করোনাভাইরাস মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ চলাকালীন সময়টাতে দেশের বিদ্যমান শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনার ঘাটতি পূরণে অভিভাবকদের মাঝে কোচিং নির্ভরতা বাড়ছে। স্কুল বন্ধ থাকলেও প্রাথমিকের ৫১ শতাংশ এবং মাধ্যমিকের ৬১ শতাংশ শিক্ষার্থী কোচিং সেন্টারের মাধ্যমে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে। আর অতি দরিদ্র ৫৯ শতাংশ বাবা-মা তাদের ছেলেমেয়ের কোচিং সেন্টারে পাঠিয়েছেন।
গবেষণা সংস্থা পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্স সেন্টার (পিপিআরসি) এবং বেসরকারি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যাক ইন্সটিটিউট অব গর্ভন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিজিআইডি) পরিচালিত এক সমীক্ষা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠেছে।
আজ সোমবার(১০ মে) ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ সমীক্ষা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে প্রতিষ্ঠান দুইটি। ২০২০ সালের এপ্রিল এবং চলতি বছরের মার্চে ছয় হাজারের অধিক প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে এ সমীক্ষা করা হয়েছে।
এ প্রতিবেদন তুলে ধরেন পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান এবং বিজিআইডির নির্বাহী পরিচালক ড. ইমরান মতিন।
গবেষণায় উঠে এসেছে, শিক্ষায় পিছিয়ে থাকলে ভবিষ্যত জীবনে সন্তান সমস্যায় পড়বে, এমন আশঙ্কা থেকে অতি দরিদ্র ৫৯ শতাংশ বাবা-মা তাদের ছেলেমেয়ের কোচিং সেন্টারে পাঠিয়েছেন। আবার স্কুল খোলা থাকার সময়ে কওমি মাদ্রাসা খোলা থাকায় এখানে ৪ শতাংশ শিক্ষার্থী বেড়েছে।
গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরে হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, সমীক্ষা প্রতিবেদনের মূল বার্তা হলো- স্কুল বন্ধ থাকলেও প্রাথমিকের ৫১ শতাংশ এবং মাধ্যমিকের ৬১ শতাংশ শিক্ষার্থী কোচিং সেন্টারের মাধ্যমে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে।
গবেষণায় আরও বলা হয়, মহামারিতে শিক্ষার ব্যয় গ্রামীণ পরিবারে ১১ গুণ ও শহুরে পরিবারে ১৩ গুণ বেড়েছে।
অভিভাবকরা বলছেন, দীর্ঘ সময় স্কুল বন্ধ থাকার কারণে সন্তানদের পড়াশোনায় অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে। শিক্ষায় আগ্রহ কমছে। বাধ্য হয়ে শিক্ষার ক্ষতি কিছুটা কমাতে কোচিং সেন্টারের ওপর নির্ভর হচ্ছেন। এতে শিক্ষার খরচ ১১ থেকে ১৩ গুণ পর্যন্ত বেড়েছে। যা তারা বাড়াতে চান না।
একটি ইতিবাচক তথ্যও উঠে এসেছে গবেষণায়। জরিপে অংশ নেওয়া ৯৭ দশমিক ৭ শতাংশ প্রাথমিক শিক্ষার্থীর অভিভাবক এবং মাধ্যমিকের ৯৬ শতাংশ অভিভাবক বলেছেন, পুনরায় স্কুল খুললে তারা সন্তানদের স্কুলে পাঠাবেন। গবেষণায় পুনরায় স্কুল খোলার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। তবে করোনাভাইরাসে গতিবিধি দেখে স্কুল খোলার দিনক্ষণ ঠিক করতে হবে।
মহামারির এ সময়ে মরণঘাতি করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি থাকার পরও সন্তানদের স্কুলে পাঠানোর কারণ হিসেবে তারা বলছেন, স্কুল বন্ধ থাকলেও সন্তানদের বাইরে যাওয়া বন্ধ নেই, শিক্ষার ক্ষতি পোষাতে কোচিং সেন্টারে পাঠাচ্ছেন তারা।
অভিভাবকা জানিয়েছে, দীর্ঘ সময় স্কুল বন্ধ থাকায় তাদের সন্তানদের শিক্ষায় আগ্রহ কমছে। আর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে ‘অটো পাস’ এর কারণে ভবিষ্যতে চাকরি জীবনে গিয়ে সন্তানরা কোনো সমস্যায় পড়েন কি-না, তা নিয়েও তারা ভীষণ উদ্বিগ্ন।
হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘এটা পরিবারগুলো, বিশেষ করে দরিদ্র পরিবারগুলোর ওপর আরও বেশি অর্থনৈতিক চাপ তৈরি করছে। ছাত্রদের পড়ালেখার যে ক্ষতির কথা সমীক্ষায় উঠে এসেছে বাস্তবে ক্ষতি হয়েছে তার চেয়েও বেশি। তাদের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া না হলে তারা ড্রপআউটের ঝুঁকিতে পড়বে।’
ইমরান মতিন বলেন, ‘স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের একটি অংশের পড়ালেখা ঝুঁকিতে আছে। স্কুল খোলার পর শিক্ষার্থীরা যেন তাদের এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারে তার জন্য অবশ্যই ব্যবস্থা রাখতে হবে।’
গবেষণায় আরও উঠে এসেছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকায় এ সময়ে দেশের প্রাথমিকের ১৯ শতাংশ ও মাধ্যমিকের ২৫ শতাংশ শিক্ষার্থী শিখতে না পারার (লার্নিং লস) ঝুঁকিতে আছে। পুনরুদ্ধার কর্মসূচি হাতে নিয়ে এদের না শেখালে তারা ঝরে পড়বে।
হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, গবেষণার উঠে আসা শিখতে না পারার ঝুঁকিতে থাকা শিক্ষার্থীদের শতাংশ দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের মোট শিক্ষার্থীর সঙ্গে মেলালে প্রায় ৬০ লাখ শিক্ষার্থী এ ঝুঁকিতে আছে। তারা ঝরে যাওয়ার হুমকির মুখে আছে। কারণ, তারা এখন মোটামুটি পড়াশোনার বাইরে রয়েছে। পুনরুদ্ধার করা না গেলে তাদের অবধারিত হবে ঝরে পড়া। তাই তাদের জন্য পুনরুদ্ধার কর্মসূচি হাতে নিতে হবে।
করোনাভাইরাসের কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে। সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী ২৩ মে থেকে স্কুল–কলেজ এবং ২৪ মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার কথা রয়েছে। কিন্তু করোনাভাইরাসের বিদ্যমান পরিস্থিতি থাকলে ঘোষিত সময়ে খুলবে কি না, তা বলা যাচ্ছে না।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৭৪৫
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ