যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ড থেকে পালিয়েছেন ভারতফেরত ১০ করোনা রোগী। গত শনিবার সকাল থেকে রবিবার (২৫ এপ্রিল) দুপুরের মধ্যে তারা পালিয়ে যান বলে জানা গেছে। পালিয়ে যাওয়া তাদের এখনো কোনো হদিস মেলেনি। এতে সম্প্রতি বিশ্বজুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টিকারী করোনাভাইরাসের ইন্ডিয়ান ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, শনিবার (২৩ এপ্রিল) বেনাপোল দিয়ে ভারত থেকে দেশে আসেন অর্ধশতাধিক বাংলাদেশি। সেখানে নমুনা পরীক্ষা করা হলে ১০ জনের করোনা শনাক্ত হয়। এদিন সকাল ১০টা ৫৭ মিনিটে তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর থেকে তারা হাসপাতালের তৃতীয় তলায় করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি ছিলেন।
যশোর জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ব্রাদার তারকচন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ‘গত শনিবার (২৩ এপ্রিল) সকাল দশটা ৫৭ মিনিটে ভারতফেরত কিছু রোগীকে ভর্তি করা হয়। এরপর রোববারও রোগী আসে। সবমিলিয়ে দুইদিনে দশজন করোনা রোগী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাদের সবাইকে হাসপাতালের তৃতীয় তলায় করোনা ওয়ার্ডে পাঠানো হয়।’
হাসপাতালের ভর্তি রেজিস্টার মতে রোগীরা হলেন, যশোর শহরের বিমান অফিস মোড়ের আবুল কাসেমের স্ত্রী ফাতেমা বেগম (৫৭), খালধার রোডের বিশ্বনাথের স্ত্রী মালা দত্ত (৫০), সদর উপজেলার পাঁচবাড়িয়া গ্রামের রবিউল ইসলামের স্ত্রী ফাতেমা বেগম (১৯), একই গ্রামের একরামের স্ত্রী রোমা (৩০), প্রতাপকাঠি গ্রামের জালাল উদ্দিনের ছেলে মমিন, রামকান্তপুর গ্রামের গোলাম রব্বানীর স্ত্রী নাসিমা বেগম (৫০), বাঘারপাড়া উপজেলার রায়পুর গ্রামের ফজর আলীর ছেলে শহিদুল ইসলাম (৪৫), ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জের জনৈক মনোতোষের স্ত্রী শেফালি রানি, খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার রামরাইল গ্রামের আহম্মদ সানার ছেলে আমিরুল সানা ও একই জেলার রূপসা এলাকার শের আলীর ছেলে সোহেল (১৭)।
করোনা ওয়ার্ডে দায়িত্বরত সিনিয়র নার্স লাবণী বিশ্বাস বলেন, ‘করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আসা দশজন রোগী এই ওয়ার্ডে ভর্তি ছিলেন। কিন্তু সোমবার সকালের পর থেকে তাদের আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।’
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার দিলীপ কুমার রায় বলেন, ভারত থেকে আসা ১০ জন কোভিড-১৯ রোগী যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন। পরে এরা কাউকে কিছু না বলে পালিয়ে যান। আমাদের কাছে তাদের যে ঠিকানা দেওয়া আছে, সে অনুযায়ী স্ব স্ব জেলার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও সিভিল সার্জনকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে।
জেলা সিভিল সার্জন শেখ আবু শাহীন বলেন, ‘রোগী পালানোর কথা শুনে রোববার সকালে আমি সেখানে গিয়ে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের সঙ্গে কথা বলেছি। যে ১০ জন রোগী পালিয়েছে, তাদের নাম-ঠিকানা সঠিক থাকলে তাদের খুঁজে বের করা সম্ভব। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।’
এদিকে যশোর জেনারেল হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়া ১০ রোগীর এখনও কোনও হদিস মেলেনি। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার দিলীপ কুমার রায় আজ সোমবার অনলাইন ভিত্তিক এক সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, পালিয়ে যাওয়া রোগীদের স্ব স্ব জেলার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও সিভিল সার্জনকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। তবে এখনও কোনও খবর আমরা পাইনি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে যশোর জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান বলেন, হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডের ১০ রোগী ছাড়পত্র না নিয়ে চলে গেছে। এদের মধ্যে পাঁচজন ভারতফেরত করোনা রোগী রয়েছে। ওই পাঁচজনের মধ্যে খুলনার দুজন, যশোর, সাতক্ষীরা ও রাজবাড়ী জেলার একজন করে রোগী রয়েছেন। হাসপাতালের রেজিস্ট্রারে ওই ১০ জনের নাম-ঠিকানা ছিল। তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও সিভিল সার্জনকে অবহিত করা হয়েছে। তারা তাদের আইসোলেশন ও চিকিৎসা নিশ্চিত করবেন।
তিনি আরও বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। ভবিষতে যাতে এমন ঘটনা আর না ঘটে সেটি নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
এদিকে ভারতফেরত করোনা রোগীদের পালিয়ে যাওয়ায় সম্প্রতি বিশ্বজুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টিকারী করোনাভাইরাসের ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।
ভাইরোলজিস্টরা বলছেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী যদি কোনো পরিবারে থাকে, তার মাধ্যমে প্রথমে তার পরিবার এবং আশপাশের লোকজনও আক্রান্ত হতে পারে।
তারা বলেন, করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট উদ্বেগ তৈরি করেছে। ফলে ‘পালিয়ে যাওয়া’ রোগীদের কেউ যদি ভারতীয় ভেরিয়েন্টের বাহক হন, তাহলে সেটি ছড়িয়ে পড়ার আশংকা রয়েছে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৫৩১
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ