আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে সিংহভাগ লেনদেনই হয় মার্কিন ডলারে। অর্থ স্থানান্তরের প্রক্রিয়াতেও যেকোনো দেশের মুদ্রাকে ডলারে রূপান্তর করে লেনদেন করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তীব্র ভূ-রাজনৈতিক বিবাদে জড়িয়ে পড়ার পর থেকেই চীন তা এড়াতে চাইছে। চাইছে বিকল্প আর্থিক ব্যবস্থায় লেনদেন চালু করে ডলারের আধিপত্য হ্রাস করতে।
এজন্যেই বিশ্বের সবার আগে চীনকে ডিজিটাল মুদ্রা চালু করতে হবে। এমন উদ্দেশ্যই জানিয়েছে চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক— পিপলস ব্যাংক অব চায়না (পিবিওসি)। এশিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী আর্থিক খাত নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির নিজস্ব এক ম্যাগাজিনে প্রকাশিত মতামতমূলক নিবন্ধে একথা জানানো হয়।
চায়না ফাইন্যান্স নামক ম্যাগাজিনটির নিবন্ধে বলা হয়, ডিজিটাল মুদ্রা চালু করা এবং তা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ‘নতুন এক যুদ্ধক্ষেত্রের’ সূচনা হবে। বিশ্বের সব আত্মমর্যাদাসম্পন্ন ও স্বনির্ভর দেশ নাম লেখাবে এ প্রতিযোগিতায় ।
এদিকে গত বছরের শেষদিকে স্থানীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক পিপলস ব্যাঙ্ক অফ চায়না (পিবিওসি) দ্বারা পরিচালিত একটি ভার্চুয়াল মুদ্রা ডিজিটাল রেন্মিনবি (আরএমবি) বা ইউয়ান পুরো সাংহাইয়ে পৌঁছেছে। অন্যান্য বেশ কয়েকটি শহরে পরীক্ষা চালানোর পরে, এটি এখন নগরীর টং রেন হাসপাতালে ব্যবহার করা হচ্ছে, যা কর্মীদের ক্যান্টিনে তাদের খাবারের জন্য সহজ মাধ্যম হিসাবে ব্যবহার হচ্ছে।
যেমন হাসপাতালের একজন ডাক্তার হাসপাতালের ক্যান্টিন থেকে নিয়মিত সকালের নাস্তা কেনে। এখন তার এই সকালের নাস্তার টাকা পরিশোধের নতুন এক মাধ্যম হলো ডিজিটাল মুদ্রা কার্ড। এটি ঠিক একটি মেট্রোকার্ড ব্যবহার করার মতো। এটি সুবিধাজনক এবং ডাক্তার জানবে যে সে কতটা ব্যয় করেছে এবং কার্ডে কতটা অবশিষ্ট রয়েছে।
ডিজিটাল মুদ্রা হচ্ছে সেসব মুদ্রা, যা শুধু ভার্চুয়াল জগতে লেনদেন হয়। বাস্তবে যার কোনো অস্তিত্ব নেই। বিনিময়ের সব তথ্য গোপন থাকে, বেশির ভাগ সময়েই থাকে অজ্ঞাত। এ ধরনের ডিজিটাল মুদ্রাকে বলা হয় ক্রিপ্টোকারেন্সি।
বর্তমান প্রচলিত মুদ্রার যে অনলাইন লেনদেন হয় তার সঙ্গে ডিজিটাল মুদ্রার একটি পার্থক্য রয়েছে। যেমন বর্তমানে আমেরিকায় অনলাইনে কেনাকাটা হলেও বিল করা হয় ডলারে, কিন্তু ডিজিটাল মুদ্রার ক্ষেত্রে ডলার নয় বরং কার্ড ব্যবহার করে বিক্রেতার কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয় ডিজিটাল মুদ্রা।
ব্যাংক কার্ড যা ধারণ করে তা হ’ল ডিজিটাল আরএমবি বা ইয়ান— যা অন্যান্য ডিজিটাল মুদ্রার মতো নয়। তবে চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক নতুন এক পরীক্ষামূলক মুদ্রা ইস্যু করেছে। এর উন্নয়ন এবং প্রয়োগ ডিজিটাল অর্থনীতিতে বৈধ মুদ্রার চাহিদা মেটাতে সহায়তা করবে, পাশাপাশি খুচরা অর্থ প্রদানের সুবিধার্থে এবং সুরক্ষাও বাড়িয়ে তুলবে।
শেনজেন এবং সুজহু শহরেও ডিজিটাল মুদ্রার চেষ্টা করা হয়েছে, তবে সাংহাইয়ে টং রেন হাসপাতালের পরীক্ষা শহরটিতে প্রথম।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, আমরা প্রাথমিকভাবে আমাদের ২ হাজার কর্মীর জন্য অ্যাকাউন্ট খোলার পরিকল্পনা করছি। আমরা আশা করি যে অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুকিং এবং নিবন্ধকরণের জন্য মুদ্রাটি জনসাধারণের ব্যবহারে আসতে পারে।
চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডিজিটাল মুদ্রার ব্যবহার প্রসারিত করতে ২০ টিরও বেশি বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং ই-কমার্স সংস্থার সাথে কাজ করছে।
ই-আরএমবি হিসেবে পরিচিত সেনঝেন, সুজোও, চেংদুসহ কয়েকটি শহরে এই নতুন ডিজিটাল মুদ্রার পরীক্ষামূলক আদানপ্রদান প্রথমে শুরু হবে। এ ছাড়াও দক্ষিণ বেইজিং, সিওঙআন শহরেও এই ডিজিটাল মুদ্রা চালু করা হবে। এই শহরগুলোতে ২০২২ সালে বেইজিং উইন্টার অলিম্পিকসের কয়েকটি ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।
এই ডিজিটাল মুদ্রা কিছু সরকারি কর্মচারীদের এপ্রিল-মাসের বেতন প্রদানের জন্য ব্যবহৃত হবে। সুজোও শহরে ভর্তুকিযুক্ত বাস পরিষেবার এই মুদ্রা লেনদেন হবে, কিন্তু সিওঙআন শহরে খাদ্যসামগ্রী ও খুচরা ক্রয়-বিক্রয়ে এই মুদ্রা ব্যবহারের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।
এছাড়াও গ্লোবাল গভর্নমেন্ট ফোরাম নামের একটি অনলাইন পোর্টাল জানিয়েছে, ম্যাকডোনাল্ডস, স্টারবাকস এবং সাবওয়েসহ ১৯টি খুচরা বিক্রেতাদের জিয়নগানের নতুন অঞ্চলে ডিজিটাল ইউয়ান পরীক্ষা করার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। তবে স্টারবাকস সরাসরি না করে দিয়েছে। কিন্তু অন্যগুলোর খবর এখনো পাওয়া যায়নি।
চীনের পিপলস ব্যাংক অব চায়না এক বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, স্বল্প মেয়াদে ব্যবহারের জন্য খুব বড় মাত্রায় এই ডিজিটাল মুদ্রা বাজারে ছাড়া হবে না। আপাতত বাজারে যে অঙ্কের ডিজিটাল মুদ্রার জোগান রয়েছে তাতে মুদ্রাস্ফীতি হওয়ার তেমন আশঙ্কা নেই।
পিবিওসি এবং অ্যান্ট গ্রুপ লুজিয়াজুই শহরের আর্থিক কেন্দ্রের চায়ের দোকানে পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে। যদিও চীনের ডিজিটাল মুদ্রার পরীক্ষাগুলো এখনো আহামরি পর্যায়ে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেনি, তবে বিশ্বব্যাপী মনোযোগ কাড়ছে।
ওরিয়েন্ট সিকিওরিটির প্রধান অর্থনীতিবিদ বলেন, বিশ্বব্যাপী অনেক অর্থনীতি ডিজিটাল মুদ্রাগুলি অনুসন্ধান করছে, বিশেষ করে উত্তর ইউরোপে। বিশ্বব্যাপী এটির এখন ট্রেন্ড চলছে। চীনের মতো বৃহৎ অর্থনীতির জন্য মুদ্রাকে আন্তর্জাতিকীকরণ করার তাগিদে এই প্রচেষ্টা অবশ্যই প্রয়োজন এবং জরুরি।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩২৬
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ