শেষের পথে টিকার মজুদ আর নতুন টিকার চালান না আসায় প্রথম ডোজ পাওয়া অনেক মানুষই অনিশ্চয়তায় ভুগছেন দ্বিতীয় ডোজ নিয়ে। এর কারণ হিসেবে সিরাম ইন্সটিটিউটে তৈরি অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কোভিশিল্ডের ওপর সরকারের নির্ভরতাকেই দায়ী করা হচ্ছে। করোনা শুরু থেকেই সরকার তার গৃহীত পদক্ষেপে দূরদর্শিতার প্রমাণ রাখতে পারেনি। প্রবাসীদের ঠিকঠাক কোয়ারেন্টাইন করতে পারেনি, লকডাউনের সিদ্ধান্ত ছিল অপরিকল্পিত, গণপরিবহন কলকারখানা সমস্ত ক্ষেত্রেই সরকারের সিদ্ধান্ত ছিল অগোছালো। টিকার ক্ষেত্রেও নিজেদের অযোগ্যতার সুনাম ধরে রেখেছে তারা। সারা বিশ্ব যখন বিভিন্ন উৎস থেকে টিকা সংগ্রহে ব্যস্ত ছিল, বাংলাদেশ তখন তথাকথিত বন্ধু রাষ্ট্র ভারতের উপরই দেশের প্রায় ১৭ কোটি মানুষের টিকার দায়িত্ব চাপিয়ে নির্ভার ছিল।
ইতিমধ্যেই অনেকের দ্বিতীয় ডোজের নির্ধারিত তারিখ থাকার পরেও তারা টিকা নেয়ার এসএমএস না পাওয়ায় টিকা নিতে পারেননি। এমন মানুষের সংখ্যা ১৩ লাখের বেশি হতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।
দ্বিতীয় ডোজের টিকা নেই সরকারের হাতে
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত প্রথম ডোজ পেয়েছেন ৫৮ লাখ ১৯ হাজার ৮৫৪ জন, আর দ্বিতীয় ডোজ টিকা পেয়েছেন ৩৩ লাখ ১৩ হাজার ৮২৪ জন।
প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ মিলিয়ে এখন পর্যন্ত টিকা দেয়া হয়েছে ৯১ লাখ ৩৩ হাজার ২৭৮ ডোজ। ভারত থেকে কেনা এবং উপহার মিলিয়ে দেশে টিকা রয়েছে এক কোটি ২ লাখ ডোজ।
সরকারের হাতে এখন মাত্র ১১ লাখ ডোজের মতো টিকা রয়েছে। প্রথম ডোজের টিকা নিয়েছেন কিন্তু গত শুক্রবার পর্যন্ত দ্বিতীয় ডোজের টিকা পাননি এরকম মানুষ রয়েছেন ২৫ লাখ ৬ হাজার ৩০ জন। এই হিসাবে ১৩ লাখের বেশি মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় দ্বিতীয় ডোজের টিকা এই মুহূর্তে সরকারের হাতে নেই।
প্রথম ডোজের কতদিনের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ নে’য়া যাবে?
অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনের ১২ সপ্তাহ (তিনমাস) পর্যন্ত সময়সীমা বৃদ্ধির উদাহরণ রয়েছে। এর ফলে আরও বেশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয় ব’লে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। সূত্র মতে, এ ধরনের টিকার ক্ষেত্রে দুইটি ডোজ নেয়া গুরুত্বপূর্ণ। সেক্ষেত্রে যদি কয়েকদিন বা কয়েক সপ্তাহ দেরিও হয়, তারপরেও দ্বিতীয় ডোজ নে’য়া দরকার। কারণ প্রথম ডোজে আসলে নতুন অ্যান্টিজেন শরীরের ভেতর প্রবেশ করে, দ্বিতীয় ডোজের মাধ্যমে সেটার ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়া হয়।
বিশ্বের অনেক দেশেই প্রথম টিকা নেয়ার পরবর্তী ১২ সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ নে’য়ার কথা বলা হচ্ছে।
যদিও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বুলেটিনে অন্যতম মুখপাত্র অধ্যাপক রোবেদ আমিন বলেছেন, অক্সফোর্ড- অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা প্রথম ডোজের পর ১২ সপ্তাহ, এমনকি তার পরেও দ্বিতীয় ডোজ নেয়া যেতে পারে। ফলে দ্বিতীয় ডোজ নিয়ে ভয়ের কোন কারণ নেই।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মিডিয়া সেলের সদস্য সচিব অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমান বলেছেন, দ্বিতীয় ডোজ দে’য়ার পর যারা বাকি থাকবেন, তাদের কবে টিকা দেয়া যাবে, সেটা নির্ভর করবে টিকা হাতে পাওয়ার ওপরে। আমরা আশা করছি, তাদের টিকার কার্যকারিতা সময়ের মধ্যে টিকা আসবে।
কোভিশিল্ডের প্রথম ডোজ নিয়ে কি অন্য টিকা নেয়া যাবে?
সূত্র মতে, এখন বিশ্বে যেসব ট্রায়াল চলছে, সেখানে দুই ধরনের দুইটি টিকা নে’য়ার পরীক্ষাও করা হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত দুই কোম্পানির দুই ডোজ টিকা নে’য়ার ব্যাপারে সুপারিশ করার মতো পর্যাপ্ত তথ্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হাতে নেই। তবে এখন পর্যন্ত এটাই সুপারিশ করা হচ্ছে যে, যারা প্রথম ডোজ যে টিকা নিয়েছেন, দ্বিতীয় ডোজও সেটা নেবেন।
এছাড়া, দুই কোম্পানির দুইটি আলাদা ডোজ নেয়ার বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছে বাংলাদেশের করোনাভাইরাস প্রতিরোধে গঠিত বিশেষজ্ঞদের পরামর্শক কমিটি। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমান বলছেন, বিশেষজ্ঞ কমিটি এক টিকার সঙ্গে অন্য টিকা নেয়ার বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছেন। ফলে যারা কোভিশিল্ড পেয়েছেন, তারা সেটাই পাবেন।
ভিন্ন উৎস থেকে টিকা সংগ্রহের চেষ্টা
সিরাম ইন্সটিটিউটে তৈরি অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কোভিশিল্ডের ওপর নির্ভর করেই বাংলাদেশ টিকা দেয়ার কার্যক্রম শুরু করলেও সম্প্রতি ভারতে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় অদূর ভবিষ্যতে দেশটি থেকে টিকা আসার সম্ভাবনাও নাকচ করে দেয়া হয়েছে। যে কারণে বাংলাদেশে দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেয়ার ক্ষেত্রে প্রায় ১৩ লাখ ডোজ টিকার ঘাটতি রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল বাসার মোঃ খুরশিদ আলম।
ইতোমধ্যেই সরকার প্রথম ডোজের টিকা দেয়া এবং নিবন্ধন কার্যক্রমও স্থগিত করে দিয়েছে। এখন শুধুমাত্র দ্বিতীয় ডোজের টিকা দে’য়া হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, টিকার চালান চুক্তি মতো আমাদের হাতে এসে পৌঁছায়নি। যে কারণে আপাতত যাদের নিবন্ধন করা আছে তাদেরই টিকা দেয়া শেষ করতে চাই আমরা।
এদিকে, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এক থেকে দুই কোটি ডোজ করোনাভাইরাসের টিকা চাওয়া হয়েছে। এর মধ্যে দেশের চলমান টিকা কার্যক্রম চালিয়ে নেয়ার জন্য দ্রুততম সময়ের মধ্যে অন্তত ৪০ লাখ ডোজ অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকা চাওয়া হয়েছে বলে জানা যায়। যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হচ্ছে।
পাশাপাশি বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ আশা করছে, মে মাসের মধ্যেই রাশিয়া এবং চীন থেকে টিকা আনা সম্ভব হবে। রাশিয়া, চীন থেকে টিকা আনার ব্যাপারে সরকার যোগাযোগ শুরু করেছে। এছাড়া বাংলাদেশের একটি ফার্মাসিউটিক্যালস মডার্নার ভ্যাকসিন আমদানি করার জন্যও আবেদন করেছে।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৭৪৯
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ