করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে আরও তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময়ে নতুন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন ১৩৬ জন। শনাক্তের হার আগের দিনের চেয়ে বেড়ে সাড়ে ১৪ শতাংশ হয়েছে। আগের দিন শনাক্ত হার ছিল ১০ শতাংশ। এদিকে চট্টগ্রামে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ১২ হাজার ৫৮৫ জন রোগীর বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে কোনো তথ্য নেই স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে।
চট্টগ্রামে শনাক্তের হার সাড়ে ১৪ শতাংশ
চট্টগ্রামে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আরও ৩ ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে নতুন করে ১৩৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার সাড়ে ১৪ শতাংশ। এ নিয়ে চট্টগ্রাম জেলায় মোট মৃতের সংখ্যা ৫৫৫ জনে দাঁড়াল এবং শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫১ হাজার ১৯ জনে।
শনিবার (৮ মে) চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা গেছে।
সিভিল সার্জন ডা. শেখ ফজলে রাব্বি জানান, গতকাল (শুক্রবার) চট্টগ্রামের বিভিন্ন ল্যাবে ৯৩৬ নমুনা পরীক্ষায় ১৩৬ জনের দেহে করোনার জীবাণু শনাক্ত হয়। এদের মধ্যে নগরের ১০১ জন এবং উপজেলার ৩৫ জন।
জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবে ৩৭ জন, ফৌজদারহাট বিআইটিআইডি ল্যাবে ৪৩ জন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ল্যাবে তিনজন এবং চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ইউনিভার্সিটি ল্যাবে ৩৪ জনের শরীরে করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়।
একই সময়ে ইমপেরিয়াল হাসপাতাল ল্যাবে নয়জন, মা ও শিশু হাসপাতাল ল্যাবে সাতজন এবং মেডিকেল সেন্টার হাসপাতাল ল্যাবে তিনজনের শরীরে করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়।
চট্টগ্রামে আগের ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছিল ১০৮ জন। শনাক্তের হার ১০ শতাংশ। তখন তিন ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিলেন।
এর আগে চট্টগ্রামে গত বছরের ৩ এপ্রিল প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এরপর ৯ এপ্রিল প্রথম একজন রোগী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে দেশব্যাপী ঘোষিত কঠোর লকডাউনের পর গতকাল চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়েছে একাধিক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এসব অভিযানে ১৮ মামলায় মোট পাঁচ হাজার ৯০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। একই সঙ্গে সচেতনতার জন্য ৩০০ পিস মাস্কও বিতরণ করা হয়।
খোঁজ নেই সাড়ে ১২ হাজার ‘পজিটিভ’ রোগীর
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ১২ হাজার ৫৮৫ জন রোগীর বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে কোনো তথ্য নেই স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে। জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের পক্ষ থেকে এই বিশাল সংখ্যক রোগী চিকিৎসাধীন আছে দাবি করা হলেও তারা কোথায় চিকিৎসা নিচ্ছেন সে বিষয়ে কোনো তথ্য নেই। তারা কি বর্তমানে করোনা পজিটিভ নাকি নেগেটিভ তাও জানেন না তারা।
চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে ২০২০ সালের ৩ এপ্রিল প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। চলতি বছরের ৪ এপ্রিল পর্যন্ত এক বছরে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৫০ হাজার ৪৭৮ জন। আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ৫৪০ জন। সুস্থ হয়েছেন ৩৬ হাজার ৭২৪ জন। এ অবস্থায় বাকি ১২ হাজার ৫৮৫ জন রোগী কি অবস্থায় আছেন সে তথ্য স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে জানা যায়নি।
যদিও ৪ মে ২০২১ সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে সরবরাহ করা তথ্যে জানানো হয়েছে, বর্তমানে চট্টগ্রামের সরকারি-বেসরকারি ২৭টি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৬০৯ জন। হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন ২০ জন করোনা রোগী। আইসোলেশনে কেউ নেই। তাহলে কেন চট্টগ্রামে সাড়ে ১২ হাজার রোগীকে পজেটিভ দেখানো হচ্ছে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন শেখ ফজলে রাব্বি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, ‘একজন রোগী সুস্থ হতে প্রায় ৩ সপ্তাহ সময় লেগে যায়, এ কারণে চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা বেশি দেখাচ্ছে।’
তবে ভুক্তভোগীরা বলছেন, একসময় বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নেওয়া রোগীদের বিষয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে মোবাইলে তদারকি করা হলেও বর্তমানে তা নেই। তাই পজেটিভ রোগীর বিষয়ে জানা গেলেও সুস্থ হওয়া বা করোনায় মৃতদের সঠিক হিসেব স্বাস্থ্য বিভাগের হাতে নেই।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী বলেন, ‘এখানে উভয় পক্ষের দায় আছে। অনেক সময় রোগীরা করোনা চিকিৎসার জন্য সঠিক মোবাইল নম্বরটি দেন না অথবা ফোন বন্ধ রাখেন। আবার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের অবহেলার কারণেও মাঠ থেকে সঠিক তথ্যটি উঠে আসছে না। এ কারণে করোনা পরিস্থিতির সঠিক চিত্র আমাদের সামনে আসছেনা।’
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮৪৮
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ