ভারত সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার রপ্তানি সাময়িকভাবে স্থগিত করার পর সময়মত টিকা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়ে বাংলাদেশ। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সাথে চুক্তিবদ্ধ থাকায় অন্যান্য দিকে টিকার খোঁজ থাকলেও সরকারের তেমন কিছু করার ছিল না। অবশেষে ভারত থেকে বারবার বিমুখীতা আচরণের পর দেশে রাশিয়ার টিকা স্পুটনিক-ভি এর জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গঠিত জরুরি জনস্বাস্থ্য ক্ষেত্রের ওষুধ, পরীক্ষামূলক ওষুধ, টিকা ও মেডিকেল সরঞ্জামবিষয়ক কমিটি এই অনুমোদন দিয়েছে। আগামী মে মাসের মধ্যেই ৪০ লাখ ডোজ স্পুটনিক-ভি টিকা রাশিয়া থেকে দেশে পৌঁছাচ্ছে বলে জানিয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর।
আজ মঙ্গলবার (২৭ এপ্রিল) ঔষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের এক সভায় টিকা অনুমোদনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এই অনুমোদনে এখন রাশিয়ার এই টিকা আমদানি ও ব্যবহারে আইনগত বাধা থাকল না।
সরকারি নথিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, কিনতে চাইলে রাশিয়া বাংলাদেশকে আগামী মাস অর্থাৎ মে থেকেই টিকা দিতে পারবে।
ঔষধ প্রশাসনের স্পুটনিক-ভি টিকার বিষয়ে সিদ্ধান্তের পর বাংলাদেশে অনুমোদন পাওয়া টিকার সংখ্যা দাঁড়াল দুটি। এর আগে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গঠিত জরুরি জনস্বাস্থ্য ক্ষেত্রের ওষুধ, পরীক্ষামূলক ওষুধ, টিকা ও মেডিকেল সরঞ্জামবিষয়ক কমিটি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছিল।দেশের শীর্ষ স্থানীয় জনস্বাস্থ্যবিদ, টিকা বিশেষজ্ঞ, ওষুধবিজ্ঞানী ও রোগতত্ত্ববিদেরা এই কমিটির সদস্য।
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) অনুমোদন দিলে এবং যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স ও সুইজারল্যান্ড—এই সাত দেশে ব্যবহারের অনুমোদন থাকলে সেসব ওষুধ, টিকা বা চিকিৎসাসামগ্রী বাংলাদেশে অনুমোদন দেওয়া হয়। ধরে নেওয়া হয় বৈজ্ঞানিকভাবে কার্যকর ও নিরাপদ বলেই এসব ওষুধ ও টিকা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ওই দেশগুলো অনুমোদন দেয়। কিন্তু রাশিয়ার টিকাটি ওই সব দেশ বা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন এখনো পায়নি। সে কারণে টিকাটির বিশেষ অনুমোদন দরকার ছিল।
এর আগে গত শুক্রবার (২৩ এপ্রিল) পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন জানান, রাশিয়ার ভ্যাকসিন স্পুটনিক-ভি দেশেই উৎপাদনের জন্য মস্কো-ঢাকা সম্মত হয়েছে। চলছে চীনা ভ্যাকসিন আনার আলাপ-আলোচনাও।
তিনি বলেন, দেশে টিকা উৎপাদন করতে রাশিয়ার প্রস্তাবে আমরা একমত হয়েছি। কারণ আমরা সেটা তৃতীয় দেশেও বিক্রি করতে পারব।
গত বছরের ১১ আগস্ট রাশিয়া উদ্ভাবিত করোনার টিকা স্পুটনিক-ভি এর অনুমোদন দেয় দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। রাশিয়ার গামেলিয়া ন্যাশনাল রিসার্চ সেন্টার ও রাশিয়ান ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডের তৈরি স্পুটনিক-ভি নামের এই টিকাটি গত ৮ সেপ্টেম্বর সে দেশের নাগরিকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। বিশ্বের ৬০টি দেশ এ পর্যন্ত জরুরি প্রয়োজনে এই টিকা ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে। করোনার বিরুদ্ধে স্পুটনিক-ভি এর কার্যকারিতা ৯৫ শতাংশ বলে জানিয়েছে গামালিয়া। দাম প্রতি ডোজ ১০ থেকে ২০ ডলার।
এর আগে, অক্সফোর্ডের তিন কোটি ডোজ টিকা আনতে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে গত বছরের ৫ নভেম্বর চুক্তি হয়েছিল বাংলাদেশের। চুক্তি অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশে ৩ কোটি ডোজ টিকা রফতানি করার কথা থাকলেও এ পর্যন্ত টিকা এসেছে মোট এক কেটি দুই লাখ ডোজ। এর মধ্যে ভারত সরকারের উপহার হিসেবে গত ২১ জানুয়ারি প্রথমে আসে ২০ লাখ ডোজ। সরকারের অর্থে কেনা টিকার প্রথম চালানে ২৫ জানুয়ারি আসে ৫০ লাখ ডোজ, ফেব্রুয়ারি মাসের ২৩ তারিখ আসে আরও ২০ লাখ ডোজ এবং সর্বশেষ গত ২৬ মার্চ আসে ১২ লাখ ডোজ। অর্থাৎ, ভারত থেকে কেনা ও উপহার মিলিয়ে এ পর্যন্ত মোট টিকা এসেছে এক কোটি দুই লাখ ডোজ।
দেশে গত সাত ফেব্রুয়ারি থেকে গণ-টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়। গত ৮ এপ্রিল থেকে শুরু হয় টিকার দ্বিতীয় ডোজ। তবে ভারত থেকে গত ফেব্রুয়ারি মাসের জন্য চুক্তির ৩০ লাখ এবং মার্চ মাসের ৫০ লাখ- অর্থাৎ চুক্তির ৮০ লাখ টিকা এখনও দেশে আসেনি। এপ্রিল মাসে টিকা আসার সম্ভাবনা এখনও পর্যন্ত নেই।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যমতে, দেশে এখন ৪৯ লাখের মতো টিকা মজুত রয়েছে। আর দ্বিতীয় ডোজ নেয়া বাকি রয়েছে প্রায় ৪৩ লাখ ৪৭ হাজার ৪৮১ ডোজ। প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ টিকা নেয়া অব্যাহত থাকলে মজুত ফুরিয়ে যাবে আগামী একমাসের মধ্যে।
মে মাসেই রাশিয়া থেকে আসছে ৪০ লাখ টিকা
আগামী মে মাসেই রাশিয়ার টিকা স্পুতনিক-ভি’এর ৪০ লাখ ডোজ আসার সম্ভাবনা আছে বলে জানিয়েছেন ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান।
সুরকার টু সরকার (জি টু জি) চুক্তির মাধ্যমে এই টিকা আনা হচ্ছে বলে মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান।
মঙ্গলবার দুপুর দেড়টায় তিনি বলেন, ‘সবকিছু দেখে রাশিয়ার টিকা অনুমোদন দেয়া হয়েছে। আশা করছি, আগামী মে মাসের মধ্যে রাশিয়া থেকে ৪০ লাখ টিকা আসছে। শুধু রাশিয়ার জন্য চীনের টিকা পেতেও যোগাযোগ করছে সরকার। আমরা মে মাসের মধ্যে রাশিয়া টিকা পাব এই পরিকল্পানা রয়েছে। এখন রাশিয়ার টিকা অনুমোদন দিয়েছে। পাইপলাইনে চীনের টিাকাও রয়েছে।
‘এই টিকার সমন্ত ডাটা আমরা পেয়েছি। সরকারিভাবে আমাদের কাছে পাঠানো হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আমাদের কাছে এটি এসেছে। আমরা ডাটাগুলো দেখেছি। আমার এখানে যারা বিশেষজ্ঞ রয়েছে তার এটি বাচাইবাছাই করেছে। আমাদের পাবলিক হেলথ কমিটি রয়েছে, এটা ১২ সদস্য বিশিষ্ট। আজকে তাদের একটি মিটিং হয়েছে মিটিং এবিষয়ে সবকিছু দেখে সুপারিশ করা হয়েছে। সেই সুপারিশ দেখে এই টিকা অনুমোদন দেয়া হয়েছে।’
রাশিয়াসহ পৃথিবীর সাতটি দেশে এই টিকার ব্যবহার চলছে জানিয়ে মাহবুবুর বলেন, ‘এটি বিশ্ব সংস্থা সংস্থা অনুমোদন না দিলেও এটি মানুষের দেহে প্রয়োগ করতে পারব। জরুরি প্রয়োগে আমার অনুমোদন দিয়েছি।’
রাশিয়ার টিকা বেসরকারিভাবেও দেয়া হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে ওষুধের ডিজি বলেন, ‘টিকা কার্যক্রম শুধুমাত্র সরকারি পর্যায় থেকে করা হবে। এটা বিনামূল্যে দেয়া হবে। এটি সরকার টু সরকার চুক্তি মাধ্যমে করা হবে।’
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩৫৩
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ