অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার উদ্ভাবিত করোনার টিকার ৬ কোটি ডোজ ছাড়বে যুক্তরাষ্ট্র। অন্য দেশগুলো যখন টিকার জন্য হাহাকার করছে, তখন যুক্তরাষ্ট্র টিকা মজুত করে রেখেছে—এমন সমালোচনার মধ্যে বাইডেন প্রশাসন এ কথা জানাল।
সোমবার হোয়াইট হাউসের কোভিড-১৯ বিষয়ক জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা অ্যান্ডি স্লাভিট টুইট বার্তায় এ কথা জানিয়েছেন। তিনি টুইট বার্তায় বলেন, যুক্তরাষ্ট্র প্রাপ্যতার ভিত্তিতে অন্যান্য দেশগুলোয় ৬ কোটি ডোজ অ্যাস্ট্রাজেনেকার উদ্ভাবিত করোনার টিকা ছাড় করবে। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পরবর্তী কয়েক মাসের মধ্যে এসব টিকা ছাড় করবে যুক্তরাষ্ট্র। এ জন্য যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য এবং ওষুধ প্রশাসনের (এফডিএ) ছাড়পত্র প্রয়োজন হবে।
গত মার্চে জো বাইডেন প্রশাসন জানিয়েছিল, কানাডা ও মেক্সিকোয় ৪০ লাখ ডোজ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার উদ্ভাবিত করোনার টিকা পাঠাবে ওয়াশিংটন। এখন নিজস্ব মজুত থেকে ভারতসহ অন্যান্য দেশগুলোয় টিকা পাঠাতে বাইডেন প্রশাসনের ওপর চাপ বেড়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে টিকা ছাড়ের উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানানো হয়েছে। এদিকে হোয়াইট হাউসের কোভিড-১৯ বিষয়ক সমন্বয়ক জেফ জিয়েন্টস জানিয়েছেন, ছাড় করার জন্য ১ কোটি ডোজ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা প্রস্তুত রয়েছে। এফডিএ অনুমতি দিলেই ছাড় করার প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। এ জন্য কয়েক সপ্তাহ সময় লাগতে পারে।
৫৮শতাংশ ডোজ উচ্চ ৩আয়ের দেশে
বিশ্বজুড়ে ১০০ কোটি ডোজের বেশি টিকা দেওয়া সম্পন্ন হয়েছে। মোট টিকার ডোজের ৫৮ শতাংশই দেওয়া হয়েছে উচ্চ আয়ের তিন দেশে। দেশগুলোর মধ্যে প্রথমেই রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে জনসংখ্যার ভিত্তিতে টিকাদানে শীর্ষে রয়েছে ইসরাইল, দেশটিতে প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৬ জন টিকা নিয়েছেন। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে আমিরাত, আমিরাতের মোট জনসংখ্যার ৫১ শতাংশের বেশি কমপক্ষে এক ডোজ টিকা নিয়েছেন।
যুক্তরাজ্যে ৪৯ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্রে ৪২ শতাংশ চিলিতে ৪১ শতাংশ, বাহরাইনে ৩৮ শতাংশ ও উরুগুয়েতে মোট জনসংখ্যার ৩২ শতাংশ মানুষ টিকা গ্রহণ করেছেন।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের মোট জনসংখ্যার ২১ শতাংশ টিকা নিয়েছেন। বিশ্বব্যাংক বলেছে, এখন পর্যন্ত টিকাদান কর্মসূচির সিংহভাগ সুবিধা ভোগ করছে ধনী দেশগুলো। বিশ্বের মাত্র ১৬ শতাংশ জনগোষ্ঠীর বসবাসসম্পন্ন উচ্চ আয়ের দেশগুলো ৪৭ শতাংশ ডোজ টিকা দিয়েছে। অন্যদিকে নিম্ন আয়ের দেশগুলোয় টিকাদানের হার মাত্র ০.২ শতাংশ। কোভ্যাক্স উদ্যোগের আওতায় দরিদ্র দেশগুলো টিকাদান কর্মসূচি শুরু করলেও তারা ধনী দেশগুলোর চেয়ে অনেক পিছিয়ে রয়েছে।
ধনী দেশগুলোর চারজনের মধ্যে একজন করোনার টিকা গ্রহণ করেছেন, অন্যদিকে নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে টিকা পেয়েছেন প্রতি ৫০০ জনের মধ্যে একজন। এখন পর্যন্ত ১২টি দেশ টিকাদান শুরুই করতে পারেনি, এর মধ্যে ৭টি দেশই আফ্রিকার। বিশ্বে দেওয়া মোট টিকার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়েছে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ডোজ। ১৫৬টি দেশে এই সংস্থার টিকা দেওয়া হচ্ছে। ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকা কার্যক্রম চলছে ৯১টি দেশে। মর্ডানার টিকা দেওয়া হচ্ছে ৪৬টি দেশে। ৪১টি দেশে সিনোফার্ম, ৩২টি দেশে স্পুটনিক-ভি ও ২১টি দেশে সিনোভ্যাকের টিকা দেওয়া হচ্ছে।
করোনার সংক্রমণের পরিসংখ্যান নিয়মিত হালনাগাদকারী ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারসের তথ্য বলছে, আজ রাত পৌনে দুইটা পর্যন্ত করোনায় সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে ও মারা গেছে যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটিতে সোয়া তিন কোটির বেশি মানুষের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচ লাখ ৮৬ হাজার ২৬৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এরপরে করোনা শনাক্ত রোগীর সংখ্যায় পর পর রয়েছে ভারত (১,৭৬,২৫,৭৩৫) ও ব্রাজিল (১,৪৩,৪০,৭৮৭)। আর মৃতের সংখ্যার হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রের পর রয়েছে ব্রাজিল (৩,৯০,৯২৫) ও মেক্সিকো (২,১৪,৯৪৭)। আর ভারতে মৃতের সংখ্যা এক লাখ ৯৭ হাজার ৮৮০ জন। অন্যদিকে মেক্সিকোয় শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ২৩ লাখ ২৮ হাজার ৩৯১ জন। তবে ভারতে সাম্প্রতিক দিনগুলোতে যে সংখ্যক মানুষের সংক্রমণ ধরা পড়ছে, তা বিশ্বে একক কোনো দেশে একদিনে আক্রান্তের রেকর্ড করছে।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৪১০
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ