জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক, কলাম লেখক ও রাজনীতি বিশ্লেষক ড. তারেক শামসুর রেহমান ঢাকায় রাজউকের উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রজেক্টে নিজের ঘরের ভেতরে মরে পড়ে ছিলেন। পরে বাসা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
তার স্ত্রী ও এক মেয়ে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী। ফলে তিনি বাসায় একাই বসবাস করতেন। বাসায় একা থাকা অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। আজ সকালে পুলিশ বাসার দরজা ভেঙে তার মৃতদেহ উদ্ধার করেছে। এখনও মৃত্যুর কারণ জানা যায়নি।
রাজউকের উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রোজেক্টের প্রকল্প পরিচালক মো. মোজাফফর আহমেদ গণমাধ্যমকে তার মৃত্যুর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, আজ সকালে অধ্যাপক রেহমানের বাসায় আসেন তার গৃহকর্মী। বাইরে থেকে কলিং বেল দিলেও তিনি দরজা খোলেননি। পরে সিকিউরিটি গার্ডকে বিষয়টি জানানো হয়। এরপর আশপাশের সবাই ফ্লাটে গিয়ে তাকে ডাকাডাকি করেন। কিন্তু তার সাড়াশব্দ পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে বেলা ১১টার দিকে তুরাগ থানা পুলিশকে জানানো হয়। পুলিশ ফ্লাটের দরজা ভেঙে তার লাশ উদ্ধার করা হয়।
মোজাফফর আহমেদ আরও জানান, তারেক শামসুর রেহমানের লাশটি বাথরুমের সামনে পড়ে ছিল। তিনি সেখানে বমি করেছিলেন। পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেছে।
পুলিশের উত্তরা জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) কামরুজ্জামান সরদার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, আমরা তালা ভেঙে তার রুমের ফ্লোর থেকে তার মৃতদেহ উদ্ধার করেছি।
পুলিশ জানায়, খবর পেয়ে থানা পুলিশ তারেক শামসুর রেহমানের উত্তরা ১৮ নম্বর সেক্টরের রাজউক অ্যাপার্টমেন্ট প্রজেক্টের চার নম্বর সড়কের ১২/এ দোলনচাঁপা ফ্ল্যাট থেকে লাশ উদ্ধার করেছে। এক পা বাথরুমে এবং শরীরের বাকি অংশ রুমের ফ্লোরে পড়ে ছিল। তিনি স্ট্রোক করেছেন নাকি অন্য কোনও কারণে তার মৃত্যু হয়েছে তা ময়নাতদন্তের পর জানা যাবে। পুলিশ সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করছে।
প্রতিবেশীরা জানান, তারেক শামসুর রেহমান উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, শ্বাষকষ্টসহ বেশকিছু রোগে ভুগছিলেন। তিনি এই ফ্ল্যাটে একাই থাকতেন। গতকাল রাতে সর্বশেষ এক প্রতিবেশীর সঙ্গে তার কথা হয়েছে। সকালে তারাই পুলিশে খবর দিয়েছেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তারেক শামসুর রেহমান ওই বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সাবেক সদস্য। দুই দশক ধরে আন্তর্জাতিক রাজনীতি, আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক ও বৈদেশিক নীতি নিয়ে গবেষণা করেছেন তিনি। এসব বিষয়ে তার বেশকিছু বইও প্রকাশ হয়েছে।
জানা গেছে, তারেক শামসুর রেহমানের জন্ম পিরোজপুর জেলায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি সম্পন্ন করা জার্মানি থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের আইভিপি ফেলাে।
জাবিতে অধ্যাপনার পাশাপাশি ড. রেহমান নিয়মিত কলাম লিখছিলেন। প্রায় প্রতিটি জাতীয় দৈনিকে তার কলাম নিয়মিত ছাপা হতো। টেলিভিশন টকশোতেও অনেকটা নিয়মিত কথা বলতেন। নির্মোহভাবে নানা ইস্যুর বিশ্লেষণ করতেন তিনি।
অধ্যাপনার বাইরে তিনি লেখালেখি করতেন। আন্তর্জাতিক রাজনীতি, আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক ও বৈদেশিক নীতি নিয়ে তার বইগুলো পাঠক মহলে বেশ সমাদৃত।
তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে- ইরাক যুদ্ধ পরবর্তী আন্তর্জাতিক রাজনীতি, গণতন্ত্রের শত্রু-মিত্র, নয়া বিশ্বব্যবস্থা ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি, বিশ্ব রাজনীতির চালচিত্র, উপ-আঞ্চলিক জোট, ট্রানজিট ইস্যু ও গ্যাস রপ্তানি প্রসঙ্গ, বাংলাদেশ: রাষ্ট্র ও রাজনীতি, বাংলাদেশ: রাজনীতির ২৫ বছর, বাংলাদেশ: রাজনীতির চার দশক, গঙ্গার পানি চুক্তি: প্রেক্ষিত ও সম্ভাবনা, সোভিয়েত-বাংলাদেশ সম্পর্ক, আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্বকোষ, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার রাজনীতি প্রভৃতি।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৭১০
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ