করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিপর্যস্ত গোটা ভারত। হাসপাতালগুলোতে সিট খালি নেই। অক্সিজেনের অভাবে মারা যাচ্ছেন করোনা আক্রান্ত রোগী। এর মধ্যে মিডিয়ায় জোর দাবি উঠেছিল, আরটিগপিসিআর টেস্টে করোনার নতুন স্ট্রেইন শনাক্ত করা যায় না। এমন দাবি উঠেছে বাংলাদেশেও। তবে এক বিবৃতিতে এমন দাবি উড়িয়ে দিল ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন। এদিকে একদিনে শনাক্তের নতুন বিশ্ব রেকর্ড হয়েছে ভারতে।
কী বলেছেন ভারতীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী?
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তিনি জানিয়েছেন, ট্রান্সক্রিপশন পলিমেরেস চেইন রিয়্যাকশন তথা আরটি-পিসিআর টেস্টে করোনা ভাইরাসের যতগুলো পরিবর্তিত রূপ আছে তার সবই ধরা পড়ে।
বর্তমানে ভারতে যুক্তরাজ্যের ১৭ ও ব্রাজিল থেকে আসা ১৭ টি মিউটেশনের করোনা ভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। এছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আসা ১২ মিউটেশনের পাশাপাশি উচ্চ সংক্রামক ডাবল মিউট্যান্ট ভাইরাসও শনাক্ত হয়েছে।
কিছুদিন যাবৎ মিডিয়া থেকে দাবি করা হচ্ছিল, করোনার নতুন রূপ পরীক্ষা ও শনাক্ত করতে ব্যর্থ হচ্ছে সরকার।
এই দাবি শুধু ভারতে নয়, বাংলাদেশেও করা হয়েছে। বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞ ভাইরোলজিস্টরা করোনার নতুন স্ট্রেইন শনাক্তের ক্ষেত্রে ‘থ্রি জিন টেস্ট’-এর কথা বলেছেন।
স্বাস্থ্য মন্ত্রী হর্ষবর্ধন বিবৃতিতে আরো বলেন, ভারতে করোনা পরিস্থিতি যতটা খারাপই হোক না কেন, তা মোকাবেলায় নতুন কোনো পদক্ষেপের প্রয়োজন নেই। বরং পূর্ব নির্ধারিত পরিকল্পনা ও কৌশকল যথা, টেস্ট, ট্র্যাক, ট্রেস ও ট্রিটমেন্টই যথেষ্ট।
তিনি আরো বলেন, যুক্তরাজ্য, ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে করোনা ভাইরাসের যে ৪৬ প্রজাতি পাওয়া গেছে তা খুব বেশি সংক্রামক। এছাড়া বিভিন্ন দেশ থেকে আরো কয়েক প্রজাতির উচ্চ সংক্রামক ঝুঁকি সম্পন্ন মিউটেশনের উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়েছে।
এছাড়া অস্ট্রেলিয়া, বেলজিয়াম, জার্মানি, আয়ারল্যান্ড, নামিবিয়া, নিউজিল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে যে বেশি সংক্রমণ ক্ষমতা সম্পন্ন ডাবল মিউট্যান্ট ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে ভারতে তা শনাক্ত হলেও খুব বেশি ছড়ায়নি এখনও।
এ বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত মহারাষ্ট্র থেকে সংগ্রহ করা নমুনায় ভাইরাসের ডাবল মিউট্যান্ট রূপটি শনাক্ত করে পুনে ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব ভাইরোলজি।
ভরতের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বলেছেন, ‘করোনা ভাইরাসের নতুন পাওয়া এই ডাবল মিউট্যান্ট রূপটি মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে। যা সংক্রমণের দিক দিয়ে খুবই শক্তিশালী।’
গত শুক্রবার যুক্তরাজ্য জানিয়েছে, ভারতে এখন পর্যন্ত ডাবল মিউট্যান্ট ভাইরাসে ৭৭ টি আক্রান্তের ঘটনা শনাক্ত করা হয়েছে।
ভারতে করোনার ‘ট্রিপল মিউট্যান্ট’
ভারতে করোনা পরিস্থিতে নাজুক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মধ্যেই দেশটিতে সন্ধান মিলেছে ভাইরাসের ‘ট্রিপল মিউট্যান্ট’।
তিন বার জিনের গঠন বিন্যাস বদলে এই প্রজাতি আরও সংক্রামক ও ছোঁয়াচে হয়ে উঠেছে। পশ্চিমবঙ্গ, দিল্লি ও মহারাষ্ট্রে করোনা আক্রান্ত রোগীদের নমুনায় এই নতুন প্রজাতি চিহ্নিত করা হয়েছে।
ভারতীয় বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, সংক্রমিত ব্যক্তির থুতু-লালায় পাওয়া ভাইরাল স্ট্রেনের জিনোম সিকুয়েন্স অর্থাৎ জিনের বিন্যাস পরপর সাজিয়ে দেখা গেছে, নতুন প্রজাতিতে রূপ বদল হয়েছে তিন বার। স্পাইক প্রোটিন এমনভাবে বদলে গিয়েছে যে ভাইরাস আরও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার ক্ষমতা পেয়েছে।
এটি এখন সুপার স্প্রেডারে রূপ নিয়েছে। নতুন ভ্যারিয়েন্টের কারণে আবারও বদলাতে শুরু করবে করোনার উপসর্গ।
ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের এপিডেমিওলজির অধ্যাপক মধুকর পাই বলেছেন, ‘আরও বেশি সংক্রামক করোনার ট্রিপল মিউট্যান্ট। খুব দ্রুত মানুষকে অসুস্থ করে এই প্রজাতি।’
বিশ্বে শনাক্তের নতুন রেকর্ড ভারতের
করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর এই প্রথমবারের মতো গত বৃহস্পতিবার ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে তিন লাখ ১৪ হাজার ৮৩৫ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে।
এর আগে একদিনে সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্তের বিশ্ব রেকর্ড হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রে। জানুয়ারিতে সেখানে একদিনে সর্বোচ্চ দুই লাখ ৯৭ হাজার ৪৩০ জন রোগী শনাক্তের রেকর্ড এবার ছাড়িয়ে গেল ভারত।
এখন ভারতে মোট করোনাভাইরাস রোগীর সংখ্যা ১ কোটি ৫৯ লাখ ৩০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। শনাক্ত রোগীর সংখ্যায় শীর্ষে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের পর বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে আছে দেশটি।
একইদিন ভারতে কোভিড-১৯ জনিত মৃত্যুরও নতুন রেকর্ড হয়েছে, মারা গেছে ২১০৪ জন। এতে দেশটিতে মহামারীতে মোট মৃত্যু এক লাখ ৮৪ হাজার ৬৫৭ জনে দাঁড়িয়েছে বলে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/২১৩৩
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ