করোনা ভাইরাসের উৎস নিয়ে দৃশ্যত আবার যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টের ভিত্তিতে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এ বিষয়টি আবার পর্যালোচনা করার নির্দেশ দিয়েছেন। পরে এক বার্তায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বলেন, আমি এখন গোয়েন্দাদেরকে দ্বিগুন চেষ্টা চালিয়ে তথ্য সংগ্রহ এবং তা বিশ্লেষণের অনুরোধ জানাচ্ছি, যার মাধ্যমে একটি সুনির্দিষ্ট উপসংহারে পৌঁছনো যায় এবং এ ব্যাপারে ৯০ দিনের মধ্যে আমাকে প্রতিবেদন দিন।
করোনা ভাইরাসের উৎস কোথায় তা অনুসন্ধানের তাগিদ দিয়েছেন। একই রকম মন্তব্য করেছেন তার শীর্ষ মহামারি বিশেষজ্ঞ ড. অ্যান্থনি ফাউচি। কিন্তু কোভিড-১৯ এর উৎস নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র রাজনীতি করছে বলে অভিযোগ তুলেছে ওয়াশিংটনে অবস্থিত চীনের দূতাবাস। বলা হচ্ছে, এ ইস্যু নিয়ে রাজনীতি করার ফলে তদন্ত বিঘ্নিত হবে।
অন্যদিকে ড. অ্যান্থনি ফাউচির বিরুদ্ধে নৈতিক অবক্ষয়ের অভিযোগ তুলেছে চীনের রাষ্ট্রীয় মিডিয়া গ্লোবাল টাইমস। বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, বুধবার চীনা দূতাবাসের ওয়েবসাইটে একটি বিবৃতি দেয়া হয়েছে। ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘চীন সবসময়েই করোনাভাইরাস সম্পর্কে একটি বিস্তৃত গবেষণাকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত। তবে এখান শঙ্কার ব্যাপার হলো এই যে, রাজনৈতিক কারসাজি ও দোষারোপের খেলা এ রকম একটি স্পর্ষকাতর বিষয়ের তদন্তকাজকে বাধাগ্রস্ত করবে।
চীন মনে করে করোনার রাজনৈতিকীকরণ শুধু এ বিষয়ক তদন্তকেই ক্ষতি করবে না, বরং মহামারিকে প্রতিহত করার যে আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা, তাকেও বাধাগ্রস্ত করবে।
পাশপাশি চীন আরো বলতে চায়, গবেষনাগারে কৃত্রিমভাবে এই ভাইরাসটি তৈরি ও ছড়িয়ে দেওয়ার যে তত্ত্ব প্রচারিত হয়েছে, সেটিরও যথাযথ তদন্ত দরকার; এবং এক্ষেত্রে শুধু চীন নয়, বিশ্বের সব গুরুত্বপূর্ণ ও গোপন গবেষণাগারগুলোকে তদন্তের আওতায় আনা হোক।’
সম্প্রতি করোনার প্রকৃত উৎস সম্পর্কে একটি যথাযথ প্রতিবেদন জমা দিতে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এ কাজে যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুভাবাপন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলের সহযোগিতা গোয়েন্দা সংস্থাগুলো নিতে পারে উল্লেখ করে বার্তায় বাইডেন বলেন, আমরা একটি পরিপূর্ণ, স্বচ্ছ, ও তথ্যপ্রমাণভিত্তিক তদন্ত প্রতিবেদন চাই, যেখানে এই ভাইরাস ও ভাইরাসটির উদ্ভব সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য ও উপাত্ত থাকবে।
এর আগে মঙ্গলবার জেনেভায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মন্ত্রী পর্যায়ের এক বৈঠকে করোনার উৎস নিয়ে নতুন করে আরও নিবিড় এবং ‘স্বচ্ছ’ তদন্ত নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য ও মানবসেবা মন্ত্রী জেভিয়ের বেসেরা।
বাইডেন প্রশাসনের শীর্ষ চিকিৎসা উপদেষ্টা ডা. অ্যান্টনি ফাউসি এর আগে যদিও বলেছিলেন যে তিনি বিশ্বাস করেন, আক্রান্ত কোনো প্রাণীর দেহ থেকেই মানবদেহে সংক্রমিত হয়েছে করোনাভাইরাস; তবে চলতি মাসে নিজের পুরনো অবস্থান থেকে সরে এসে ফাউসি জানান, এই ভাইরাসটির উদ্ভব প্রাকৃতিকভাবেই হয়েছে কি না সে বিষয়ে আর নিশ্চিত নন তিনি।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে প্রথম শনাক্ত হয় প্রাণঘাতী সার্স-কোভ-২ ভাইরাস, যা বিশ্বে সাধারণভাবে পরিচিতি পায় করোনাভাইরাস নামে। শনাক্ত হওয়ার তিন মাসের মধ্যে বিশ্বজুড়ে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ে এই ভাইরাসটি। উহানে প্রথম যে ব্যক্তি এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিলেন, তার মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেছিল, অপরিচিত ধরনের নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন তিনি।
চলতি বছর জানুয়ারি মাসে করোনাভাইরাসের উৎস সম্পর্কে জানতে চীনে গিয়েছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধিদল। তবে, ওই গবেষক দল ভাইরাসটির উদ্ভব সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দিতে ব্যার্থ হয়েছে বলে দাবি যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের। যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী, সম্প্রতি এমন কিছু তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে তাতে ধারণা করা হচ্ছে, চীনের গবেষণাগার থেকেই করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে।
এ নিয়ে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য চলছে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে। চীনে ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির পিপলস ডেইলি সংবাদপত্র গ্রুপের অংশ দ্য গ্লোবাল টাইমস এক্ষেত্রে অনেকটা এগিয়ে আছে। তারা বুধবার শেষের দিকে বলেছে, যদি গবেষণাগার থেকে করোনা ছড়িয়ে পড়ার তত্ত্বের ওপর আরো তদন্ত করতে হয়, তাহলে ফোর্ট ডেট্রিক গবেষণাগারসহ নিজেদের সব প্রতিষ্ঠানে তদন্ত করতে দেয়া উচিত যুক্তরাষ্ট্রের।
নিরপেক্ষ তদন্তের বিষয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন থিংক ট্যাংক আটলান্টিক কাউন্সিলের সিনিয়র ফেলো জেমি মেটজল। তিনি বলেছেন, চীন সুস্পষ্টত এ বিষয়টিকে আন্তর্জাতিকীকরণের চেষ্টা করছে। এর আগে মার্চে চীন-বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি যৌথ রিপোর্ট প্রকাশ হয়। তাতে বলা হয়, গবেষণাগার থেকে সার্স-কোভ-২ ভাইরাস লিক বা ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা খুবই কম। উপরন্তু এই ভাইরাস বাঁদুর থেকে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে থাকার সম্ভাবনা বেশি।
ওদিকে অন্য দেশ করোনা ভাইরাসের উৎস হতে পারে বলে অব্যাহতভাবে ইঙ্গিত করে যাচ্ছে চীন। তারা দাবি করেছে, ফ্রোজেন ফুড বা হিমায়িত খাবারের মাধ্যমেও এই ভাইরাস ছড়িয়ে থাকতে পারে। জেমি মেটজল বলেন, এই করোনা মহামারি চীন থেকেই শুরু হয়েছে। তাই সেখানে একটি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত দরকার। প্রয়োজন হলে সেই তদন্ত প্রসারিত করা যেতে পারে। তার মধ্যে চীনা দূতাবাসের বিবৃতি প্রতিজন মানুষ, যারা এই ভয়াবহ ট্রাজেডিতে মারা গেছেন এবং তাদের পরিবারের জন্য অবমাননার।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৪১৪
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ