করোনাভাইরাসের টিকার মেধাস্বত্ত্ব ছাড়ে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার উদ্যোগের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। নিজ দলীয় সংসদ সদস্য ও শতাধিক দেশের চাপের মুখে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বুধবার এ সিদ্ধান্ত নেন। খবর বিবিসির।
এর মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার দীর্ঘদিনের নীতিতে ছাড় দিলো। তাতে স্বাভাবিকভাবেই ওষুধ কোম্পানিগুলো ক্ষুব্ধ হয়েছে। তবে এই সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে নিজের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি রক্ষা করলেন বাইডেন।
বিশ্বজুড়ে টিকার উৎপাদন বাড়াতে মেধাস্বত্ত্ব ছাড়ের এই উদ্যোগের প্রস্তাব দিয়েছিল ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা। কিন্তু এতে কাঙ্ক্ষিত ফল নাও আসতে পারে উল্লেখ করে বিরোধিতা করে ওষুধ কোম্পানিগুলো।
করোনা টিকার উপর থেকে মেধাস্বত্ত্ব ছাড় দেয়ার দাবিতে গত ছয় মাস ধরে সোচ্চার বহু দেশ। তবে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার নেতৃত্বাধীন দেশগুলো এই দাবি তোলার পর যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ, যুক্তরাজ্য ও ইইউ’র জোরালো বিরোধিতার মুখে পড়ে।
কিন্তু ট্রাম্পের উত্তরসূরী জো বাইডেন এবার উল্টোপথ ধরলেন। ২০২০ সালের নির্বাচনী প্রচারণার সময় মেধাস্বত্ত্ব ছাড়ের প্রতি যে সমর্থন দিয়েছিলেন বুধবার সেই সমর্থনের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।
এদিকে বাইডেনের এই ঘোষণার পর যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি ক্যাথরিন তাই এক বিবৃতিতে বলেন, বিশেষ সময়ে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ডাক আসে। তখন তাতে সাড়া দিতে হয়।
যদিও এখনই কার্যকর হচ্ছে না এই উদ্যোগ। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, এ বিষয়ে সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে ডব্লিওটিও সদস্য দেশগুলোর সময়ের প্রয়োজন হবে।
অন্যদিকে মার্কিন এই সিদ্ধান্তের পর মার্কেটে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হয়েছে। ইতোমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের ফাইজার ও মডার্নাসহ করোনা টিকার প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলোর শেয়ারে দরপতন হয়েছে।
মেধাস্বত্ত্ব ছাড়ের এই সিদ্ধান্তের ফলে বিশ্বজুড়ে টিকার উৎপাদন বাড়বে এবং দরিদ্র দেশগুলোর টিকাপ্রাপ্তির পথ আরও সুগম হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান ড. টেড্রস আধানম গেব্রিয়াসুস যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এটি যুক্তরাষ্ট্রের নৈতিক নেতৃত্বের প্রতিচ্ছবি।
তিনি বলেন, আসুন কোভিড মোকাবিলায় আমরা সবাই এক হই। যেই বিজ্ঞানীরা আমাদের জন্য কোভিড টিকা তৈরি করেছেন তাদেরকে আমরা ধন্যবাদ জানাই।
তিনি মার্কিন প্রশাসনের প্রশংসা করে বলেন, তাদের এই সিদ্ধান্তের কারণে বিশ্বের অনেক দেশই এখন কোভিড টিকা উৎপাদন করতে পারবে।
বিবিসি বলছে, মেধাস্বত্ত ছাড়ের এই পদক্ষেপ অনুমোদিত হলে টিকার উৎপাদন ব্যাপকভাবে বাড়ানো যাবে এবং দরিদ্র দেশগুলোকে সুলভ মূল্যে সরবরাহ করা যাবে বলে সমর্থকদের দাবি।
প্যাটেন্টসহ নানাভাবে মেধাস্বত্ত্ব সংরক্ষণের যে বিধি রয়েছে সেটাকে মহামারী মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় টিকা ও অন্যান্য পণ্যের ব্যাপক আকারে উৎপাদনের পথে বড় বাধা হিসেবে চিহ্নিত করেছে উন্নয়নশীল অনেক দেশ।
তবে ওষুধ কোম্পানিগুলোর মেধাস্বত্ত্ব ব্যবহার করে টিকা উৎপাদনে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সহায়তার লক্ষ্যে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার নেতৃত্বে মেধাস্বত্ত্ব ছাড়ের প্রস্তাব নিয়ে ডব্লিউটিওতে আলোচনার প্রস্তাবে সব সময় বাধা দিয়ে আসছিল যুক্তরাষ্ট্র।
তবে এই উদ্যোগকে ‘হতাশাজনক’ হিসেবে বর্ণনা করেছে ওষুধ প্রস্তুতকারক ও সমিতিগুলোর আন্তর্জাতিক ফেডারেশন।
জেনেভাভিত্তিক সংগঠনটি বলেছে, “ছাড় দেওয়া সহজ। কিন্তু জটিল সমস্যার জন্য ভুল সমাধান।”
জন হপকিন্স সেন্টার ফর হেলথ সিকিউরিটি জেষ্ঠ স্কলার ড. আমেশ আডালজা রয়টার্সকে বলেন, এই ছাড় আসলে সেই সব ওষুধ কোম্পানির স্বত্ত্বের ‘জবরদখল’, যাদের উদ্ভাবন ও বিনিয়োগের ফলে কোভিড-১৯ টিকার উদ্ভাবন সম্ভব হয়েছে।”
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩২২
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ