আমাদের একটি সরকার প্রয়োজন। জরুরিভিত্তিতে। আমাদের কোনো সরকার নেই এখন। আমাদের বাতাস ফুরিয়ে যাচ্ছে। আমরা মারা যাচ্ছি। সহায়তা পেলেও তা দিয়ে কী করতে হবে, এটা জানার মতো কোন সিস্টেম কার্যকর নেই এখানে।
কী করা যেতে পারে? ঠিক এখানে, ঠিক এই মুহূর্তে?
২০২৪ সাল অব্দি আমরা অপেক্ষা করতে পারব না। আমার মতো মানুষ কখনও কল্পনাও করেনি যে কোনদিন আমাদের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে কিছু চাইতে হবে। ব্যক্তিগতভাবে, এর চেয়ে আমি জেলে যেতে পছন্দ করব আমি। কিন্তু আজ, যেহেতু আমরা ঘরে, রাস্তাঘাটে, হাসপাতালে, গাড়ি পার্কে, বড় শহরে, ছোট শহরে, গ্রামে, জঙ্গলে, ক্ষেতে মরতে বসেছি- আমি, একজন সাধারণ নাগরিক, আমার আত্মসম্মান জলাঞ্জলি দিয়ে লাখো নাগরিকের সাথে এককন্ঠে বলতে চাই, দয়া করুন, সরে দাঁড়ান। অন্তত এই মুহূর্তের জন্য। আমি অনুরোধ করছি, আপনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান।
এটা আপনার তৈরি করা সংকট। আপনি এর সমাধান করতে পারবেন না। আপনি এটাকে আরও ভয়াবহতার দিকে নিয়ে যাবেন। এই ভাইরাস ভয়, ঘৃণা এবং অবজ্ঞার পরিবেশে বেড়ে যায়। এই ভাইরাস আরও ভয়াবহ হয় যখন কেউ কথা বললে আপনি তাদের প্রতিহত করেন। এই ভাইরাস আরও মারাত্মক হয়ে ওঠে, যখন আপনি গণমাধ্যমকে এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করছেন যে প্রকৃত সত্য কেবল আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে দেখা যায়। এই ভাইরাস তখন বৃদ্ধি পায়, যখন আমাদের এমন একজন প্রধানমন্ত্রী আছেন, যিনি অফিসে এতগুলো বছরেও একবারও সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেননি। এমনকি এই ভয়াবহ মুহূর্তেও যিনি প্রশ্নের সম্মুখীন হতে অক্ষম।
যদি আপনি না যান, তাহলে বিনা কারণে আমাদের লাখ লাখ মানুষ মারা যাবেবে। তাই এখনই যান। ঝোলা উঠিয়ে যান। আপনার মর্যাদা অক্ষুন্ন থাকতে থাকতে যান। আপনার সামনে সুন্দর একটা জীবন পড়ে আছে, ধ্যান এবং নির্জনতার। আপনি নিজেই বলেছেন, এমনটা চান আপনি। কিন্তু যদি এভাবে মানুষকে মরতে দিতে থাকেন, তাহলে সেটাও সম্ভব হবে না।
এই মুহূর্তে আপনার জায়গা নে’য়ার মতো বহু মানুষ আছে আপনার দলে। যারা জানে সংকটের এই সময়ে রাজনৈতিক বিরোধীদের সাথে নিয়েই কাজ করতে হয়। সেই ব্যক্তিটি আপনার দলের যেই হোক না কেন, রাষ্ট্রীয় স্বেচ্ছাসেবক সংঘের অনুমোদন নিয়ে, সরকার এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির প্রধান হতে পারেন।
সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা কয়েকজন প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারেন, যাতে সব দলই প্রতিনিধিত্ব করতে পারবে। জাতীয় দল হিসেবে কংগ্রেসও এই কমিটিতে থাকতে পারে। এবং এরপর বিজ্ঞানী, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, চিকিৎসক, অভিজ্ঞ আমলারাও থাকবেন। আপনি সম্ভবত এটা বুঝবেন না, কিন্তু এটাকেই গণতন্ত্র বলে। আপনি ‘বিরোধী-মুক্ত গণতন্ত্র’ কখনওই পাবেন না। সেটাকে বলে স্বৈরাচার। এই ভাইরাস স্বৈরাচারীদের ভালোবাসে।
যদি এখন আপনি এটা না করেন, যেহেতু এই প্রাদুর্ভাবকে ক্রমবর্ধমানভাবে আন্তর্জাতিক সমস্যা হিসেবে দেখা হচ্ছে, বিশ্বের জন্য হুমকি হিসাবে দেখা হচ্ছে- আপনার অক্ষমতার জন্য অন্যান্য দেশ আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার অনৈতিক সুযোগ পাচ্ছে, তারা আমাদের নিয়ন্ত্রণ নে’য়ার চেষ্টা করছে। এর ফলে অনেক কষ্টে অর্জিত এই সার্বভৌমত্বের সাথে আমাদের আপস করতে হবে। আমরা আবারও ঔপনিবেশিক শাসনে চলে যাবো। এর মারাত্মক সম্ভাবনা আছে। বিষয়টিকে উপেক্ষা করবেন না।
সুতরাং দয়া ক’রে আপনি যান। এটাই সবচেয়ে দায়িত্বশীল কাজ হবে আপনার জন্য। আমাদের প্রধানমন্ত্রী হয়ে থাকার নৈতিক অধিকার আপনি হারিয়েছেন।
[করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিপর্যস্ত ভারত মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে । করোনা মহামারি প্রতিরোধে ভারতের রাজনৈতিক সরকারের ব্যর্থতার কঠোর সমালোচনা করে ভারতীয় গণমাধ্যম Scroll.in এ লিখেছেন অরুন্ধতী রায়। স্টেটওয়াচের পাঠকদের জন্য ছোট প্রবন্ধটি বাংলায় অনুবাদ করা হল।]
এসডব্লিউ/অনুবাদ/এসএস/১৪৫১
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ