ঈদের আগে বেতন-বোনাসের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে পোশাক করাখানার শ্রমিকরা। আজ শনিবার(৮ মে) মিরপুর ও আশুলিয়ায় পোশাক করাখানার শ্রমিকরা এ বিক্ষোভ করেন।
মিরপুরে শ্রমিকদের বিক্ষোভ
ঈদের আগে বেতন-বোনাস পরিশোধ, এক সপ্তাহের ছুটি ঘোষণা ও শ্রমিকদের বাড়ি যেতে দূরপাল্লার পরিবহন চালুর দাবিতে মিরপুরে বিক্ষোভ করেছে পোশাক শ্রমিকরা।
আজ শনিবার (৮ মে) সকাল থেকে মিরপুর ১৪ নম্বর ও ১০ নম্বর সেকশনের বাসস্ট্যান্ডে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন তারা।
জানা গেছে, মিরপুরের প্রায় ৩০টি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা এক হয়ে আন্দোলনে নেমেছেন। দাবি আদায় হওয়া না পর্যন্ত এ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলে জানান তারা।
বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা জানান, ঈদের আর মাত্র ৫ দিন বাকি থাকলেও এখন পর্যন্ত তাদের বেতন-বোনাস দেওয়া হয়নি। বন্ধের এক বা দুই দিন দিন আগে বেতন-বোনাস দিলে ঈদের কেনাকাটা করা সম্ভব হবে না।
শ্রমিকরা আরো জানান, ঈদের ছুটি তিন দিন করা হয়েছে। এসময়ের মধ্যে পরিবার-পরিজনের কাছে যাওয়া সম্ভব না। একারণে ঈদের ছুটির তিন দিনের বদলে সাত দিন করতে হবে। কেননা, তারা ছুটিতে বাড়ি যেতে চান। বাড়ি যাওয়ার জন্য গণপরিবহন চালু রাখার দাবিও জানান শ্রমিকরা।
কাফরুল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি আজিজ গণমাধ্যমকে বলেন, বেতন-বোনাস ও ছুটি বাড়ানোর দাবিতে মিরপুরে রাস্তায় অবস্থান নিয়ে শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেন। কিছু সময় সড়ক আটকে তারা অবস্থান করে। তবে আমরা শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে তাদেরকে বুঝিয়ে কাজে ফেরানোর চেষ্টা করছি। অনেকেই রাস্তা ছেড়ে চলে গেছেন। কয়েকজন এখনও অবস্থান করছেন। তবে এখন যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। এছাড়া গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমরা কথা বলছি।
আশুলিয়ায় শ্রমিকদের বিক্ষোভ
সাভারের আশুলিয়ায় একটি পোশাক কারখানায় দুই শ্রমিককে মারধরের প্রতিবাদে কাজ বন্ধ করে কারখানার সামনে বিক্ষোভ করেছেন শ্রমিকরা। শনিবার (০৮ মে) দুপুরে আশুলিয়ার জিরাবো এলাকার ফাইভ এফ অ্যাপারেলস কারখানায় এ ঘটনা ঘটে।
শ্রমিকরা জানান, এই কারখানায় প্রায় এক হাজার শ্রমিক দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছে। ঈদের ছুটি কবে থেকে ও বেতন কবে দেওয়া হবে জানতে চাইলে আজ দুই শ্রমিককে মারধর করা হয়। এই খবর কারখানায় ছড়িয়ে পড়লে শ্রমিকরা কাজ বন্ধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন।
মারধরের শিকার শ্রমিক শারমিনের স্বামী সাদ্দাম একই কারখানায় কাজ করেন। সাদ্দাম গণমাধ্যমকে বলেন, গত মার্চ মাসের ওভারটাইমের টাকা বাকি রেখেছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। এই টাকা ঈদের বোনাসের সঙ্গে দেওয়ার কথা ছিল গত বৃহস্পতিবার (০৬ মে)। ওইদিন বোনাস ও ওভারটাইমের টাকা না দিলে শ্রমিকরা এর কারণ জানতে চান। যেসব শ্রমিক টাকা চেয়েছিল তাদের আজ ডেকে নিয়ে বিভিন্ন অপবাদ দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, আমার স্ত্রী শারমিন এই কারখানায় দীর্ঘদিন ধরে অপারেটর হিসেবে কাজ করেন। গত বৃহস্পতিবার টাকা চাওয়ায় আজ তাকে অ্যাডমিনের রুমে ডেকে নেওয়া হয়। পরে পোশাক চুরির অপবাদ দিয়ে তাকে চাকরিচ্যুত করার পাঁয়তারা করে কারখানা কর্তৃপক্ষ। এ সময় আমার স্ত্রীকে রিজাইন করতে বলা হয়। আমার স্ত্রী এতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে চড়-থাপ্পড় মারা হয়। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে শ্রমিকরা বিক্ষোভ শুরু করেন। বর্তমানে কারখানায় মিটিং চলছে আর শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন করছেন।
স্বাধীন বাংলা গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের আশুলিয়া থানা কমিটির সভাপতি আল-কামরান বলেন, আমরা কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বলে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছি। আশা করি বিষয়টি সমাধান হয়ে যাবে।
শ্রমিকদের দাবি পূরণের আশ্বাস
মিরপুরে আন্দোলনরত গার্মেন্টস শ্রমিকদের দাবি আদায়ে মালিকপক্ষ আলোচনায় বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আলোচনার মাধ্যমে শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া পূরণ করার চেষ্টা করা হবে বলে জানা গেছে। এই আশ্বাসে আন্দোলন স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
শনিবার (৮ মে) দুপুরে গ্রিনবাংলা গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি সুলতানা বেগম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ঈদের আগে শ্রমিকরা রাস্তায় নেমে আন্দোলন করুক আমরা সেটি চাই না। আমরা তাদের দাবি-দাওয়া বিষয়ে গার্মেন্টস মালিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। শ্রমিকদের দাবি বাস্তবায়নে মালিক, শ্রমিক ও বিজিএমইএ’র সদস্যরা মিলে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে বসার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘একটি স্থানের শ্রমিকদের আন্দোলন শুরু হলে দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। ঈদের আগে দেশের আইন-শৃঙ্খলা ও সামাজিক পরিস্থিতি বিশৃঙ্খল না হয় সে কারণে শ্রমিকদের আন্দোলনের কথা শুনে আমরা ছুটে এসেছি।’
ত্রিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে শ্রমিকদের দাবি কিভাবে বাস্তবায়ন করা যায় সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
আন্দোলনকারীরা বলেন, শ্রমিক ফেডারেশনের অনুরোধে আমরা আন্দোলন ছেড়ে কর্মস্থলে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। গার্মেন্টসের মালিকরা বসে শ্রমিকদের দাবি দাওয়া কীভাবে বাস্তবায়ন করবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে বলে আমাদের জানানো হয়েছে। সে কারণে আমরা আন্দোলন স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
শ্রমিকরা আরও বলেন, আজকের মধ্যে তাদের দাবি বাস্তবায়ন না হলে আগামীকাল থেকে আবারও একযোগে রাজপথে নেমে আন্দোলন শুরু করবেন তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/ ১৬৫৩
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ