গত ডিসেম্বরে করোনার টিকা প্রথম অনুমোদন পায়। এরপর সম্পদশালী দেশগুলো টিকার বেশির ভাগ সরবরাহ মজুত করেছে। বিভিন্ন দেশের মধ্যে জনসাধারণকে টিকা দেওয়ার জন্য প্রতিযোগিতা চলছে। বিভিন্ন দেশে বর্তমানে শিশুদের টিকা দেয়ার অনুমোদন দেয়া হচ্ছে। অনেক দেশে অপ্রয়োজনীয়ভাবে মজুদ করে রাখা হচ্ছে টিকার। যার কারণে গরিব দেশিগুলোর টিকাদান কর্মসূচি ব্যহত হচ্ছে। এমনকি ভারতও এখন বিপদে। দেশটির অনেক স্বাস্থ্যকর্মী এখনও টিকা পায়নি। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস শিশু-কিশোরদের টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা পিছিয়ে দিতে সম্পদশালী দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
‘গরিব দেশগুলোতে টিকা সরবরাহ করা উচিত’
স্থানীয় সময় গত শুক্রবার গেব্রেয়াসুস গরীব দেশগুলোতে আরও বেশি টিকা সরবরাহের জন্য ধনী দেশগুলোর প্রতি এ আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, শিশুদের টিকা দে’য়ার আগে গরিব দেশগুলোতে টিকা সরবরাহ করা উচিত। খবর বিবিসির।
গতকাল জেনেভায় ভার্চ্যুয়াল সম্মেলনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান তেদরোস বলেন, তিনি বুঝতে পারছেন কেন কিছু দেশ শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের টিকা দিতে চাইছে। তবে এখন তাদের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা দরকার।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান তেদরোস আরও বলেন, নিম্ন ও নিম্নমধ্যম আয়ের দেশগুলোতে স্বাস্থ্যকর্মীদের টিকা দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত টিকা মজুত নেই। হাসপাতালগুলোতেও স্বাস্থ্যসুরক্ষা সরঞ্জামের অভাব রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনে টিকা দেওয়ার হার সর্বোচ্চ। টিকা দেওয়ার হার অনুসারে ভারত রয়েছে তৃতীয় অবস্থানে। এদিকে, কোভ্যাক্সের লক্ষ্য হলো এর অন্তর্ভুক্ত ৯২টি গরিব দেশে প্রথম ধাপে ২০ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে টিকাদান কর্মসূচির আওতায় আনা।
গতকালের ওই সংবাদ সম্মেলনে তেদরোস সতর্কতা জারি করে বলেন, মহামারির দ্বিতীয় বছর প্রথম বছরের তুলনায় বেশি মারাত্মক হতে পারে। এর মধ্যে ভারতের পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক বলে জানান তিনি। ভারতে অনেক স্বাস্থ্যকর্মী এখনও টিকা পাননি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রার কারণে নিম্ন আয়ের দেশগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
টিকার অভাবে ভুগছে ভারত
ভারতে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ার পর থেকেই অনেক রাজ্যে টিকার অভাব দেখা দিয়েছে। কোথাও টিকার অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে টিকাদান কর্মসূচি।
এই অবস্থায় বিশ্বের টিকা উৎপাদনকারী সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের প্রধান আদর পুনেওয়ালা জানিয়েছেন, জুলাই মাস পর্যন্ত টিকার এই অভাব থাকবে।
ভারতে করোনার দ্বিতীয় তরঙ্গ শুরু হওয়ার পরে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ৪ লাখও পার হয়েছে। এই অবস্থায় টিকার প্রয়োজনীয়তা সবথেকে বেশি। এনডিটিভির প্রতিবেদন অনুসারে, ভারতে এখন পর্যন্ত প্রায় ১৬ কোটি মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে।
টিকার ঘাটতি প্রসঙ্গে গণমাধ্যমে এক সাক্ষাৎকারে আদর পুনেওয়ালা বলেন, জুলাই মাসের পরে ফের টিকার জোগান বাড়বে। ততদিন টিকার অভাব থাকবে।
যুক্তরাষ্ট্রে ১২ থেকে ১৫ বছর বয়সীদের টিকাদান শুরু
যুক্তরাষ্ট্রের বহু অঙ্গরাজ্যে গত বৃহস্পতিবার ১২ থেকে ১৫ বছর বয়সী শিশুদের করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়া শুরু করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন ফাইজার-বিয়োনটেকের তৈরি করা টিকা যাদের জরুরি ভিত্তিতে দেওয়া হচ্ছে সেই গ্রুপের মধ্যে এই বয়স সীমার শিশুদেরও অন্তর্ভুক্ত করতে অনুমোদন দেয় সোমবার।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রে এই টিকা ১৬ বছর বা তার চেয়ে বেশি বয়সী ব্যক্তিদের জরুরি ভিত্তিতে দেওয়ার জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল।
নিউ জার্সি অঙ্গরাজ্যের রওয়ান বিশ্ববিদ্যালয় শিশুদের টিকাদানের একটি কেন্দ্রে এই কর্মসূচি পরিচালনা করে।
১৫ বছর বয়সী এক কিশোরী বলে শিক্ষকদের উপস্থিতি ও সাহায্য ছাড়া লেখাপড়া চালানো নিশ্চিত ভাবেই কঠিন। এই কিশোরী এখন বন্ধুদের সাথে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়ার জন্য দিন গুনছে।
ফাইজার ১১ বছর ও তার চেয়ে কম বয়সী শিশুদের জন্য টিকার ক্লিনিকাল ট্রায়াল চালাচ্ছে। কোম্পানিটি সেপ্টেম্বর মাসে এই বয়স সীমার শিশুদের জরুরি ভিত্তিতে দেওয়ার জন্য এই টিকার অনুমোদন লাভের আবেদন করার পরিকল্পনা করছে।
কানাডায় শিশুদের জন্য ফাইজারের ভ্যাকসিনকে অনুমোদন
কানাডায় ১২ থেকে ১৫ বছর বয়সের শিশুদের ব্যবহারের জন্য ফাইজারের ভ্যাকসিনকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ফেডারেল সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে।
কানাডার ফেডারাল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র উপদেষ্টা সুপ্রিয়া শর্মা বলেছেন, জার্মান সংস্থা বায়োএনটেকের সঙ্গে মিলিত হয়ে ফাইজারের ভ্যাকসিনটি উৎপাদিত হয়েছে, যা অল্প বয়সীদের ক্ষেত্রে নিরাপদ ও কার্যকর। আমরা অবশেষে আশার আলো দেখতে পাচ্ছি।
শিশুদের করোনার সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা দিতে কানাডায় এটিই প্রথম টিকা। মহামারির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কানাডার জন্য এটি একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক।
কানাডায় তিনটি ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে, ফাইজার, মার্ডানা এবং অস্ট্রাজেনেকা-অক্সফোর্ড কোভিড-১৯।
এদিকে, সুইজারল্যান্ডেরও কয়েকটি জায়গায় গত সপ্তাহে ১৬ বছর বয়সীদের টিকা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এসডব্লিউ/এসএস/১০১০
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ