ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোতে করোনা শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ও মৃত্যু দুটোই হু হু করে বাড়ছে। দেশটির মহামারী এখন ক্রমশ পূর্ব দিকে এগোচ্ছে বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সতর্ক করে দিয়েছে। এতে আতঙ্ক বাড়ছে বাংলাদেশের। দেশে ভারতফেরতদের সংখ্যাও বাড়ছে ক্রমে।
বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী ভারতীয় রাজ্যগুলোতে বাড়ছে করোনা
আসাম, পশ্চিমবঙ্গ, ওডিশা, ঝাড়খণ্ড ও বিহার- পূর্ব ভারতের এই পাঁচটি রাজ্যের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে রাজ্যগুলোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে আপদকালীন বৈঠকের পরই দিল্লিতে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোতে করোনা শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ও মৃত্যু দুটোই হু হু করে বাড়ছে। দেশটির মহামারী এখন ক্রমশ পূর্ব দিকে এগোচ্ছে।
বিবিসি জানায়, এরই পরিপ্রেক্ষিতে ওই রাজ্যগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে নেওয়া হচ্ছে নানা ব্যবস্থাও।
দক্ষিণ, পশ্চিম বা উত্তর ভারতের তুলনায় পূর্ব ভারতের পরিস্থিতি এতদিন কিছুটা ভালো ছিল। কিন্তু তা ক্রমশ খারাপের দিকে যাচ্ছে ইঙ্গিত পাওয়ার পরই বুধবার বিকেলে পূর্বের পাঁচটি রাজ্যের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের শীর্ষস্থানীয় আমলা ও বিশেষজ্ঞরা।
পরে রাতে দিল্লিতে জারি করা এক বিবৃতিতে কেন্দ্রীয় সরকার বলেছে, ‘যাবতীয় সাক্ষ্যপ্রমাণ এদিকেই দিকনির্দেশ করছে যে, কোভিড মহামারী এখন ক্রমশ পূর্ব দিকে এগোচ্ছে।’
‘দেশের (পূর্ব প্রান্তের) এই রাজ্যগুলোতে দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে, যেমন বাড়ছে মৃত্যু হারও’ বলা হয় বিবৃতিতে।
বিহারে সোমবারেও মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছিল সাড়ে ১১ হাজার। গত মাসের শেষ সপ্তাহেও সেই গড় ছিল দশ হাজারের নিচে। অথচ বৃহস্পতিবার সেই সংখ্যা প্রায় ১৫ হাজারে পৌঁছেছে। রাজ্যে ১৫ মে পর্যন্ত জারি করা হয়েছে লকডাউন।
আসামে সপ্তাহদুয়েক আগেও দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ছিল এক হাজারের নিচে। এখন তা পাঁচ হাজারের কাছাকাছি গিয়ে ঠেকেছে।
পশ্চিমবঙ্গেও মাত্র দিনদশেক আগেও প্রতিদিন ১০-১২ হাজার করে নতুন কোভিড রোগী শনাক্ত হচ্ছিলেন। এখন সেখানেও দৈনিক সংক্রমণ ১৮ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় শুক্রবার জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে ৪ লাখ ১৪ হাজার ১৮৮ জন সংক্রমিত হয়েছেন যা একদিনে আক্রান্তের হিসাবে সবচেয়ে বেশি। মোট আক্রান্ত দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ১৪ লাখ ৯১ হাজার ৫৯৮ জনে।
এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো ভারতে দৈনিক সংক্রমণ ৪ লাখের গণ্ডি পার করেছে। আর ৪ লাখ সংক্রমণের নজির বিশ্বে কেবল ভারতেরই রয়েছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৩ হাজার ৯১৫। এ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৩৪ হাজার ৮৩ জনে।
বাংলাদেশে ভারতফেরতদের সংখ্যা বাড়ছেই
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গতকালের তথ্য অনুযায়ী আগের ২৪ ঘণ্টায় বাংলাদেশের স্থলবন্দর দিয়ে ৪৮০ জন দেশে প্রবেশ করেছেন। এর আগের দিন এ সংখ্যা ছিল ৩২৫ জন। এছাড়া প্রতিদিন বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে দেশে চার থেকে পাঁচশ’ পণ্যবাহী ট্রাক প্রবেশ করছে। এসব ট্রাকপ্রতি দু’তিনজন চালক ও সহকারী প্রবেশ করছেন। তাদের মাধ্যমেও সংক্রমণ ছড়ানোর ঝুঁকি রয়েছে বলে জনস্বাস্থ্যবিদরা আশঙ্কা করছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে খ্যাতিমান সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ও বিএসএমএমইউ’র সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ডা. নজরুল ইসলাম জাতীয় এক দৈনিককে বলেন, ‘ভারতের সংক্রমণের প্রভাব নেপালে পড়েছে, শ্রীলঙ্কায়ও পড়ছে। আমাদের এখানেও এর প্রভাব পড়বে। তবে নেপালে বিপর্যয় নেমে আসার কারণ হলো তারা ভারতের সঙ্গে সীমান্ত খোলা রেখেছে।’
বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ভারতের সঙ্গে সব সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে, এরপরও দেশে ভারতের সংক্রমণের প্রভাব কেন পড়বে, জানতে চাইলে এই ‘ভাইরোলজিস্ট’ বলেন, ‘আমাদের প্রায় সবদিকেই ভারতের সীমান্ত। তা বন্ধ থাকলেও নানাভাবে দুই দেশের মানুষ আসা-যাওয়া করে। অর্থাৎ সীমান্ত পুরোপুরি বন্ধ রাখা সম্ভব হয় না। এ কারণে একটু দেরিতে হলেও বাংলাদেশে ভারতের সংক্রমণের প্রভাব পড়বে।’
ভারতফেরত ১০ জন চট্টগ্রাম মেডিকেলে
ভারতে চিকিৎসা নিয়ে ফিরে আসা ১০ জন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ভারতফেরত এই ১০ জন চট্টগ্রাম জেলার অধিবাসী।
গতকাল বৃহস্পতিবার (৬ মে) দিনগত রাত তিনটার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের দুটি ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে তাদের। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চমেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই শীলব্রত বড়ুয়া।
তিনি বলেন, ভারতে চিকিৎসা শেষে ৪ মে যশোর বেনাপোল হয়ে বাংলাদেশে আসেন তারা। এরপর তাদের সবাইকে যশোর বক্ষব্যাধি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর সেখান থেকে সবাইকে যার যার জেলা হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তারই ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রামের ১০ জন চমেক হাসপাতালের কোয়ারেন্টাইন পালন করতে আসেন।
ভারতফেরত ১৪৫ যাত্রীর কোয়ারেন্টাইন ঝিনাইদহে
করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট রোধে ভারতফেরত ১৪৫ জনকে ঝিনাইদহের দুটি স্থানে বাধ্যতামূলক ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। তাদের বাড়ি চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, খুলনা, ফরিদপুর, রংপুর, বগুড়া ও রাজশাহী জেলায়।
গত শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তাদের যশোরে জায়গা দিতে না পেরে বেনাপোল থেকে পুলিশ পাহারায় ঝিনাইদহে এনে ঝিনাইদহ পিটিআই হোস্টেল ও এইড ফাউন্ডেশনের রেস্ট হাউজে রাখা হয়েছে।
ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান এ সব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, গত ছয় দিনে ঝিনাইদহে ১৪৫ জন ভারতফেরতকে আনা হয়েছে। করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট রোধে সরকার ভারত ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। সেখানে আটকে পড়া যাত্রীরা দেশে ফিরলে সরকারের পক্ষ থেকে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করা হয়।
কোয়ারেন্টাইনে থাকা ভারতফেরতদের জন্য মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে এবং চিকিৎসকরা নিয়মিত তাদের খোঁজখবর নিচ্ছেন বলেও জানান তিনি।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৫৩৫
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ