মামুন আব্দুল্লাহ
এটি আনুমানিক ২০০০ বছরের ইতিহাস। বিশাল এক আখ্যান। জড়িয়ে রয়েছে মানব সভ্যতার সবচেয়ে বড় ইভেন্টগুলো। পৌত্তলিক ও একেশ্বরবাদীদের দ্বন্দ্ব। ক্ষমতা, রাজনীতি ও হেইট ক্রাইম। এর সাথে সর্বশেষ যোগ হয়েছে ইজরায়েল-ফিলিস্তিন সংকট। এই সংকট শুধু মধ্যপ্রাচ্যের না, বরং সমগ্র পৃথিবীর জন্য একটি অভিশাপ। পুরো একটি ধর্ম গোষ্ঠীর নির্যাতিত হওয়ার ইতিহাস। ২০০০ হাজার বছর ধরে তারা অবিরাম নির্যাতিত হয়েছে। মানব ইতিহাসের সবচেয়ে কালো অধ্যায় ইহুদি হলোকস্টের মাধ্যমে ৬০ লক্ষ ইহুদিকে হত্যা করা হয়। পৃথিবীতে বাসকরা বহু শত জাতির মাঝে কিছু জাতি রয়েছে যারা সত্যিকার অর্থে মেধাবী। সত্যিকার অর্থে তথাকথিত অভিশপ্ত ও আশীর্বাদপ্রাপ্ত। মানব সভ্যতায় তাদের অবদান এতটাই বেশি যে তাদের ছাড়া আধুনিক সভ্যতা কল্পনা করা যাবে না। ইউরোপের দিকে নজর দিলে আমরা দেখব ভাইকিংদের। বর্বর একটি জাতি যাদের মূল পেশা ছিল কৃষিকাজ, অবসরে পার্শ্ববর্তী রাজ্যে হামলা চালিয়ে ভরণপোষণ চালাত। একেশ্বরবাদী খ্রিস্ট ধর্মের সহিংসতার নির্মম শিকার তারা হয়েছিল ঠিকই কিন্তু ইউরোপের ইতিহাসের সবচেয়ে প্রভাবশালী রাজবংশের উত্তরাধিকারী এখন তারাই। এশিয়ায় যেমন রয়েছে কুর্দিশরা, তেমনই ইহুদি জাতি। ইহুদিরাও ভীষণ মেধাবী একটি জাতি। তারা যেখানে গেছে, সেখানেই নিজেদের আধিপত্য বজায় রেখেছে। ইহুদি ও ইসরায়েল জাতির সমস্ত ইতিহাস হয়তো তুলে আনা সম্ভব না, কিন্তু প্রতিটা ইভেন্টের উপরে আলোকপাত করার চেষ্টা করা হবে এই লেখায়।
ইহুদিদের ইতিহাস ৫০০০ হাজার বছরের পুরাতন। গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্টের শুরু হয় খ্রিষ্টপূর্ব ১০০০ অব্দ থেকে, যখন থেকে কিং ডেভিড ইহুদিদের শাসন করেন। তার পুত্র কিং সলোমন ইহুদিদের উপাসনার জন্য জেরুজালেমকে তীর্থস্থান হিসেবে নির্ধারণ করেন, এরপর সেখানেই তিনি ফার্স্ট হলি টেম্পল নির্মাণ করেন। মানব ইতিহাসে সম্ভবত কিং ডেভিডই প্রথম রাজা যিনি রাষ্ট্রযন্ত্র ও ধর্মযন্ত্রকে একই ছকে ফেলেছিলেন। ধর্ম যে রাষ্ট্রের নাগরিক ও কোনো নির্দিষ্ট জাতিগোষ্ঠীকে নিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হতে পারে এবং এই হাতিয়ারকে কাজে লাগানোর প্রক্রিয়া শুরু হয় কিং ডেভিডের ( নবী দাউদ) হাত ধরে। তখনকার সময়ে জেরুজালেমের পার্শ্ববর্তী এলাকা সমূহ ধর্ম ও রাষ্ট্রের এই অপূর্ব মেলবন্ধন দেখেছে। মিশরীয়রা দেখেছে, রোমানরা দেখেছে, পারস্যরা দেখেছে, ব্যাবিলেনিয়রা দেখেছে।
প্রাচীন সম্রাটরা ধর্ম ও রাষ্ট্রের সকল রহস্য জানতেন। ধর্মকে ক্ষমতার কেন্দ্র বানিয়ে রাজ্য শাসন করতে গিয়ে রাজা ও সম্রাটরা নিজেকে দেবতা অথবা ঈশ্বর দাবী করে বসতেন। কিন্তু মানুষ তো পচনশীল, মানুষ তো মরণশীল। একজন রাজা মারা গেলে তার সঙ্গে তার ঈশ্বরত্বও শেষ হয়ে যেত, শেষ হয়ে যেত তার বানানো নিয়মকানুন। আসতেন নতুন রাজা, নতুন ঈশ্বর, নতুন নিয়ম। রাজারা তখন অনুধাবন করেন তাদের আরও শক্তিশালী স্থায়ী কিছুর প্রয়োজন। যার শেষ নেই, যার মৃত্যু নেই, যার দুর্বলতা নেই। যিনি জন্ম-মৃত্যু-রোগ-শোক-মানবীয় আবেগের ঊর্ধ্বে। যাকে কোনকিছু দিয়েই বাঁধা যাবে না। রাজারা বহু ঈশ্বরবাদী ধর্মের পাশে ছুটে চলা একেশ্বরবাদী একটি জীর্ণ-শীর্ণকায় মতবাদকে তুলে আনেন রাজপ্রাসাদে। শুরুটা হয়েছিল ইহুদীবাদ দিয়ে। এরপর প্রাসাদে আসে খ্রিস্টধর্ম ও ইসলাম। খ্রিস্টধর্ম, ইসলাম ধর্ম এবং পৌত্তলিকদের সাথে ইহুদীবাদের যে দ্বন্দ্ব তা মূলত রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব, ক্ষমতার দ্বন্দ্ব, প্রভাব ও প্রতিপত্তির দ্বন্দ্ব। ইতিহাস অন্তত সেকথাই বলে। কিং সলোমনের ছত্রছায়ায় ইহুদিরা জেরুজালেমে বসে অঢেল সম্পত্তি ও ক্ষমতার মালিক হতে থাকে তখন পৌত্তলিকদের চক্ষুশূল হওয়াটা স্বাভাবিক ব্যাপার ছিল। এটি যেমন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইহুদি হলোকস্টকে প্রভাবিত করেছিল তেমন প্রভাবিত করেছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার পেছনেও। হিটলার প্রোপাগান্ডায় যা ব্যবহার করেছিল তা এই প্রমাণই দেয়।
ইহুদি জাতিকে অভিশপ্ত জাতিও বলা হয়। তাদের ধর্মীয়ভাবে অভিশাপ দেওয়া হয়েছে। যতদিন পৃথিবী থাকবে ততদিন তারা নিজেদের জন্য কোন বসতি পাবে না, দেশ পাবে না, রাজ্য পাবে না। তারা নির্যাতিত হতে থাকবে। এর কারণ হিসেবে খ্রিস্টান ও মুসলিম দৃষ্টিকোণ হ’ল ইহুদিরা ধর্মীয় ভাবাবেগ নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে। ধর্মকে বদলেছে, ধর্ম গ্রন্থকে পরিবর্তন করেছে নিজেদের সুবিধা-অসুবিধা অনুযায়ী। ইহুদিরা যীশু খ্রিস্টকে ক্রুশবিদ্ধ করেছে, তারা বারবার ঈশ্বরের অবাধ্য হয়েছে। ঈশ্বরের বিরুদ্ধে তাদের অপরাধ এতটাই গুরুত্বর যে যতদিন ঈশ্বরের তৈরিকৃত পৃথিবী থাকবে ততদিন তারা নির্যাতিত হবে। আমরা যদি ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে দেখি তাহলে তাদের অন্যায় এতটাই বেশি ছিল যে তাদের ধর্মীয়ভাবে অভিশপ্ত করা হয়েছে। কিন্তু ইতিহাসের ব্যাখ্যা তো আর ধর্মীয় অলৌকিকত্ব দ্বারা চলে না, বিশেষত আধুনিক যুগে। কাউকে নিপীড়ন ও হত্যাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা যায় না তা সে যতই অভিশপ্ত হোক না কেন।
একেশ্বরবাদী ধর্মে আদম, শীষ, ইদ্রিস, নূহ, মুসা, ঈসা ও ইসলামের নবী মুহাম্মদ হলেন পয়গাম্বর। ইনারা সকলেই খ্রিষ্টান ও ইসলাম ধর্মের গুরুত্বপূর্ণ নবী ও রসুল। নবী আদমের বংশধারায় গুরুত্বপূর্ণ সন্তান। ইহুদিরা বিশ্বাস করে এখন পর্যন্ত তাদের মসীহ সর্বশেষ পয়গাম্বর পৃথিবীতে আসেন নাই। তারা নবী মুহাম্মদকে অস্বীকার তো করেই, অস্বীকার করে যীশু খ্রিষ্টকেও। ইহুদিদের সাথে আসলে কী ঘটেছে তা পয়গাম্বর মুসার পর থেকে মোটামুটি ভালোভাবে জানা যায়। এর পূর্বে তাদের ধর্মীয় ও সামাজিক অবস্থা কেমন ছিল তার তেমন কোন তথ্য পাওয়া যায় না। কিন্তু ইহুদীবাদের মূল ঘটনাপ্রবাহ শুরু হয় কিং ডেভিড বা রাজা দাউদ এর সময় থেকে। তার বংশধর নবী ইয়াকুব বা জেকবকে ইসরায়েল উপাধি দেওয়া হয়। তাই ইয়াকুবের সন্তানদের বনী ইসরায়েল বা ইসরায়েলের বংশধর বলে ডাকা হয়। ইহুদি জাতি যেখানেই গেছে সেখানেই নিজেদের শক্তিশালী আবাসস্থল নির্মাণ করে ফেলে এবং ধীরে ধীরে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করে। ফলে ধীরেধীরে অন্য জনগোষ্ঠীর লোকেদের মাঝে তাদের জন্য এক প্রকার ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। এই ক্ষোভের কারণ যে ট্রাইবালিজম ছিল তা বলার অপেক্ষা রাখে না, তবে মূল কারণ ছিল আনুমানিক তিনটি। প্রথমত, ইহুদি সেটেলাররা স্থানীয়দের উপরে অত্যাচার শুরু করে থাকতে পারে যার কারণে তাদের সাথে ইহুদিদের একটি তিক্ত সম্পর্ক সৃষ্টি হয়। দ্বিতীয়ত, প্রথম থেকেই ইহুদিরা ছিল বণিক জাতি। স্থানীয়দের সাথে ব্যবসায় তারা দ্রুত উন্নতি করতে থাকলে কিছু স্থানীয়দের চক্ষুশূলে পরিণত হয়। তৃতীয়ত ইহুদিরা অত্যাচারী সেটেলার ও বণিক উভয়ই হতে পারে। বলা হয়ে থাকে, ঈশ্বর ইহুদিদের জন্য পানি ও ভূমি দান করেছিলেন। একারণেই তারা যেখানে গেছে সেখানে নিজেদের বসতবাড়ি গড়ে তুলেছে, নিজস্ব সভ্যতার ভিত পুঁতেছে, সিম্বল এঁকেছে। সিম্বল ইহুদিদের ভীষণ প্রিয় ছিল। দাউদের ষষ্ঠভুজ তারকা বা সিক্স পয়েন্ট স্টার অব ডেভিড ইহুদিরা সর্বত্র ব্যবহার করে। ইহুদিরা সিম্বলের প্রতি যতটা আসক্ত ততটা বুঝি স্যাটানিজমে বিশ্বাসী লোকজনেরও নেই।
ডেভিডের ছেলে সলোমন ইসলামে যিনি পয়গাম্বর সুলাইমান নামে পরিচিত তিনি ফার্স্ট হলি টেম্পল বা শলোমন মন্দির নির্মাণ করেন জেরুজালেমে। ঐ মন্দির পরবর্তীতে ইহুদিদের উপাসনার প্রধান কেন্দ্র হয়ে ওঠে। সলোমন একজন রাজা ছিলেন। তিনি রাজ্যকে এক বিশ্বাসে দাঁড় করেছেন পিতার থেকে প্রাপ্ত ধর্ম বিশ্বাসে যা মূলত একেশ্বরবাদকে প্রচার করত। পৃথিবীর কোন রাজ্য, সাম্রাজ্য, একক রাষ্ট্রীয় প্রভাব, বিশাল সীমান্ত চিরকাল টিকে থাকে না তা যতই ঈশ্বরের আশীর্বাদ প্রাপ্ত হোক না কেন। মহান ঈশ্বরের প্রিয় সন্তানদের রাজ্যও চিরকাল একই রকম ছিল না। খ্রিস্টপূর্ব ৯৩১ অব্দে কিং সলোমনের রাজ্য উত্তরের ইজরায়েল ও দক্ষিণের ইয়াহূদা (Judah) দুই খণ্ডে বিভক্ত হয়ে যায়। অর্থাৎ, সলোমনের বংশধরেরা ইজরায়েল ও ইহুদি দুই ভাগে বিভক্ত। ইজরায়েল মানেই ইহুদি না, আবার ইহুদি মানেই ইজরায়েল না। ইজরায়েল নামের রাষ্ট্র বিশ্ব ইতিহাসের মঞ্চে নেমেছে সবার পরে। ইহুদীবাদ, বনী ইসরায়েল, ইজরায়েলি জাতীয়তাবাদ তিনটি আলাদা বিষয়। ইসলামে ইয়াকুবের ১২ সন্তান ১২টি গোত্রে বিভক্ত ছিল। ইহুদি বলতে ইয়াকুবের মাত্র দুইটি গোত্রকে বোঝায় এবং বনী ইসরায়েল বলতে বাদবাকি দশটি গোত্রকে বোঝায়। ইহুদি ও বনী ইসরায়েলের মাঝে গৃহযুদ্ধ বেঁধে যায়। ভাইয়ের হাতে খুন হতে থাকে ভাই, গোত্রের হাতে খুন হতে থাকে গোত্র। এক বিশ্বাসীদের হাতে পুড়তে থাকে আরেক বিশ্বাসীর মন্দির, ঘর, সন্তান।
ইয়াকুবের বংশধরদের ১২টি গোত্র যখন একে অপরের সঙ্গে যুদ্ধে মত্ত, তখন খ্রিস্টপূর্ব ৫৮৭ অব্দে বর্তমান ইরাক এবং প্রাচীন ব্যাবিলনের সম্রাট শলোমন মন্দির ধ্বংস করে, ইহুদিদের নির্বাসিত করে, দাস বানান। ব্যাবিলন সম্রাট নেবুশাদনেজার জেরুজালেম ঘেরাও করেন পরবর্তীতে নগরীতে প্রবেশ করে ধ্বংসযজ্ঞ চালান। তখনই তিনি শলোমনের প্রথম মন্দির ধূলিসাৎ করেন, ইহুদিদের পবিত্র ভূমি থেকে নির্বাসিত করেন। পরবর্তীতে ইহুদিরা নির্বাসন থেকে ফিরে ৫২০-৫১৫ খ্রিষ্টপূর্ব অব্দে এবনহ পুনরায় শলোমনের মন্দির নির্মাণ করে। এটিকে সেকেন্ড হলি টেম্পল বলে। মুষ্টিমেয় কিছু লোক থেকে ২০০-৫০০ বছরের মধ্যে তাদের জনসংখ্যা আনুমানিক ২০,০০,০০০ হয়। খ্রিষ্টীয় প্রথম শতকে ২০ লক্ষ জনসংখ্যা একটি বিশাল সংখ্যা। ব্যাবিলনের শাসনকালে তারা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাব্যবস্থা শুরু করে। নিজেদের মাঝে শিক্ষিতের হার তাদের বেড়ে যায়। আলাদা সংস্কৃতি, ব্যবসায়িক মানসিকতা তাদের সোনালী সময়ে নিয়ে যায় একথা বলা যাবে না। কারণ ব্যাবিলন তাদের উপরে অত্যাচার নিপীড়ন সামান্যও কমায়নি।
এরপর অ্যালেক্সান্ডার এর মৃত্যুর পর রোমান সাম্রাজ্যের উত্থানের আগে আসে হেলেনিস্টিক পিরিয়ড। পারস্য সাম্রাজ্যের পতনের পর গ্রীকরা ইহুদিদের রাজ্য শাসনের ক্ষমতা তাদেরই হাতে দিয়েছিল। কিন্তু রাজা চতুর্থ এন্টিকাস দ্বিতীয় মন্দিরের ভেতরে মূর্তি স্থাপন করেন। রাজার এ ধরণের কাজ ইহুদিদের ক্ষিপ্ত করে এবং তার বিদ্রোহ করে বসে। বিদ্রোহ দমনের জন্য গ্রীকরা ইহুদিদের উপরে অত্যাচার ও নিপীড়ন চালায়। ইহুদিরা সব ধরণের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আগ্রাসনকে শুরু থেকেই প্রতিহত করার চেষ্টা করে। ফলে শক্তিমত্তায় দুর্বল হওয়ার কারণে তারা নিপীড়ন ও নির্যাতনের শিকার হয়। যদিও গ্রীকদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে ইহুদিরা সফল হয় এবং নিজেরা স্বায়ত্তশাসন পায়। কিন্তু স্বায়ত্তশাসনের এই সুখ ইহুদিদের বেশিদিন টেকেনি।
রোমানরা সাম্রাজ্য সম্প্রসারণের সময় ঘটনাপ্রবাহে জেরুজালেম রোমান সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। এই শাসন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই শাসনের কারণেই মধ্যপ্রাচ্যে খ্রিস্টধর্মের উদ্ভব হয়। খ্রিষ্ট ধর্মের উদ্ভব ইহুদিদের জন্য সবচেয়ে ভয়ংকর বিষয় ছিল। এর আগ পর্যন্ত দক্ষিণের যিডাহ (ইয়াহূদা) স্বাধীন অঞ্চল ছিল। রোমান সেনাপতি টাইটাস জেরুজালেম দখল করেন, সেকেন্ড টেম্পল ধ্বংস করেন। সেসময় ইহুদিরা ছত্রভঙ্গ হয়ে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে শরণার্থী মতো বসবাস শুরু করে। জেরুজালেমে একেশ্বরবাদীদের যে শূন্যতা তা পূরণ করতেই অবশিষ্ট ইহুদিদের মাঝ থেকেই খ্রিষ্ট ধর্মের উদয় হয়। নাজরাথের যীশু নিজের বিশ্বাস জনগণের মাঝে প্রচার করতে থাকে। এটা জেরুজালেমে বসবাসরত অন্যান্য ইহুদিদের পছন্দ হচ্ছিল না। শুধু ইহুদি না, যীশু খ্রিষ্ট সে সময় সকল ধর্মের জন্য হুমকি হয়ে উঠেছিলেন। তাকে পথ থেকে সরিয়ে ফেলা ইহুদি ও পৌত্তলিকদের সবার জন্যই জরুরি ছিল। ইহুদি ও রোমানরা যীশুকে ক্রুশবিদ্ধ করে।
১৩১ খ্রিষ্টাব্দে ইহুদি রাব্বি সাইমন বার কোথবা রোমানদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করে। রোমানরা খুবই মৌলিক পদ্ধতিতে বার কোথবার এই বিদ্রোহ দমন করে। বার কোথবার বিদ্রোহ ছাড়াও আরও কিছু ছোট বড় বিদ্রোহ হয় রোমানদের বিরুদ্ধে কিন্তু বার কোথবা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘটনা। সাইমন বার কোথবাকে হত্যার পর রোমানরা নড়ে চড়ে বসে। রোমানরা বহু সংখ্যক ইহুদিকে হত্যা ও নির্বাসিত করে, বহু ইহুদি গ্রাম পুরোপুরি জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয়। সেন্টার ইজরায়েলে যে ইহুদিরা ছিল তাদের দাস বানিয়ে বিক্রি করা হয়। জেরুজালেমকে রোমান কলোনি বানিয়ে নাম রাখা হয় এলিয়া ক্যাপিতালাইনা। ইহুদি পরিচয় মুছে ফেলতে রোমানরা যিহূদিয়া (Judea) বা যাকে মুসলিমরা বলে ইয়াহূদা অথবা ইহুদিদের রাজ্যের নাম রাখে প্যালেসতিনা। এটিই পরবর্তীতে প্যালেস্টাইন বা ফিলিস্তিন বলে পরিচিতি পায়। আরবি শব্দ ফিলাস্তিন শব্দের উৎপত্তি ল্যাটিন শব্দ প্যালেস্তিনা থেকে। অবশিষ্ট ইহুদিরা উত্তরের গালিলিতে চলে যায়। পরবর্তীতে এটিই ইহুদিদের ধর্মীয় ভাবাদর্শের কেন্দ্র হয়ে ওঠে।
ক্রমশ…
ইহুদি জাতির ইতিহাস: নির্যাতন, অভিবাসন ও ধর্মীয় রাজনীতির একটি আখ্যান (পর্ব-২)
মতামত ও বিশ্লেষন বিভাগে প্রকাশিত সকল মতামত লেখকের নিজস্ব এবং এটি State Watch এর সম্পাদকীয় নীতির আদর্শগত অবস্থান ধরে নেওয়া ঠিক হবে না। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের, স্টেটওয়াচ কর্তৃপক্ষের নয়।
আপনার মতামত জানানঃ