সরকারের সমালোচনা করাসহ বেশ কয়েকটি অপরাধে মরিয়ম ইব্রাহিমভান্দ (২৯) নামে এক নারী চলচ্চিত্র নির্মাতাকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে ইরানের আদালত। ২০১৮ সাল থেকে তিনি কারাগারে। সম্প্রতি কারাগারে অনশন ধর্মঘট ও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন এই চলচ্চিত্র নির্মাতা। চলতি নভেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ভয়েস অব আমেরিকাকে চলচ্চিত্রকার মরিয়মের এক আত্মীয় জানান, ইরানের আদালতের এক কর্মকর্তা কয়েক দিন আগে মরিয়মের আইনজীবীকে তার আত্মহত্যাচেষ্টার বিষয়টি জানান।
সূত্রের বরাত দিয়ে ভয়েস অব আমেরিকা বলছে, মরিয়ম ইব্রাহিমভান্দকে মোট ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে চলচ্চিত্রে অশ্লীলতার দায়ে সাত বছর, ইরানের শীর্ষ সামরিক বাহিনী ইসলামিক রেভ্যুলেশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) সম্পর্কে ভুয়া তথ্য ছড়ানোর অভিযোগে দুই বছর এবং ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানিকে অপমান করায় তাকে এক বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। ২০১৮ সালে আইআরজিসি সদস্যরা মরিয়ম ইব্রাহিমভান্দকে প্রথমে তেহরানের এভিন কারাগারে তাদের নিয়ন্ত্রিত ওয়ার্ডে রাখে। পরে তাকে কারগারটির নারী ওয়ার্ডে নেয়া হয়।
সূত্র জানায়, ইরানে নারী ধর্ষণের বিষয়ে ‘গার্লস বোর্ডিং হাউস’ নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণের দায়ে মরিয়মকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। তার চলচ্চিত্রে অশ্লীলতার অভিযোগ আনা হয়। এদিকে ইসলামিক রেভ্যুলেশনারি গার্ড কর্পস কর্তৃক এক যুবককে নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে ইনস্টাগ্রামে পোস্টে দেয়ায় মরিয়মকে দুই বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়। এছাড়া এক সভায় প্রেসিডেন্ট রুহানির সাংস্কৃতিক নীতি নিয়ে নেতিবাচক সমালোচনা করায় তাকে এক বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়। সেই সভা কবে হয়েছিল সে ব্যাপারে কোনো তথ্য ওই সূত্র ভয়েস অব আমেরিকাকে জানাতে পারেননি।
গত ২৩ আগস্ট ইরানের রাষ্ট্রীয় দৈনিক শার্গকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ সম্পর্কে বিস্তারিত বলেন মরিয়ম ইব্রাহিমভান্দ। তিনি সমালোচনা করে বলেন, তিনি যা বলেছিলেন, সেগুলো মামলার অভিযোগপত্রে নেই। ইরানের কারাগারে বন্দিদের সঙ্গে কথা বলার জন্য টেলিফোনের ব্যবস্থা আছে। তবে সেটা ব্যবহারেরও সীমাবদ্ধতা আছে। এ পরিস্থিতিতে কারাবন্দি চলচ্চিত্র নির্মাতার সাক্ষাৎকার কীভাবে নেয়া হয়েছে, সে ব্যাপারে কিছু জানায়নি শার্গ।
এদিকে কয়েক সপ্তাহ ধরে গণমাধ্যমে মরিয়ম ইব্রাহিমভানদের মামলা নিয়ে কোনো মন্তব্য নেই কর্তৃপক্ষের। সূত্র জানায়, কারাগারে দুরবস্থার প্রতিবাদে গত ২৯ এপ্রিল অনশন শুরু করেন মরিয়ম। কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে এর ১৯ দিন পর অনশন ভাঙেন তিনি। তিনি যা চেয়েছিলেন সে ব্যাপারে কোনো সাড়া পাননি। এ কারণে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন মরিয়ম। পরে ১৮ সেপ্টেম্বর মাত্রাতিরিক্ত ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। বিষয়টি টের পেয়ে কারাগার থেকে তাকে হাসপাতালে পাঠানো হয়।
বর্তমানে তিনি কারাগারে কী অবস্থায় আছেন সে সম্পর্কে কোনো কিছু নিশ্চিত হতে পারেনি ভয়েস অব আমেরিকা। এ ব্যাপারে ইরানের বাইরে তথ্য প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ২০১৬ সালের জুলাইয়ে মরিয়ম ইব্রাহিমভান্দকে প্রথম গ্রেফতার করে ইসলামিক রেভ্যুলেশনারি গার্ড কর্পস। ৩৫ দিন ধরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে ৭১ হাজার ডলারের বিনিময়ে তাকে মুক্তি দেয়া হয়। এই চলচ্চিত্র নির্মাতা ২০১৭ সালে ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নিজেকে প্রার্থী ঘোষণা করেন। কিন্তু গার্ডিয়ান কাউন্সিল তাকে অযোগ্য ঘোষণা করে। কারণ নির্বাচনে প্রার্থীকে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে, তিনি ইরানের ইসলামপন্থী শাসন ব্যবস্থার প্রতি অনুগত।
Available for everyone, funded by readers. Every contribution, however big or small, makes a real difference for our future. Support to State Watch a little amount. Thank you.
[wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ