করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ভারতে ভয়াবহভাবে বেড়েই চলেছে দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা। প্রতিদিনই দেশটিতে ভাঙছে শনাক্ত ও মৃত্যুর রেকর্ড। দেশটির প্রায় সব রাজ্যেই করোনা পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতিতে দিশেহারা অবস্থা। যে কয়টি রাজ্যে করোনার সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী তার মধ্যে অন্যতম কর্ণাটক রাজ্য। এই পরিস্থিতির মধ্যেই সংক্রমণ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ৩ হাজার করোনা রোগী সেখান থেকে পালিয়ে গেছে। তাদেরকে খুঁজতে ঘাম ছুটছে প্রশাসনের। এরকম সংকটময় পরিস্থিতিতে গোঁদের ওপর বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে করোনা রোগীদের হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়া। খবর: হিন্দুস্তান টাইমস।
আজ বৃহস্পতিবার (২৯ এপ্রিল) এই চাঞ্চল্যকর খবরটি জানিয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী আর অশোকা।
জানা গেছে, কর্ণাটকের রাজধানী ব্যাঙ্গালোরুতে নিখোঁজ হয়ে গেছেন প্রায় ৩ হাজার করোনা রোগী। তাদের সবার মোবাইল সুইচ অফ করা আছে। তাদেরকে খুঁজে না পেলে কর্ণাটক রাজ্যে করোনা পরিস্থিতি মহারাষ্ট্রের মত হয়ে যাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ ৩ হাজার রোগী যদি শহরের মধ্যে ঘুরে সংক্রমণ ছড়ায় তাহলে পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে। তাদেরকে খোঁজার জন্য কালঘাম ছুটছে পুলিশ প্রশাসনের। পুরো ব্যাঙ্গালোর শহরে ওই করোনা রোগীদের হন্যে হয়ে খোঁজা শুরু করা হয়েছে।
এই বিষয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী কে সুধাকর জানান, করোনা রোগীর নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার বিষয়টি নতুন কিছু নয়। আগের বছরও এমন ঘটনা ঘটেছিল। কিন্তু ওইসব রোগী তাদের মোবাইল বন্ধ করে রাখায় সমস্যা হচ্ছে।
এই বিষয়ে বৃহস্পতিবার কর্ণাটকের রাজ্য বিপর্যয় পরিচালন কর্তৃপক্ষের ভাইস চেয়ারম্যান ও প্রতিমন্ত্রী আর অশোক জানিয়েছেন, নিখোঁজ রোগীদের সন্ধান পেতে জোরকদমে চিরুনী তল্লাশী শুরু করেছ পুলিশ প্রশাসন।
এদিন তিনি সাধারণ মানুষের কাছে অনুরোধ জানিয়ে বলেন, “দয়া করে আপনারা মোবাইল ফোন বন্ধ করে রাখবেন না। তাহলে আমাদের করোনা রোগীদের খোঁজ পেতে অসুবিধা হবে। কাজ করতে সমস্যা তৈরি হবে।”
তিনি আরও বলেন, “বর্তমানে সারা রাজ্যজুড়ে প্রায় দুই থেকে তিন হাজার করোনা সংক্রমিত রোগী নিখোঁজ রয়েছেন। তাদের বাড়িতেও পাওয়া যাচ্ছে না। ফোনগুলি সুইচ অফ বলছে।”
প্রতিমন্ত্রী আর অশোক আরও বলেন, “করোনায় আক্রান্ত হলে দয়া করে ভয় পেয়ে আপনারা নিজেদের ফোন বন্ধ করে রাখবেন না। বাড়ি ছেড়ে অন্য কোথাও পালাবেন না। এতে সংক্রমণ আরও বেড়ে যাবে। নিখোঁজ করোনা আক্রান্ত রোগীদের খোঁজ পেতে তাদের মোবাইল নম্বর ট্রেস করে তল্লাশী শুরু করেছে পুলিশ প্রশাসন। আগামী ১০ দিনের মধ্যেই সবাইকে খুঁজে বের করা হবে।”
শুধু তাই নয়, এই বিষয়ে রাজ্যবাসীকে আশ্বস্ত করে তিনি আরও জানান, করোনাকে ভয় নয়। সঠিক স্বাস্থ্যবিধি এবং কোভিড প্রোটোকল মেনে চললে ৯০ শতাংশ মানুষ এই রোগকে জয় করতে পারেন। ফলে করোনা না ছড়িয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিন। নিজে সুস্থ থাকুন এবং অপরকে ভালো রাখার চেষ্টা করুন।
গত ২৪ ঘণ্টায় কর্ণাটকে করোনা আক্রান্ত হয়েছে ৩৯ হাজার ৪৭ জন। অপরদিকে মারা গেছে ২২৯ জন। শুধুমাত্র বেঙ্গালোরুতেই আক্রান্ত হয়েছে ২২ হাজার ৫৯৬ জন। এমন এক পরিস্থিতিতে হাজার হাজার করোনা রোগীর নিখোঁজ হয়ে যাওয়াতে ঘুম ছুটেছে পুলিশের। কারণ তাদের সংস্পর্শে এসে আরও বহু মানুষ করোনায় আক্রান্ত হবে। এমন পরিস্থিতি চিন্তা করেই সবার মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে।
অন্যদিকে, কর্ণাটকে করোনা সংক্রমণ রুখতে গত সপ্তাহেই ১৪ দিনের লকডাউন ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার। মানুষের চলাচল কমিয়ে আনতে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এর মধ্যেও বিপত্তি কমছে না। এখন পর্যন্ত ওই রাজ্যে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ১৫ হাজার ৩৬ জনের।
যতই দিন যাচ্ছে ভারতের করোনা পরিস্থিতি খারাপ থেকে আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই দেশটিতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর নতুন রেকর্ড হচ্ছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে মৃত্যু ও শনাক্তের অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে। একদিনে নতুন করে মারা গেছেন তিন হাজার ৬৪৫ জন। আক্রান্ত হয়েছে তিন লাখ ৭৯ হাজারের বেশি মানুষ।
বৃহস্পতিবার সকালে কেন্দ্রীয় সরকার প্রচারিত স্বাস্থ্য বুলেটিনের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে দেশটির গণমাধ্যমগুলো। এর ফলে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ২ লাখ ৪ হাজার ৭৩২ জনে।
এর আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে করোনায় মৃত্যু হয় ৩ হাজার ২৯৩ জন করোনা রোগীর। সেটি ছিল ভারতে করোনার ইতিহাসে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। আজ আবারও সেই রেকর্ড ভাঙল। সেদিন নতুন করে সংক্রমণ শনাক্ত হয় রেকর্ড ৩ লাখ ৬০ হাজার ৯৬০ জনের শরীরে। আজ সেই রেকর্ডও ভেঙে গেল।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২০১৪
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ