এবার যুক্তরাজ্যের ফিলিস্তিনের পতাকা হাতে শোক মিছিল করার ঘটনায় শাস্তির মুখোমুখি হতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। এদিকে, পাশাপাশি ইসরায়েলকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার কথা বলেছেন বাংলাদেশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী। আবার জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রধান মিশেল ব্যাচেলেট গাজার ইসরায়েলের হামলাকে যুদ্ধাপরাধ বলে উস্কে দিচ্ছেন আগুন। মিশরের মধ্যস্থতায় ইসরায়েল ও ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের মধ্যে ১১ দিনের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২টা থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। গাজায় হামলা বন্ধের পাশাপাশি আল-আকসা মসজিদ ও শেখ জাররাহ এলাকা থেকে সেনা সরিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় ইসরায়েল। এরপর থেকেই আন্তর্জাতিকভাবে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন ইস্যু নিয়ে বিশ্বনেতাদের অবস্থান বদলাতে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের ভিতরে ইসরায়েল নিয়ে বিরূপ অবস্থান নেয় একটি দল। ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে আয়ারল্যান্ড ইসরায়েলের সরাসরি বিরোধিতা করে।
ফিলিস্তিন পতাকা হাতে নেয়ায় শাস্তির মুখে ব্রিটিশ স্কুলছাত্ররা
সম্প্রতি গাজার স্কুলে ইসরায়েলের বর্বর হামলায় স্কুলশিক্ষার্থীসহ নিরপরাধ শিশুদের নির্বিচারে হত্যার দায়ে যুক্তরাজ্যের স্কুলে ফিলিস্তিনের পতাকা হাতে শোক মিছিল করে সমবেদনা জানানোর ঘটনায় শাস্তির মুখোমুখি হতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।
অনেক শিক্ষার্থীকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ, স্কুল থেকে বের করে দেওয়া এবং পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে না দেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে তারা গণমাধ্যমকে জানিয়েছে। খবর মিডলইস্ট আইয়ের।
স্কুল কর্তৃপক্ষ বলছে, এ ধরনের কার্যকলাপ স্কুলের বিধিমালার পরিপন্থী। তাই এখন থেকে কেউ ফিলিস্তিনের পতাকা বা তাদের পক্ষে লেখা কোনো প্ল্যাকার্ড বহন করলে কঠিন শাস্তির মুখে পড়তে হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে, বার্কিংহ্যাম, লিডস, ম্যানচেস্টার ও রোচডেলেসহ লন্ডনের বিভিন্ন এলাকার স্কুলশিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
ইসরায়েলকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার আহ্বান
ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ইসরায়েল যেসব আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে, তার জন্য দেশটিকে জবাবদিহিতা ও ন্যায়বিচারের আওতায় আনতে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ।
বৃহস্পতিবার ফিলিস্তিন ইস্যু নিয়ে মানবাধিকার কাউন্সিলের বিশেষ এক ভার্চুয়াল সভায় এ আহ্বান জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন।
ইসরায়েলের সব আন্তর্জাতিক আইন বিরোধী কার্যক্রমের ব্যাপারে ন্যায়বিচার নিশ্চিতকল্পে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের আহ্বান জানান ড. মোমেন।
ইসরায়েলের অনৈতিক এবং যুদ্ধভাবাপন্ন মনোভাবের তীব্র নিন্দা জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ইসরাইলের উচিত এরূপ অনৈতিক, বেআইনি উপনিবেশ এবং দখলদারিত্বমূলক কার্যক্রম বন্ধ করা।
তিনি এ ব্যাপারে দুঃখ প্রকাশ করেন এবং এই ইস্যুতে আন্তর্জাতিক মহলের এমন নিষ্ক্রিয় ভূমিকায় অধিষ্ঠিত শক্তিকে আরও উৎসাহী করছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতি আমাদের এই দায়িত্ববোধ অব্যাহতির কোনো কারণ হতে পারে না। তিনি এ ব্যাপারে দায়িত্ববোধ এবং ন্যায়বিচারের গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং কমিশনের অনুসন্ধানের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করেন।
এ ব্যাপারে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রক্রিয়ানির্ভর সহযোগিতামূলক এবং অর্থপূর্ণ কার্যক্রমের ওপর জোর দেন ড. মোমেন।
বিশেষ এই ভার্চুয়াল সভায় ফিলিস্তিন, তুরস্ক, নামিবিয়া, পাকিস্তান, লিবিয়া, তিউনিসিয়া, কুয়েত, সিরিয়া, কাতার, মিশর ও মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা যুক্ত হন।
গাজার ইসরায়েলি হামলা যুদ্ধাপরাধ
জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রধান মিশেল ব্যাচেলেট বলেছেন, গাজায় যে প্রাণঘাতি বোমা হামলা ইসরাইল চালিয়েছে তাতে ১৫৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, তা যুদ্ধাপরাধ গঠন হতে পারে যদি তা অনুপাতহীন হয়।
বৃহস্পতিবার মানবাধিকার পরিষদের বিশেষ অধিবেশনে তিনি এ কথা বলেছেন। ইসলামিক সহযোগিত পরিষদ ও ফিলিস্তিনের পক্ষ থেকে পাকিস্তানের অনুরোধে এ অধিবেশন ডাকা হয়েছে।
উদ্বোধনী ভাষণে ব্যাচেলেট বলেছেন, গাজার যেসব বেসামরিক ভবনে ইসরায়েল হামলা চালিয়েছে সেগুলো সামরিক উদ্দেশে ব্যবহৃত হয়েছিল এমন কোনো প্রমাণ তিনি পাননি।
মানবাধিকার কমিশনের প্রধান বলেন, ‘যদি নির্বিচারে হামলার বিষয়টি জানতে পারা যায়, তাহলে এ ধরনের হামলাকে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা যাবে।’
ইসরায়েলি বিমান হামলায় ২৫৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৬৬ জন শিশু রয়েছে। এ ছাড়া প্রায় ২ হাজার ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন। অপরদিকে ফিলিস্তিনিদের রকেট হামলায় ১২ ইসরায়েলি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে তিনজন বিদেশি শ্রমিক ও দুইজন শিশু রয়েছে।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৩৪০
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ