চলমান লকডাউনে রাস্তার ‘মুভমেন্ট পাস’ নিয়ে চিকিৎসক, ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশের বাগবিতণ্ডার ঘটনায় দুই পেশাজীবী সংগঠনের পাল্টাপাল্টি বিবৃতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট।
আদালত বলেছেন, ওই ঘটনায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাল্টাপাল্টি বিবৃতি দেয়া সমীচীন হয়নি। তাদের এমন আচরণ অনাকাঙ্ক্ষিত। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে এমন আচরণ কাম্য নয়।
বিবৃতির বিষয়টি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মঙ্গলবার ( ২০এপ্রিল) বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সরদার মো. রাশেদ জাহাঙ্গীরের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চ্যুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এসব কথা বলেন। আদালত বলেছেন, ওই ঘটনায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিবৃতি, পাল্টা–বিবৃতি দেওয়া অনভিপ্রেত। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছ থেকে সবাই দায়িত্বশীল আচরণ আশা করে।
রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে গত রোববার পরিচয়পত্র দেখানো নিয়ে চিকিৎসক, পুলিশ কর্মকর্তা ও ম্যাজিস্ট্রেটের বাগ্বিতণ্ডার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়।
বিষয়টি গতকাল সোমবার আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ। সেদিন আইনজীবীর উদ্দেশে আদালত বলেন, ‘প্রয়োজনে ডাক্তার আসতে পারেন। এতে আপনার কিছু করার নেই। দেখা যায়, ডাক্তার সাহেব চ্যালেঞ্জ করেছেন পুলিশকে। তাই ডাক্তার আর পুলিশ বিষয়টি বুঝুক। তাই এটি আপাতত থাক।’
এলিফ্যান্ট রোডের নিরাপত্তাচৌকিতে ঘটে যাওয়া ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন এবং চিকিৎসকদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) গতকাল পৃথক বিবৃতি দেয়।
পাল্টাপাল্টি বিবৃতি নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন আজ আদালতের নজরে এনে স্বতঃপ্রণোদিত আদেশের আরজি জানান আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ। আইনজীবীকে উদ্দেশ করে আদালত বলেন, ‘এ বিষয় নিয়ে গতকাল এসেছিলেন। আপনি তো সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি নন।’ এ সময় ইউনুছ আলী আকন্দ বলেন, ‘আমার সন্তান ও আত্মীয়স্বজনের মধ্যেও চিকিৎসক রয়েছেন। আমার মেয়ে চিকিৎসক হিসেবে করোনা ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালন করছেন। যে কারণে সংক্ষুব্ধ।’
ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ওই ঘটনা দুঃখজনক ও অপ্রত্যাশিত। করোনাভাইরাসের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে উভয় পক্ষের উত্তেজনা প্রশমনে অ্যাটর্নি জেনারেলকে ভূমিকা রাখতে বলেন আদালত।
চিকিৎসক ও পুলিশের পাল্টাপাল্টি বিবৃতি
চিকিৎসকদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) সোমবার (১৯ এপ্রিল) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে লেখা এক চিঠিতে এলিফ্যান্ট রোডে চিকিৎসককে হেনস্তায় জড়িতদের দ্রুত চিহ্নিত করে বিভাগীয় শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছিলো। ভবিষ্যতে এ ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে দূরে থাকার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়ারও অনুরোধ জানায় সংগঠনটি।
বিএমএ সভাপতি মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন এবং মহাসচিব মো. ইহতেশামুল হক চৌধুরী ওই চিঠিতে সই করেন। তারা লিখেছেন, চিকিৎসকের গাড়িতে প্রতিষ্ঠানের স্টিকার লাগানো ছিল এবং পরনে তার নাম লেখা গাউন ছিল। নিজের পরিচয় দেওয়ার পরও তাকে আক্রমণাত্মক জেরা করে উত্ত্যক্ত ও হেনস্তা করা হয়। ওই দৃশ্য সারা দেশের মানুষ দেখেছে।
বিএমএ চিঠিতে আরও লিখেছিলো, ‘চিকিৎসকের এতগুলো পরিচয় দেওয়ার পরও কেবল মুভমেন্ট পাস ও প্রাতিষ্ঠানিক আইডি কার্ডের নামে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এহেন আচরণ কোনোভাবেই কাম্য নয়। সচিবালয় কিংবা পুলিশ কিংবা সাংবাদিক লেখা স্টিকারযুক্ত কোনো গাড়ি কোথাও আটকানো হয়েছে বা থামানো হয়েছে বলে এখন পর্যন্ত কোনো নজির নেই।’ বিএমএ মনে করে, লকডাউনে করোনা মোকাবিলায় সম্মুখসারির যোদ্ধা চিকিৎসক ও অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের কর্মস্থলে যাওয়ার সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হয়রানি করছে। এই নিগ্রহের কারণে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা আতঙ্কগ্রস্ত ও হতাশ হয়ে পড়ছেন।
অন্যদিকে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন তাদের বিবৃতিতে বলেছিলো, জনৈক চিকিৎসকের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার জন্য তাকে পরিচয়পত্র দেখাতে বলা হয়েছিল। এ সময় তিনি অত্যন্ত ন্যক্কারজনকভাবে বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। এই আচরণ একজন পেশাদার ও সচেতন নাগরিকের কাছে কাম্য নয়। তিনি শুধু ওই পুলিশ সদস্যদের অপমান করেননি, গোটা পুলিশ বাহিনীকে কটাক্ষ ও হেয় করেছেন।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ১৪ এপ্রিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রজ্ঞাপনে জরুরি স্বাস্থ্যসেবা, চিকিৎসাসেবাসহ অন্যান্য কাজে জড়িত সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে দাপ্তরিক পরিচয়পত্র আবশ্যিকভাবে ব্যবহারের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। তিনি ওই নির্দেশনা অমান্য করেছেন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে পরিচয় না দিয়ে নিজ মন্ত্রণালয়ের আদেশ লঙ্ঘন করেছেন।
পুলিশ বলেছে, করোনায় এখন পর্যন্ত ৯১ জন পুলিশ সদস্য মারা গেছেন, আক্রান্ত হয়েছেন ২০ হাজারের বেশি। নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পুলিশ মানুষের জীবন রক্ষায় দাবদাহ উপেক্ষা করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় দাঁড়িয়ে কাজ করছেন। এই পরিস্থিতিতে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। দেশের স্বার্থে, মানুষের জীবন রক্ষায় ও করোনা বিভীষিকা থেকে মুক্তি পেতে পুলিশের কাজে সবাই সহযোগিতা করবেন বলেও তারা আশা প্রকাশ করেছেন।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৭৩৩
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ