
বিশ্বে ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের নিকট রমজান মাস কতটা পবিত্র ও সংযমের, তা নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। দারিদ্রপীড়িত অনাহারি মানুষের সাথে একাত্ম হতে শিক্ষা দেয় এই রমজান। সেখানে মানুষ হত্যার তো প্রশ্নই আসে না। এই পবিত্র রমজান মাসেও ইসলাম ধর্মের তীর্থদেশ হিসাবে খ্যাত ও সম্মানিত সৌদি আরব মানুষ হত্যার কাজ করে যাচ্ছে নির্দ্বিধায়। দারিদ্র্যপীড়িত ইয়েমেনের ওপর সৌদি আরবের বর্বর আগ্রাসন পবিত্র রমজান মাসেও অব্যাহত রয়েছে।
গতকাল শুক্রবার(৭ মে) দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় মা’রিব প্রদেশে মাজযার এলাকার একটি গ্রামে ইয়েমেনে সৌদি জোটের বিমান হামলায় অন্তত ৭ বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং আরও তিনজন আহত হয়েছেন।
ইয়েমেনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সাবা জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক কুদস দিবস উপলক্ষে ইসরায়েল-বিরোধী একটি সমাবেশের প্রস্তুতির সময় সাহারি গ্রামে হামলা চালায় সৌদি বিমান বাহিনী।
পার্সটুডের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতি বছর পবিত্র রমজান মাসের শেষ শুক্রবার কুদস দিবস পালিত হয়। এদিন ইরান-ইয়েমেনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নানা ধরনের সভা-সমাবেশ, সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।
ইরানে ইসলামী বিপ্লব সফল হওয়ার পর বিপ্লবের নেতা ইমাম খোমেনী এই দিবস ঘোষণা করেন। এর পর থেকে বিশ্বের মুসলমানরা দখলদার ইসরায়েলের কবল থেকে পবিত্র বায়তুল মুকাদ্দাস মুক্ত করার লক্ষ্যে কুদস দিবস পালন করে আসছেন। দিনটিতে বিশ্বব্যাপী নানা ধরনের সভা-সমাবেশ, সেমিনার ও সিম্পোজিয়ামের আয়োজন করা হয়ে থাকে।
কুদস দিবসের সমাবেশে অংশ নেয়ার জন্য জড়ো হওয়া লোকজনের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়ে ইয়েমেনের এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেছেন, এর মধ্য দিয়ে সৌদি আরব তার ইসরায়েলি চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার(৬ মে) ইয়েমেনের সা’দা প্রদেশে সৌদি কামান হামলায় তিন বেসামরিক ব্যক্তি নিহত ও চার জন আহত হয়েছে।
আল-মাসিরা টিভি চ্যানেল জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার ভোরে সৌদি বাহিনী ইয়েমেনের সা’দা প্রদেশের আর-রাকু এলাকায় কামানের গোলাবর্ষণ করেছে। এর ফলে হতাহতের এ ঘটনা ঘটেছে।
ইয়েমেনের বিভিন্ন স্থানে বিমান হামলার পাশাপাশি কামানের সাহায্যে আক্রমণ চালায় সৌদি বাহিনী।
এর আগে গত ১৪ এপ্রিল বুধবার সৌদি জঙ্গিবিমান ইয়েমেনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সা’দা প্রদেশের মোনাবেহ এলাকায় বোমা হামলা চালায়। এতে অন্তত দুই শিশু নিহত এবং চারজন আহত হয়েছেন।
সৌদি লিকস নামে একটি নিউজ ওয়েবসাইট এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ভুয়া অজুহাত তুলে সৌদি সরকার ইয়েমেনের শত শত নাগরিককে দেশে ফিরতে দিচ্ছে না। এর মধ্যে বহু নারী ও শিশু রয়েছে।
সংস্থাটি এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছে যে, যেসব ইয়েমেনি নাগরিক সৌদি আরব থেকে ফোর হুইল ড্রাইভ গাড়ি নিয়ে সীমান্ত পেরিয়ে ইয়েমেনে যেতে চাইছেন তাদেরকে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হচ্ছে না। বলা হচ্ছে- এসব গাড়ি তারা দেশে ফিরে হুথি যোদ্ধাদের কাছে বিক্রি করে দেবে। ইয়েমেনের পলাতক প্রেসিডেন্ট আবদু রাব্বু মানসুর হাদি ফোর হুইল ড্রাইভ গাড়ি নিয়ে কোনো ইয়েমেনি নাগরিককে দেশে ফেরার অনুমতি না দিতে সৌদি সরকারকে সুপারিশ করেছে। তার পারমর্শ মতো সৌদি সরকার এ পদক্ষেপ নিয়েছে।
প্রায় ছয় বছর আগে ইয়েমেনে ইরান-সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীদের দমনের লক্ষ্যে এক ‘অসম’ যুদ্ধ শুরু করে সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট। এ লড়াইয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ইয়েমেনের হাজার হাজার নিরীহ মানুষ, ঘরছাড়া হয়েছেন কয়েক লাখ। ধ্বংস হয়ে গেছে অসংখ্য ঘরবাড়ি ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো।
জাতিসংঘের মতে, বিশ্বে গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক সংকট তৈরি হয়েছে ইয়েমেনে। দেশটির ৮০ শতাংশ মানুষেরই জরুরি ত্রাণ সহায়তা প্রয়োজন বলে জানিয়েছে তারা।
এদিকে, আমেরিকাভিত্তিক অলাভজনক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘আর্মড কনফ্লিক্ট লোকেশন অ্যান্ড ইভেন্ট ডাটা প্রজেক্ট’ বলছে, ২০১৫ সালের মার্চ মাস থেকে শুরু হওয়া সৌদি আরবের আগ্রাসনে এ পর্যন্ত ইয়েমেনের এক লাখ মানুষ নিহত হয়েছে।
ইয়েমেন মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম দরিদ্র দেশ। ইউএনডিপির দেওয়া সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, বর্তমান গৃহযুদ্ধ যদি ২০২২ সাল পর্যন্ত চলে, তবে ইয়েমেন পৃথিবীর সবচেয়ে দরিদ্র দেশে পরিণত হবে। তখন দেশটির মোট জনসংখ্যার ৭৯ শতাংশ চলে যাবে দারিদ্র্যসীমার নিচে।
অন্যদিকে গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট অনুযায়ী, লৈঙ্গিক সমতার দিক থেকে ইয়েমেনে নারীদের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ।
চলমান যুদ্ধে ঘরছাড়া হয়েছে ইয়েমেনের লাখ লাখ মানুষ। সংঘাতে ঘর ছেড়েছে দেশটির ৩৩ লাখেরও বেশি মানুষ।
এক কথায়, যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেনে মানুষের জীবনের দামই সবচেয়ে সস্তা। এর চেয়ে ঢের দামি বুলেট-বোমা!
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৫৫৯
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ