ধূমপায়ীদের শরীরে মুহূর্তে কামড় বসাতে পারে কোভিড-১৯। এমন একটি আশঙ্কার কথা আগেও প্রকাশ পেয়েছিল। একাধিক সংস্থা বলেছিল করোনা যেহেতু সরাসরি শ্বাসযন্ত্রকে আক্রমণ করে, তাই ধূমপান যারা করেন, তাদের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কয়েকগুণ বেশি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ যাবৎকাল বারবার ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করে এসেছে মানুষকে। কিন্তু কেউ কথা শুনলে তো! এমনকী করোনা যখন ক্রমশ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে, তখনও তামাকজাত দ্রব্যের চাহিদা তুঙ্গে। বিশেষজ্ঞদের সাবধানবাণীকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে চলেছে ধোঁয়া ওড়ানোর পালা। কিন্তু এবার বিশ্বজোড়া করোনা আক্রান্তদের পরিসংখ্যান বলছে আক্রান্তরা বেশিরভাগই ধূমপায়ী।
দেশে দিনদিন বাড়ছে তামাক ব্যবহারকারীর সংখ্যা। বর্তমানে দেশে প্রায় ৪ কোটি মানুষ তামাক ব্যবহার করেন। যারা সবচেয়ে বেশি করোনা ঝুঁকিতে রয়েছেন।
আজ মঙ্গলবার (২৭ এপ্রিল) তামাকবিরোধী সংগঠন প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এবং অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া অ্যালায়েন্সের (আত্মা) যৌথ উদ্যোগে ‘তামাক-কর ও দাম সংক্রান্ত বাজেট প্রস্তাব’ শীর্ষক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
অনুষ্ঠানে বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন প্রজ্ঞার হেড অব টোব্যাকো কন্ট্রোল প্রোগ্রাম হাসান শাহরিয়ার। সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে যুক্ত ছিলেন জাতীয় তামাকবিরোধী মঞ্চের আহ্বায়ক বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে বিআইডিএসের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ এবং ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস (সিটিএফকে), বাংলাদেশ’র লিড পলিসি অ্যাডভাইজর মো. মোস্তাফিজুর রহমান যুক্ত ছিলেন।
এতে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) চেয়ারম্যান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।
প্রজ্ঞা বলছে, বিশ্বের শীর্ষ তামাক ব্যবহারকারী দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এখনও বাংলাদেশে ৩৫.৩ শতাংশ বা তিন কোটি ৭৮ লাখ প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ তামাক ব্যবহার করছেন। যার মধ্যে এক কোটি ৫০ লাখ মানুষ সিগারেট ব্যবহার করেন। শতাংশ হিসাবে যা ১৪ শতাংশ। ২০১৮ সালের পরিসংখ্যান বিবেচনায় তামাকের প্রভাবে ১ লাখ ২৮ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করেছেন। এছাড়া পঙ্গুত্ববরণ করেছেন কয়েক লাখ মানুষ। আর বর্তমানে তামাক ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ৪ কোটি, যারা সবচেয়ে বেশি করোনা ঝুঁকিতে রয়েছেন।
প্রজ্ঞার হেড অব টোব্যাকো কন্ট্রোল প্রোগ্রাম হাসান শাহরিয়ার বলেন, ২০০৯ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত পরিসংখ্যান হিসাব করলে তামাক ব্যবহারের হার প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে। ২০০৯ সালে ছিল ১৪.২ শতাংশ এবং ২০১৭ সালে তা ১৪ শতাংশ। বরং সংখ্যা হিসাব করলে ১৫ লাখ সিগারেট ব্যবহারকারী বেড়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুসারে যদি ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকের ব্যবহার কমিয়ে ৫ শতাংশ করতে হয়, তাহলে আমাদের প্রতিবছর ১.৫ শতাংশ কমাতে হবে। ২০০৯ সালে তামাকের ব্যবহার ছিল ৪৩ শতাংশ, যা ২০১৭ সালের হয়েছে ৩৫ শতাংশ। যে হারে কমছে তাহলে লক্ষ্য অর্জিত হবে না। ২০২১ সালের মধ্যে তামাকের ব্যবহার অন্তত ২৮ শতাংশ কমাতে হবে।
তিনি বলেন, অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে দেখা যায় ২০১৭-২০১৮ সালে তামাক খাতে রাজস্ব এসেছিল ২২ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। একই বছরে তামাক ব্যবহারজনিত অসুস্থতায় স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় হয়েছিল ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে বলতে পারি, এটি লোকসান। আর নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বলতে পারি তামাকের প্রভাবে মৃত্যুহার অনেক বেশি। দেশে এত মানুষ করোনায়ও মৃত্যুবরণ করেনি।
অনুষ্ঠানে অর্থনীতিবিদ কাজী খলীকুজ্জমান বলেন, সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য অনেক কাজ করতে হবে। বিশেষ করে তরুণদের মধ্য সিগারেট ব্যবহারে হার বাড়ছে, এটা অশনি সংকেত। এজন্য সচেতনতা বৃদ্ধির দিকে নজর দেওয়া দরকার। সরকার সিগারেটের ওপর যে ১ শতাংশ সারচার্জ নেয়, তা আগামী বাজেটে বৃদ্ধি করে দেড় শতাংশ করতে পারে। আর ওই অর্থ সচেতনতা বৃদ্ধির কাজে ব্যয় করা যেতে পারে।
ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, তামাকের কর নির্দিষ্ট হারে প্রয়োগ করা উচিত, যাতে রাজস্ব আদায় বাড়ে। করোনাকে ঘিরে একটি নতুন সুযোগ তৈরি হয়েছে। ধোঁয়াবিহীন তামাক কত ক্ষতিকর, এ বিষয়ে কোনো সতর্কতা নেই। নারীদের স্বাস্থ্যের বিষয়টি বিবেচনা করে বলতে চাই, ধোঁয়াবিহীন তামাক বর্জন করা উচিত। এর সঙ্গে তামাকের মান নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। মান নিশ্চিত করতে পারলেও তামাকের দাম বাড়বে। ফলে ভোক্তাদের চাহিদা কমবে, সরকারের রাজস্ব আদায় বাড়বে। আয় যে হারে বেড়েছে, সেই হারে তামাকের ওপর কর আরোপ বাড়েনি। তামাকবিরোধী সতর্কতার জন্য সভা ও সমাবেশসহ বিভিন্ন প্রচারণা কাজের জন্য বাজেটে বরাদ্দ রাখা যেতে পারে।
সভাপতির বক্তব্যে আরেফিন সিদ্দিক বলেন, অতি গতিশীল সমাজে চিন্তায়-চেতনায় গতি থাকতে হবে। ধূমপান শিল্পের সঙ্গে জড়িত শ্রমিকদের বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। শুধুমাত্র কর বাড়িয়েই ধূমপান রোধ করতে পারব কি না, এটা ভেবে দেখার সময় এসেছে। বৃদ্ধি করা করের টাকা, স্বাস্থ্যখাতে ব্যবহার করা যেতে পারে। ধূমপানে বিষপান সে বিষয়টিই কেন এখনও তরুণদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পারি না, সেটা খতিয়ে দেখা দরকার। জনমত তৈরি করা দরকার। প্রাক-বাজেটের বেশির ভাগেই কর কমানো প্রস্তাব থাকে, কেবলমাত্র প্রজ্ঞা-আত্মার পক্ষ থেকে কর বৃদ্ধি প্রস্তাব সরকার গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিতে পারে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬০৫
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ