হেফাজতে ইসলামের ডাকা বিক্ষোভ কর্মসূচি ও হরতাল চলাকালে সহিংসতা, ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ ও নাশকতার মামলায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আরও ১২ জন হেফাজতের কর্মী ও নারায়ণগঞ্জ মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মঈনুদ্দিন আহমেদসহ ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল রোববার রাতে পুলিশের বিশেষ অভিযানে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আরও ১২ জন গ্রেপ্তার
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতে ইসলামের বিক্ষোভ চলাকালে হামলা, ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনায় নতুন করে আরও ১২ হেফাজতকর্মী ও সমর্থককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়ক গত ২৬ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও সহিংসতার ঘটনা ঘটে। জেলাজুড়ে হেফাজতের কর্মী-সমর্থকেরা ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালান। জেলার বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায় ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এসব ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৫৬টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ৪০ হাজারের বেশি ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৪১৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। বাকি সবাই অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতকারী। ৫৬টির মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানায় ৪৯টি, আশুগঞ্জ থানায় ৪টি, সরাইল থানায় ২টি ও আখাউড়া রেলওয়ে থানায় ১টি মামলা হয়। সহিংসতার ঘটনায় পুলিশ স্থিরচিত্র ও ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের শনাক্ত করা শুরু করেছে।
জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইমতিয়াজ আহমেদ গণমাধ্যমকে জানান, হেফাজত তাণ্ডবের স্থির ও ভিডিও চিত্র দেখে তাদের বিভিন্ন জায়গা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তিনি জানান, রোববার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ পর্যন্ত মামলা হয়েছে ৫৬টি। এর মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানায় ৪৯টি, আশুগঞ্জ থানায় ৪টি, সরাইল থানায় ২টি এবং আখাউড়া রেলওয়ে থানায় ১টি। এসব মামলায় ৪১৪ জন এজাহারনামীয় আসামি ছাড়াও অজ্ঞাতনামা আরো প্রায় ৩৫ হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) মো. রইছ বলেন, গতকাল বিভিন্ন স্থানে পুলিশের বিশেষ অভিযানে ১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁরা হেফাজতের কর্মী-সমর্থক। তাঁদের আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হবে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করতে দিয়ে হেফাজতের ব্যানারে মাদ্রাসার ছাত্ররা গত ২৬ মার্চ বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশনে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। ওই দিন বিক্ষোভকারীরা বঙ্গবন্ধু স্কয়ারে হামলা চালিয়ে জাতির জনকের ম্যুরাল ভাংচুরসহ পুলিশ সুপারের অফিসে ভাংচুরসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ চালায়।
এ ছাড়াও ২৮ মার্চ হরতাল চলাকালে হরতাল সমর্থকরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, শহীদ ধীরেন্দ্রসনাথ দত্ত ভাষা চত্বর, জেলা শিল্পকলা একাডেমি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা, সুর সম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ সঙ্গীতাঙ্গন, সদর উপজেলা ভূমি অফিস, আনন্দময়ী কালীবাড়ি মন্দির, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের বাসভবনসহ সরকারি ও বেসরকারি প্রায় অর্ধশতাধিক স্থাপনা ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।
পুলিশের ভাষ্য, তারা হেফাজতের কর্মী-সমর্থক। এসব ঘটনায় হওয়া মামলায় এখন পর্যন্ত ৩১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
নারায়ণগঞ্জে গ্রেপ্তার জামায়াত নেতাসহ ৩
এদিকে হেফাজতের হরতাল চলাকালে নারায়ণগঞ্জে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও নাশকতার মামলায় জামায়াত নেতা মাওলানা মঈনুদ্দিন আহমেদসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ফতুল্লার তল্লা এলাকায় নিজ বাড়ি থেকে রোববার রাতে গ্রেপ্তার করা হয় নারায়ণগঞ্জ মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মঈনুদ্দিনকে।
একই সময় ওই এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয় বিএনপি নেতা মো. ইসলাম ও জামায়াতের সদস্য মো. জনিকে। মো. ইসলাম বিএনপিতে কোন পদে আছেন তা নিশ্চিত করা যায়নি।
এ বিষয়ে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মেহেদী ইমরান সিদ্দিকী গণমাধ্যমকে বলেন, গতকাল দিবাগত রাত একটার দিকে শহরের তল্লা এলাকার বাড়ি থেকে নারায়ণগঞ্জ মহানগর জামায়াতের আমির মাঈনুদ্দিন আহমেদকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। একই সময় অভিযান চালিয়ে জামায়াতের সদস্য মো. জনি ও বিএনপি নেতা মো. ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় নেওয়া হয়েছে। গ্রেপ্তার তিনজনই হেফাজতে ইসলামের হরতালের দিন সহিংসতার মামলার এজাহারভুক্ত আসামি।
এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, এ ঘটনায় সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় ১৩০ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ২ হাজার ৬০০ জনকে আসামি করে নয়টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় পুলিশ এ পর্যন্ত ৩৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
গত ২৮ মার্চ সারাদেশে হেফাজতে ইসলামের ডাকা হরতালের নামে নারায়ণগঞ্জের ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড, সানারপাড় ও চিটাগাং রোড সড়কে গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর চালিয়ে সড়ক অবরোধ করে সহিংসতা চালায়। ওই ঘটনার পরের দিন পুলিশ বাদী হয়ে পাঁচটি, র্যাব বাদী হয়ে একটিসহ মোট ছয়টি মামলা করে। ওই ছয় মামলায় ১৪৩ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ২ হাজার ৬০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
বিশ্লেষকদের দাবি, সব দিক থেকে চাপে ফেলে সংগঠনটির নেতৃত্বে আগের মতো একটা নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে সরকার। এ জন্য রমজান মাস ও করোনার কারণে চলমান লকডাউন পরিস্থিতিতে কাজে লাগানো হচ্ছে।
তারা বলেন, হেফাজত যেকোনো পরিস্থিতিতে মূলত মাদ্রাসার ছাত্রদের ব্যবহার করে থাকে। কওমি মাদ্রাসাগুলো এখন রমজানের ছুটিতে রয়েছে। তাই এ সময়টাকে হেফাজতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মোক্ষম সময় হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩১০
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ