দেশের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে অসম চুক্তি করায় আর্মেনিয়ার সাধারণ জনগণ ব্যাপক বিক্ষোভ প্রদর্শন করছেন। তারা এমনকি সংসদে হামলা চালিয়েছেন, মারাত্মকভাবে আহত করেছেন জাতীয় সংসদের স্পিকারকে। হামলা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর বাড়িতেও। আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যে নাগর্নো-কারাবাখ অঞ্চলে সংঘটিত সাম্প্রতিক যুদ্ধ অবসানের লক্ষ্যে রাশিয়ার মধ্যস্থতায় এ চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে। চুক্তির ফলে বেশি সাফল্য অর্জিত হয়েছে আজারবাইজানের, যা মেনে নিতে পারেনি আর্মেনিয়ার জনগণ।
নতুন শান্তিচুক্তি অনুযায়ী, সাম্প্রতিক যুদ্ধে আজারবাইজান নাগর্নো-কারবাখের যেসব এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে সেগুলো তাদেরই থাকবে। সেইসঙ্গে আর্মেনিয়াকে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সংলগ্ন আরো কিছু এলাকা থেকে সরে যেতে হবে। যুদ্ধে আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোকে নিজেদের পক্ষে টানতে পারেনি আর্মেনিয়া। তাছাড়া তাদের সেনারাও তেমন কোনো দক্ষতা দেখাতে পারেনি। এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি মানতে হয়েছে দেশটিকে। এখন আবার অসম চুক্তি করে দেশকে আরও ক্ষতির সম্মুখীন করায় সরকারের ওপর ভয়াবহ ক্ষুব্ধ সে দেশের জনগণ।
মিডল ইস্ট মনিটরের প্রতিবেদনে বলা হয়, চুক্তি ঘোষণার পর থেকেই রাজধানী ইয়েরেভেনের রাস্তায় বিক্ষোভে নামেন আর্মেনিয়ান জনগণ। একদল গিয়ে সংসদ ভবন ও ভেতরের অফিসগুলো ভাঙচুর করেছে। সংসদের অভ্যন্তরীণ কক্ষের ভেতরে জড়ো হয়ে তারা সরকারের বিরুদ্ধে ‘পদত্যাগ করুন’ বলে শ্লোগান দিয়েছে। ১০ নভেম্বর ২০২০ মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী ইয়েরেভেনের সরকারি ভবন ও অফিসগুলোতে হামলা চালায় এবং বিভিন্ন দরকারি জিনিসপত্র ক্ষতিগ্রস্থ করে।
এর পরই আর্মেনিয়ান পার্লামেন্টের স্পিকার আরারাত মির্জোয়ানকে রাস্তায় পেয়ে তার ওপর হামলা চালায় বিক্ষোভকারীরা। যার ভিডিও ফুটেজ ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রধানমন্ত্রী প্যাসিনিয়ানের বাড়িতেও হামলার খবর পাওয়া গেছে। তবে তিনি তখন বাড়িতে ছিলেন না বলে জানিয়েছে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো। এদিকে ইয়েরেভেনের রাস্তায় বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়া এবং সংসদ অবমাননার পর আর্মেনিয়ার প্রেসিডেন্ট আর্মেন সারকিসিয়ান এক বিবৃতিতে দাবি করেছেন, যুদ্ধবিরতি চুক্তি সম্পর্কে তার সঙ্গে কোনো পরামর্শ করা হয়নি।
এর আগে আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল প্যাসিনিয়ান ফেসবুক পোস্টে জানান, তার সরকার যুদ্ধ বন্ধের জন্য আজারবাইজান ও রাশিয়ার সঙ্গে একটি চুক্তি করেছে। চুক্তিটি ব্যক্তিগতভাবে এবং আমাদের জনগণের জন্য অবর্ণনীয় বেদনাদায়ক। আমি সামরিক পরিস্থিতি গভীরভাবে বিশ্লেষণ এবং পরিস্থিতি সবচেয়ে ভালো জানেন এমন লোকদের মূল্যায়নের ফলস্বরূপ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তাছাড়া চলমান পরিস্থিতির সর্বোত্তম সম্ভাব্য সমাধান এটিই।
বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশকে সঠিকভাবে নেতৃত্ব প্রদানে ব্যর্থ হলে, অসম চুক্তি করে দেশের স্বার্থ ঝুঁকিতে ফেললে জনরোষের মুখে পড়তে হবে। এরকম উদাহরণ আইনের কিছু খেলাপ হলেও একেবারে খারাপ নয়। সব দেশের শাসকদের, বিশেষ করে স্বৈরশাসক ও কর্তৃত্ববাদীদের জন্য এই ঘটনার মধ্যে শিক্ষা নেয়ার মতো অনেক কিছু রয়েছে।
Available for everyone, funded by readers. Every contribution, however big or small, makes a real difference for our future. Support to State Watch a little amount. Thank you.
[wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ