
মশা আকারে ক্ষুদ্র হলেও অত্যন্ত ভয়ংকর। পৃথিবীতে যতো প্রাণী আছে তার মধ্যে সম্ভবত সবচেয়ে মারাত্মক এই কীট। ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, জীবাণু- সবই বহন করে এই মশা। শুধু বহন করেই ক্ষান্ত হয় না, সামান্য এক কামড়ে এসব ছড়িয়ে দিতে পারে একজন থেকে আরেক জনের শরীরেও।
এবার রোগ বহনকারী মশা নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের ফ্লোরিডা কিজ দ্বীপপুঞ্জে জেনেটিক্যালি মডিফায়েড (জিএম) মশা ছেড়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক বায়োটেকনোলজি কোম্পানি অক্সিটেক। এর মধ্য দিয়ে উত্তর আমেরিকার দেশটিতে প্রথমবারের মতো জিএম মশা প্রকৃতিতে মুক্ত করা হয়।
এর আগে নিজেদের মডিফায়েড অ্যাডিস অ্যাজিপ্টি মশা ব্রাজিল, কেম্যান আইল্যান্ডস, পানামা ও মালয়েশিয়ায় ছেড়েছিল অক্সিটেক। সে সময় কোম্পানিটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, ওইসব এলাকায় স্থানীয় অ্যাডিস অ্যাজিপ্টি মশার সংখ্যা কমপক্ষে ৯০ শতাংশ কমে যায়।
জিকা, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও হলুদ জ্বরের মতো রোগ বহন করে অ্যাডিস অ্যাজিপ্টি মশা। কীটনাশক ব্যবহার না করেই মডিফায়েড মশা রোগ বহনকারী অ্যাডিস অ্যাজিপ্টির বংশবিস্তার নিয়ন্ত্রণে সক্ষম বলে দেখা যায়।
অক্সিটেকের মডিফায়েড মশার (যার সবই পুরুষ) অভ্যন্তরে এক ধরনের প্রাণঘাতী জিন রয়েছে। যখন মডিফায়েড মশাটি বন্য স্ত্রী মশার সঙ্গে মিলিত হয়, তখন তাদের লার্ভার মধ্যে ওই প্রাণঘাতী জিনটি প্রবেশ করে।
জিনটি পুরুষ মশার কোনো ক্ষতি না করলেও এটি স্ত্রী লার্ভার মধ্যে প্রয়োজনীয় প্রোটিন গঠনে বাধা দেয়। এতে পরিপক্ব হওয়ার আগেই ওইসব লার্ভার মৃত্যু হয়। স্ত্রী মশাই কেবল মানুষকে কামড়ায়। মডিফায়েড মশা ও তাদের বেঁচে থাকা পুরুষ লার্ভা মানুষের মধ্যে রোগের সংক্রমণ ঘটাতে পারে না।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক বিজ্ঞানবিষয়ক জার্নাল নেচারের প্রতিবেদনে বলা হয়, ফ্লোরিডা কিজ দ্বীপপুঞ্জে থাকা মশার মধ্যে মাত্র ৪ শতাংশ অ্যাডিস অ্যাজিপ্টি গোত্রের। তা সত্ত্বেও এটি ওই এলাকায় ব্যাপকসংখ্যক মানুষের মধ্যে মশাবাহিত রোগের সংক্রমণ ঘটায়।
এ গোত্রের মশা নিয়ন্ত্রণে প্রতি বছর ১০ লাখ ডলার অর্থ বরাদ্দ রাখতে হয় ফ্লোরিডা কিজ মসকিটো কন্ট্রোল ডিস্ট্রিক্ট (এফকেএমসিডি) বোর্ডকে। জেনেটিক্যালি মডিফায়েড মশার বিষয়ে বোর্ডের ভাষ্য, পরিবেশে কয়েক লাখ জিএম মশা ছেড়ে দিলে তা তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী ও কার্যকর বিকল্প হতে পারে।
নেচারের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০১০ সালে মশা নিয়ন্ত্রণে প্রথম অক্সিটেকের শরণাপন্ন হয় এফকেএমসিডি। এক দশকের মূল্যায়ন ও স্থানীয় পর্যায়ের পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে এফকেএমসিডি ও যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থা (ইপিএ) ফ্লোরিডা কিজ দ্বীপপুঞ্জে জিএম মশা ছাড়ার অনুমোদন দেয়।
চলতি বছরের এপ্রিলের শেষের দিকে ফ্লোরিডা কিজ দ্বীপপুঞ্জের কাডজো কি, রামরড কি ও ভ্যাকা কি এলাকার ছয়টি স্থানে মশার ডিমের বাক্স রাখা হয়। ১২ সপ্তাহের মধ্যে ওইসব বাক্স থেকে প্রায় ১২ হাজার নতুন পুরুষ মশা নির্গত হওয়ার কথা।
চলতি বছরের শেষের দিকে ২ কোটি মশা নিয়ে দ্বিতীয় ট্রায়াল শুরু করবে অক্সিটেক। তার আগে বাক্স থেকে নির্গত ওইসব মশার কাছে প্রাপ্ত তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে প্রাথমিক ট্রায়াল শুরু করা হবে কোম্পানিটির পক্ষ থেকে।
বাক্স থেকে মশা কতদূর পর্যন্ত যায়, কতদিন বাঁচে এবং প্রাণঘাতী জিন প্রবেশ করানোর মধ্য দিয়ে স্ত্রী মশার মৃত্যু ঘটে কি না, এসব পর্যবেক্ষণ করতে ট্রায়ালজুড়ে মশা ধরবে অক্সিটেক।
ট্রায়ালে মডিফায়েড মশা শনাক্তের সুবিধার্থে নতুন জিনের প্রবর্তন করেছে কোম্পানিটি। এর মাধ্যমে নির্দিষ্ট রঙের আলোর নিচে ওইসব মশা জ্বলে উঠবে। অবশ্য জিএম মশার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। স্থানীয় মশা, প্রাণী বা ইকোসিস্টেমের ওপর জিএম মশার কোনো ধরনের প্রভাব পড়বে কি না, সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৯০৩
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ