হলেও একটি জায়গায় তারা সবাই মিলেছেন। প্রত্যেকেই নেতানিয়াহুর শাসনের অবসান চাইছেন। শনিবার রাতে নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টি বেনেট ও অন্যান্য দলের নেতাদের ক্ষমতা ভাগাভাগির প্রস্তাব দেয়। তিন দফায় প্রধানমন্ত্রিত্ব ভাগ করে নেওয়ার প্রস্তাব দেয় তারা। কিন্তু সেই প্রস্তাবে আর সাড়া মেলেনি।
৭১ বছর বয়সী নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলায় বিচার চলছে। বিরুদ্ধ জোটে গিয়ে তাকে ক্ষমতা থেকে উৎখাতে রোববার দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে তাদের সমর্থন নেন বেনেট।
এদিকে ক্ষমতা হারানোর আভাস পেয়ে তা ধরে রাখতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এ অবস্থায় প্রস্তাবিত নতুন জোট সরকার ঠেকাতে জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন তিনি। জোট সরকার নিয়ে তিনি সতর্ক করেছেন। নেতানিয়াহু বলেছেন, প্রস্তাবিত এই জোট সরকার ইসরায়েলের নিরাপত্তার জন্য একটি হুমকি হবে। আজ সোমবার বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
ডানপন্থী রাজনীতিকদের উদ্দেশ করে নেতানিয়াহু গতকাল রোববার বলেন, ‘বামপন্থী সরকার গঠন করবেন না। এ ধরনের সরকার ইসরায়েলের নিরাপত্তা ও ভবিষ্যতের জন্য একটি বিপদ।’
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১২৫৮
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ