কর্মক্ষেত্রে অনেক সময় নির্ধারিত সময়ের বাইরে কাজ করতে হয়। কখনো তা করতে হয় অফিসের প্রয়োজনে, কখনোবা নিজের ঘাটতি পুষিয়ে নিতে। দেখা যায়, এভাবে সপ্তাহে ৪০ ঘণ্টা বা এর বেশি সময় সামলাতে হচ্ছে কর্মস্থলের ধকল।
উন্নত দেশগুলোতে কর্মঘণ্টা নিয়ে নানা বিধি-নিষেধ থাকলেও উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশগুলোয় এসবের বালাই নেই। সেখানে বেশি কাজ মানেই দীর্ঘ সময় ধরে অফিস নিয়ে মাথা ঘামানো।
কিন্তু দীর্ঘ কর্মঘণ্টা স্বাস্থ্যের জন্য কি ভালো? আবার যে কারণে বেশি সময় অফিসে থাকছেন, সেই কাজইবা কতটুকু হচ্ছে? বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নতুন এক গবেষণায় উঠে এসেছে যে, দীর্ঘ কর্মঘণ্টার কারণে মৃত্যুঝুঁকি বাড়ে এবং ক্ষতিগ্রস্ত ৭২ শতাংশই পুরুষ এবং তারা মধ্যবয়সী অথবা আরও বয়স্ক। অনেক সময় তাৎক্ষণিক সময়ের চেয়ে এই মৃত্যু ঘটে অনেক পরে, হয়তো কয়েক দশক পরে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ও ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন (আইএলও) যৌথভাবে পরিচালিত এক জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে। খবর রয়টার্সের।
ডব্লিউএইচওর পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন ও স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক মারিয়া নাইরা স্থানীয় সময় আজ সোমবার জানান, সপ্তাহে ৫৫ ঘণ্টা বা তার বেশি সময় কর্মস্থলে কাজ করলে গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এ তথ্য জানানোর মাধ্যমে আমরা কর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে চাই।’
ইনভায়রনমেন্ট ইন্টারন্যাশনাল জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণা নিবন্ধটি দীর্ঘ কর্মঘণ্টা নিয়ে প্রথম কোনো বৈশ্বিক গবেষণা। এতে দেখা যায়, ২০১৬ সালে ৭ লাখ ৪৫ হাজার মানুষ দীর্ঘ কর্মঘণ্টা জনিত কারণে স্ট্রোক বা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। ২০০০ সাল থেকে এই হার অন্তত ৩০ শতাংশ বেড়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত এ গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘ কর্মঘণ্টার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ৭২ শতাংশই পুরুষ এবং তারা মধ্যবয়সী অথবা আরও বয়স্ক। অনেক সময় তাৎক্ষণিক সময়ের চেয়ে এই মৃত্যু ঘটে অনেক পরে, হয়তো কয়েক দশক পরে।
এতে আরও দেখা গেছে, দক্ষিণ পূর্ব ও পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে দীর্ঘ কর্মঘণ্টার কারণে ক্ষতিগ্রস্তের হার সবচেয়ে বেশি। এই অঞ্চলের মধ্যে চীন, জাপান ও অস্ট্রেলিয়াও রয়েছে।
এই গবেষণায় ১৯৪ টি দেশকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সামগ্রিক ফলাফলে দেখা গেছে, সপ্তাহে ৩৫ থেকে ৪০ কর্মঘণ্টার চেয়ে ৫৫ বা তার বেশি কর্মঘণ্টার ফলে স্ট্রোকের ঝুঁকি ৩৫ শতাংশ ও হৃদরোগের ঝুঁকি ১৭ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।
এই গবেষণায় ২০০০ সালে থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত সময় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাই মহামারির বছর এতে যুক্ত করা হয়নি। কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্মকর্তারা বলছেন, করোনাভাইরাসের কারণে বাসায় বসে কাজ করা এবং বৈশ্বিকভাবে অর্থনীতির গতি ধীর হয়ে যাওয়ার ফলে এই ঝুঁকি আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।
ডব্লিউএইচওর কর্মকর্তারা বলছেন, করোনা পরিস্থিতিতে এ ঝুঁকি আরও বাড়তে পারে।
ডব্লিউএইচও বলছে, মহামারির কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দিয়েছে।
পরিস্থিতির উন্নতির জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মঘণ্টা আরও বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দেবে। সংস্থাটি বলছে, কমপক্ষে ৯ শতাংশ মানুষ কর্মস্থলে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করছেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুসসহ সংস্থার কর্মীরা বলেছেন, মহামারির সময় তারা দীর্ঘ সময় কর্মস্থলে কাজ করেছেন।
ডব্লিউএইচওর পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন ও স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক মারিয়া নাইরা বলেন, ডব্লিউএইচও এ গবেষণার আলোকে তাদের নীতি উন্নয়নের পরিকল্পনা করছেন।
ডব্লিউএইচওর প্রযুক্তিবিষয়ক কর্মকর্তা ফ্রাঙ্ক পেগা বলেন, কাজের সর্বোচ্চ সময়সীমা নির্ধারণ কর্মীদের জন্য সুফল বয়ে আনবে।
তিনি বলেন, অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে কর্মঘণ্টা না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত সত্যিই প্রশংসনীয়। এতে নির্দিষ্ট ওই সময়ের মধ্যে কর্মীদের কর্মক্ষমতাও বাড়ানো সম্ভব হবে।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ
বিশেষজ্ঞরা বলেন, কেউ কেউ মনে করেন, অতিরিক্ত কাজ করলেই দক্ষতা বাড়ে। এই দলে অফিসের বড় কর্তারা যেমন আছেন, তেমনি আছেন কিছু কাজপাগল কর্মীও। তবে আদতে শুধু অতিরিক্ত কাজ করলেই কর্মদক্ষতা বাড়ে না, উল্টো কমে। ইউরোপের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ জার্মানি। অথচ সেখানে একজন কর্মীকে প্রতি সপ্তাহে কর্মক্ষেত্রে মাত্র ৩৫ দশমিক ৬ ঘণ্টা সময় ব্যয় করলেই হয়!
কর্মক্ষেত্রে কম সময় কাজ করার মতো বিষয় শুরুর দিকে উদ্ভট মনে হতেই পারে। তবে একে বাস্তবে রূপ দিতে এবং ফলপ্রসূ করতে হলে কিছু বিষয়ে নজর দিতে হবে কর্মীকেও। নিয়োগকর্তা আপনার কর্মঘণ্টা কমিয়ে দিলেও কাজের চাপ তো থাকছেই। কম সময়ের মধ্যে সেই কাজ সুচারুভাবে শেষ করাই তখন কর্মীর কাছে মূল চ্যালেঞ্জ। এ জন্য কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে:
প্রথমত, রাতে ভালো করে ঘুমাতে হবে। পর্যাপ্ত ঘুম আপনার শরীর ও মনকে চনমনে রাখবে। এতে অফিসের কাজে পুরোপুরি মন দিতে পারবেন। এতে অল্প সময়েই সারতে পারবেন বেশি কাজ।
দ্বিতীয়ত, প্রতিদিনের কাজের একটি সুষ্ঠু তালিকা নিজেকে তৈরি করতে হবে। একেকটি কাজ শেষ করে ওই তালিকায় একটু চোখ বুলিয়ে নেওয়া ভালো। এতে উৎসাহ বাড়বে।
তৃতীয়ত, অফিসের কাজ বাড়িতে আনবেন না। সব সময় অফিসের কাজ নিয়ে চিন্তা করলে তা আপনার শরীর ও মনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এর চেয়ে সময়ের কাজ সময়ে শেষ করার অভ্যাস গড়ুন। এতে অফিসও যেমন উপকৃত হবে, তেমনি মানসিক শান্তিতে থাকবেন আপনিও।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৫৪১
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ