দীর্ঘ টানাপড়েনের পরে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে নন্দীগ্রাম আসনে বিজেপির প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারীকে বিজয়ী ঘোষণা করেছে ভারতের নির্বাচন কমিশন। এই আসনে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূল নেত্রী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, নন্দীগ্রাম আসনে এক লাখ ৯ হাজার ৬৭৩ ভোট পেয়েছেন শুভেন্দু। আর মমতা পেয়েছেন এক লাখ ৭ হাজার ৯৩৭ ভোট।
নন্দীগ্রামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জিতেছেন, নাকি শুভেন্দু অধিকারী জিতেছেন তা নিয়ে ধোঁয়াশা দেখা দেয়। সংবাদসংস্থা এএনআই টুইট করে জানায়, হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পরে ১২০০ ভোটে জিতেছেন মমতা। কিন্তু পরে জানা যায় শুভেন্দু জিতেছেন। আনন্দবাজার পত্রিকাকে সে কথা জানান শুভেন্দু নিজেই। এই ঘটনা নিয়ে কমিশনের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করলেন মমতা। বললেন, ‘নন্দীগ্রামের মানুষের রায় মেনে নিচ্ছি। কিন্তু ওখানে ভোট লুঠ হয়েছে। এজন্য আদালতে যাব আমরা।’
এর আগে ভোটগণনা ঘিরে বিভ্রান্তি তৈরি হলে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক আরিজ আফতাব জানিয়েছিলেন, ‘আপাতত ফলাফল ঘোষণা স্থগিত নন্দীগ্রামে। নতুন করে গণনা হতে পারে। এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন রিটার্নিং অফিসার।’
অবশেষে দীর্ঘ টানাপড়েনের পরে নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করল, নন্দীগ্রামে জিতেছেন শুভেন্দু অধিকারীই। পুনর্গণনা হবে না বলেই জানিয়ে দিয়েছে কমিশন।
এদিকে রাজ্যে জয়ের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অভিনন্দন জানিয়ে টুইট করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
১৯৫২-৬২ নন্দীগ্রাম-উত্তর এবং নন্দীগ্রাম-দক্ষিণ আসনে বিভক্ত ছিল। অবিভক্ত নন্দীগ্রামে ১৯৬৭-৭২ তিনবার জেতেন সিপিআইয়ের ভূপাল পণ্ডা। ১৯৭৭-এ জনতা পার্টির পর ফের তিনবার জেতে সিপিআই। ১৯৯৬-এ কংগ্রেস, ২০০১, ০৬-এ সিপিআইয়ের ইলিয়াস মহম্মদ জেতেন। ঘুষ-কাণ্ডে ইলিয়াসের সদস্যপদ খারিজের পর ২০০৯-এ উপনির্বাচনে তৃণমূলের ফিরোজা বিবি জেতেন। ২০১৬-য় শুভেন্দু অধিকারী। শুভেন্দু বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার পর নন্দীগ্রামে তাঁর বিরুদ্ধে এ বার প্রার্থী স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আসন প্রাপ্তির নিরিখে তো বটেই বিধানসভা নির্বাচনে ভোটপ্রাপ্তির নিরিখেও সেরা ফল করল তৃণমূল। বস্তুত, ভোট শতাংশের হিসেবে এটাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিষ্ঠিত দলের সবচেয়ে ভাল ফল।
ভোটগণনার গতিপ্রকৃতির ইঙ্গিত, মোটের উপর ৪৮ শতাংশ ভোট পেতে চলেছে তৃণমূল। অতীতে কোনও বিধানসভা বা লোকসভা নির্বাচনে এত আসন পায়নি তারা। ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে মোট ৬টি লোকসভা এবং ৫টি বিধানসভা ভোটে লড়েছে তৃণমূল। বিধানসভা ভোটের নিরিখে এ পর্যন্ত সেরা ফল হয়েছিল ২০১৬ সালে। ৪৪.৯১ শতাংশ ভোট পেয়ে ২১১টি আসনে জিতেছিল জোড়াফুল। ভোট শতাংশের পাশাপাশি আসন প্রাপ্তির হিসেবেও এ বারে সেই সংখ্যাকে ছাপিয়ে যাচ্ছে তারা।
২০১১-র বিধানসভা ভোটে ৩৮.৯৩ শতাংশ ভোট পেয়ে ১৮৪টি আসন দখল করেছিল তৃণমূল। তবে সে বার তারা লড়েছিল ২২৬টি আসনে। কংগ্রেস-সহ অন্য সহযোগীদের বাকি আসনগুলি ছেড়েছিল।
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ