সম্প্রতি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা উদ্ভাবিত ও ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট উৎপাদিত করোনাভাইরাসের টিকা রপ্তানি বন্ধ করে দেয় ভারত। করোনাভাইরাস সংক্রমণ ফের বাড়তে থাকায় ভারত সরকার টিকা রপ্তানি আপাতত স্থগিত রাখার এ পদক্ষেপ নিয়েছে। ভারতের জনগণের চাহিদা পুরণের লক্ষ্যে এমন ঘোষণা ভারত এর আগেও একবার দিয়েছিল। ভারতের লোকজন টিকা নেওয়ার পরবর্তীতে রপ্তানিযোগ্য টিকা থাকলে রপ্তানি করা হবে। সেরাম উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার এই টিকা নিয়ে ভারতের মাতব্বুরিতে বিপাকে পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশসহ বিশ্বের দরিদ্রতম ৯২ টি দেশ। যাদের কথা মাথায় রেখেই অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা উৎপাদনের অনুমতি পেয়েছিল ভারতের সেরাম ইন্সটিটিউট।
অনুমতি সেরামকে দেওয়া হয়েছিল, ভারতকে নয়
ভারতে আছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় লাইসেন্স ওষুধ উৎপাদনকারী শিল্প। টিকা উৎপাদনেও সবার বড় দেশটির সেরাম ইনস্টিটিউট। প্রতিষ্ঠানটিকে বিলিয়ন ডোজ উৎপাদনের লাইসেন্স দেওয়া হয় এজন্য যে, তারা যেন সেগুলো ভারতসহ উন্নয়নশীল ও স্বল্প আয়ের অন্যান্য দেশে সরবরাহ করে। এখন সংস্থাটি যে লাখ লাখ ডোজ উৎপাদন করছে, তার সম্পূর্ণ ভাগীদার কিন্তু ভারত একা নয়, বরং সেখানে ন্যায্য হিস্যা আছে বিশ্বের দরিদ্রতম ৯২টি দেশের। সেই অধিকার অস্বীকার করেই ভারত সরকার প্রাণদায়ী এই প্রতিষেধককে শুধুমাত্র ভারতের রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি হিসেবে বিবেচনা করছে।
বিশ্ব কীভাবে এই অন্যায়ের শিকার হলো- তা জানতে একটু পিছন ফিরে দেখাও দরকার। এক বছর আগে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনার ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা তখন করোনাভাইরাস ভ্যাকসিন তৈরির দৌড়ে বিশ্বের প্রথম সারিতে ছিলেন। সেসময় তারা বলেছিলেন, প্রতিষেধকের কার্যকারিতা প্রমাণিত হলে তারা এটি বিশ্বের যেকোন দেশে যেকোন সংস্থাকে উৎপাদনের সত্ত্ব দেবেন। প্রথমদিকে, যেসব সংস্থা তাদের কাছ থেকে উৎপাদনের অধিকার সংক্রান্ত চুক্তি করে তারই একটি ছিল সেরাম ইনস্টিটিউট। এক মাস পর বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের পরামর্শ শুনে ব্রিটিশ-সুইস ফার্মা অ্যাস্ট্রাজেনেকার সঙ্গে টিকাটি গবেষণা ও উৎপাদনের চুক্তি করে অক্সফোর্ড। ওই চুক্তির বলেই টিকাটির বাজারজাতকরণের সম্পূর্ণ অধিকার পায় অ্যাস্ট্রাজেনেকা। এরপর সংস্থাটি সেরামের সঙ্গে নতুন আরেকটি চুক্তি করে। চুক্তিতে উল্লেখ ছিল, আন্তর্জাতিক ভ্যাকসিন জোট- গ্যাভির সহায়তা পাওয়ার জন্য চিহ্নিত সকল দরিদ্র দেশে সরবরাহের লক্ষ্যে প্রতিষেধকের ডোজ উৎপাদন করবে সেরাম।
ভারতের অন্যায়ভাবে কৃতিত্ব নেয়া
অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা উৎপাদনের জন্য ভারতের সেরাম ইন্সটিটিউট অনুমতি পেলেও সেই টিকা বণ্টন তথা রপ্তানিতে সবজায়গাতেই ভারত সরকার ক্রেডিট নিচ্ছে। অর্থাৎ, ভারত সরকারের নয় তবুও ভারতের সরকার নিজেদের উৎপাদিত পণ্যের মতই পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে টিকা রপ্তানির মাধ্যমে টিকা রপ্তানির কৃতিত্বসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক ও রাজনৈতিক সুবিধাও নিচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়াসহ অন্যান্য দেশগুলোতে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার ও বজায় রাখার জন্য ভারত সরকার অন্যায়ভাবে এসব কৃতিত্ব বাগিয়ে নিচ্ছে। যেন নিজ দেশে গবেষণা করে আবিষ্কার করা হয়েছে এই টিকা, পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সাথে তার বিনিময় আচরণ এমনটিই। তবে এসব পশ্চিমাদেশগুলো করলেও ভারতের এতে কোনো অধিকার থাকার কথা নয়। কেননা তারা অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা গবেষণা ও উন্নয়নের পেছনে বিপুল অর্থ ব্যয় করেছে। সেই তুলনায় ভারত সরকার সেরামের ইনস্টিটিউটের গবেষণায় একটি পয়সা খরচ করেছে এমন কোনো প্রমাণ নেই। অথচ, তারপরও সেরামের টিকার প্রতিটি বৈদেশিক চালানকে গণমাধ্যমের ক্যামেরার সামনে পোজ দিয়ে কৃতিত্ব বাগানোর মহরতে পরিণত করেছেন ভারত সরকারের কর্মকর্তা ও কূটনীতিকরা।
একইসাথে, কোভ্যাক্সে পাঠানো সেরামের প্রতিটি চালানের অনুমোদন দেওয়ার দায়িত্ব নিজেই নিজের কাঁধে লাজশরমের তোয়াক্কা না করে তুলে নিয়েছে ভারত সরকার। সেরামের অভ্যন্তরীণ একটি সূত্র জানায়, কোভ্যাক্সের আওতায় যাওয়া চালানগুলোয় ডোজের সংখ্যা এবং পাঠানোর দিনক্ষণও নির্ধারণ করে দেওয়া হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকে।
ভারত সরকার তাদের এই ধরনের সম্পৃক্ততার ব্যাপারে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করেনি এবং এব্যাপারে বৃটেনের প্রভাবশালী গণমাধ্যম গার্ডিয়ানের পক্ষ থেকে জানতে যোগাযোগ করা হলেও তাতে সাড়া দিতে অসম্মতি জানায়।
বিপাকে দক্ষিণ এশিয়ার ৯২ দেশ
গত মাসে দেশজুড়ে সংক্রমণ বাড়তে থাকায় দেশব্যাপী চলমান টিকাদান কর্মসূচীতে আরও ৩৪৫ মিলিয়ন মানুষকে যুক্ত করার ঘোষণা দেয় ভারত। এ লক্ষ্যে টিকার রপ্তানিতেও নিষেধাজ্ঞা দিয়ে দেয় ভারত সরকার।
কেবল এই ধাপের জন্য ইতোমধ্যে ৬০ মিলিয়ন ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়া হয়ে গেছে এবং সবাইকে ভ্যাকসিন দিতে আরও ৬৩০ মিলিয়ন ডোজ ভ্যাকসিনের প্রয়োজন।
কোভ্যাক্সিন নামে ভারত বায়োটেকের আরেকটি ভ্যাকসিন অনুমোদন পেলেও ওই টিকাটি অল্প পরিমাণে উৎপাদিত হচ্ছে।
যতো বেশি ভ্যাকসিন অনুমোদন দেওয়া হবে সেরামের উপর চাপও তত কমবে। এই মুহুর্তে কেবল একটি মাত্র প্রতিষ্ঠান সেরাম ইনস্টিটিউটের উপর বিশাল গুরুদায়িত্ব রয়েছে। তাদের হাতে উপায় আছে দুটো। হয় ৯২টি দেশকে বঞ্চিত করে নিজ দেশ ভারতে টিকাদান কর্মসূচী সফল করা অথবা অন্যদের টিকা দিয়ে নিজ দেশের কর্মসূচী বিলম্বিত করানো।
গেটস ফাউন্ডেশন এবং ধনী দেশগুলোর অর্থ সহায়তায় গ্যাভির কার্যক্রম পরিচালিত হয়। গ্যাভি ভারতসহ যে ৯২টি দেশকে চিহ্নিত করেছে তাদের মোট জনসংখ্যা প্রায় ৪শ’কোটি যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার অর্ধেক। জনসংখ্যা বিবেচনায় এসব দেশের মধ্যে ভারতের ন্যায্য হিস্যা হয় ৩৫ শতাংশ, তবে অ্যাস্ট্রাজেনেকা-সেরাম চুক্তির সময় একটি অলিখিত সমঝোতা হয় দুই পক্ষের মধ্যে, যার আওতায় স্থানীয় চাহিদা পূরণে ৫০ শতাংশ এবং বাকি ৫০ শতাংশ দিয়ে রপ্তানি চাহিদা পূরণের ব্যাপারে উভয়পক্ষ সম্মতি দেয়।
কিন্তু ভারত হঠাৎ করেই রপ্তানি বন্ধ করে দেয় এবং নিজ দেশকে আগে ভ্যাকসিনাইজেশনের আওতায় আনার জন্য উঠেপড়ে লাগে। এতে দক্ষিণ এশিয়ার দরিদ্র ৯২টি দেশ টিকা সংকটে পড়ে যায়।
ভারত থেকে অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনের ৫০ লাখ ডোজের চালান আসতে দেরি হওয়ায় প্রত্যাশিত গতি থেকে কিছুটা সরে আসে যুক্তরাজ্যের কোভিড টিকা কর্মসূচি। যে দেশটির বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম এই টিকা গবেষণা শুরু হয় সেই দেশটিকেই সমস্যায় পড়তে হয় ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে। এর ফলে দেশটিতে টিকা প্রয়োগ অপ্রত্যাশিত ধীরগতিতে দেয়া হচ্ছে বলে সমালোচনা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। এর ফলে করোনা মহামারি আরও দীর্ঘায়িত হচ্ছে বলে জানায় সংস্থাটি।
তার চেয়েও লোহমর্ষক বাস্তবতার মুখে অবশ্য পড়েছে দরিদ্র দেশে বসবাসকারী বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ। হঠাৎ করেই তারা জানতে পারলেন- ভারত নিজস্ব জনসংখ্যার মধ্যে জরুরী টিকা চাহিদার কথা উল্লেখ করে রপ্তানি স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় তারা অদূর ভবিষ্যতে কোনো টিকাই পাবেন না।
বিপাকে বাংলাদেশ
ভারত সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার রপ্তানি সাময়িকভাবে স্থগিত করার পর সময়মত টিকা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছে বাংলাদেশ। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, টিকার পরের চালান কবে বাংলাদেশ হাতে পাবে, সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত নন তিনি। সময়মত টিকা না পেলে চলমান টিকাদান কর্মসূচিতেও এর প্রভাব পড়বে।
তিনি বলেন, “আমরা নতুন করে কোনো শিডিউল পাইনি। আমরা জিজ্ঞেস করেছি বেক্সিমকোর মাধ্যমে। তারা জানিয়েছেন, (পরের চালানের বিষয়ে) তারা এখনও কোনো খবর পাননি। তারা সেরামের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। তারা এখনও শিডিউল পায়নি। এটা হলো লেটেস্ট খবর।
কেনা তিন কোটি ডোজ টিকার মধ্যে এখন পর্যন্ত ৭০ লাখ ডোজ দেশে এসে পৌঁছেছে। নভেল করোনাভাইরাস প্রতিরোধে এর বাইরেও ৩২ লাখ ডোজ টিকা উপহার হিসেবে বাংলাদেশকে দিয়েছে ভারত। গত ফেব্রুয়ারি থেকে সারা দেশে শুরু হওয়া টিকাদান কার্যক্রমের আওতায় এরই মধ্যে প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৫২ লাখের বেশি মানুষ। আগামী ৭ এপ্রিল থেকে দ্বিতীয় ডোজ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। তবে চুক্তি অনুযায়ী ফেব্রুয়ারি ও মার্চে টিকা সরবরাহ করতে পারেনি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সেরাম ইনস্টিটিউট। এ দুই মাসে ৮০ লাখ ডোজ টিকা কম সরবরাহ হয়েছে। এতে দেশে চলমান টিকা কার্যক্রমে প্রথম পর্যায়ের দ্বিতীয় ডোজ প্রয়োগ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ভারতের কাছ থেকে টিকা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিলে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এখন উদ্যোগ নিয়েছে অন্য উৎস থেকেও টিকা সংগ্রহের জন্য। ‘অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা’র পাশাপাশি এবার বিকল্প উৎস থেকে করোনার টিকা (ভ্যাকসিন) সংগ্রহে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে সরকার।
টিকার এই সংকট কাটাতে আমেরিকান কোম্পানি জনসন অ্যান্ড জনসন থেকে করোনাভাইরাসের টিকা কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। জাতিসংঘের সংস্থা ইউনিসেফের মাধ্যমে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে এ টিকা কেনা হবে বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
গত সপ্তাহে ভারত ভ্যাকসিন রপ্তানি বন্ধ করার পর স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. জাহিদ মালেকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে ইউনাইটেড নেশন্স ইন্টারন্যাশনাল চিলড্রেনস ইমার্জেন্সি ফান্ড (ইউনিসেফ) এর মাধ্যমে জনসনের টিকা কেনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন।
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. হেলাল উদ্দিন জানিয়েছেন, জনসনের টিকা কেনার বিষয়ে আলোচনা চলছে। তবে এর প্রক্রিয়া এখনও শুরু হয়নি। এ জন্য সময় লাগবে।
টিকা থেকে দরিদ্র দেশ বঞ্চিত হলে যে ক্ষতি হবে
টিকা থেকে দরিদ্র দেশ বঞ্চিত হলে ক্ষতির মুখে পড়বে বিশ্ব অর্থনীতি। এতে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের ধাক্কা উন্নয়শীল দেশগুলোর মতো উন্নত দেশগুলোতেও লাগবে বলে অতীতের কয়েকটি গবেষণা জানিয়েছিল। সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও চলতি বছরের মাঝামাঝিতে ধনী দেশগুলো তাদের শতভাগ নাগরিককে টিকাদান কর্মসূচির আওতায় আনতে পারবে। অথচ তখনো ভ্যাকসিনেশন থেকে অনেক দূরে থাকবে দরিদ্র দেশগুলো। এর ফলে বৈশ্বিক অর্থনীতি ৯ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি ক্ষতির মুখোমুখি হবে। এ অংকটি জাপান ও জার্মানির সম্মিলিত বার্ষিক জিডিপির চেয়েও বড়। তবে এ ক্ষতিতে এখানে অর্ধেকের বেশি মূল্য চুকাতে হবে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ব্রিটেনের মতো ধনী দেশগুলোকেও।
গবেষকরা যেটিকে বলছেন ‘খুব সম্ভাব্য’ সেই চিত্রটি বলছে, বছর শেষে উন্নয়নশীল দেশগুলো হয়তো তাদের অর্ধেক জনগোষ্ঠীকে টিকা দিতে পারবে। তখন বিশ্ব অর্থনীতিকে ১ দশমিক ৮ ট্রিলিয়ন থেকে ৩ দশমিক ৮ ট্রিলিয়নের ধাক্কা সামলাতে হবে। এক্ষেত্রেও ধনী দেশগুলোকে অর্ধেকের বেশি ক্ষতি বহন করতে হবে।
ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্সের সহায়তায় পরিচালিত গবেষণাটি এ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে, টিকার ন্যায়সঙ্গত বণ্টন সব দেশের অর্থনৈতিক স্বার্থের জন্য জরুরি, বিশেষ করে সেসব দেশ, যারা বাণিজ্যের ওপর অধিক নির্ভর করে। পাশাপাশি এটি সেই ধারণাটির সমালোচনা করে যেখানে বলা হয়, টিকা ভাগাভাগি করা মানে দরিদ্র দেশকে সহায়তা করা।
এ গবেষণাটির একজন গবেষক সেলভা ডেমিরালপ বলেন, স্পষ্টত সব অর্থনীতি একটি আরেকটির সঙ্গে যুক্ত। অন্য অর্থনীতিগুলোর পুনরুদ্ধার করা ছাড়া কোনো অর্থনীতিই পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না।
উন্নয়নশীল দেশগুলো ভাইরাসের বিস্তার থামানোর লক্ষ্যে লকডাউনের কারণে যদি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের বাইরে থেকে যায়, তখন তাদের হাতে খরচ করার জন্য খুব সামান্য অর্থই থাকবে। যে কারণে উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ ও এশিয়ার রপ্তানিকারকদের বিক্রি হ্রাস পাবে। পাশাপাশি উন্নত বিশ্বের বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকেও ব্যাপকভাবে সংকটে পড়তে হবে।
বিশেষজ্ঞদের মত
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মুনাফার আগে মানুষের জীবন নিয়ে ভাবতে হবে। কার পকেটে কত টাকা রয়েছে, তাই যদি জীবনরক্ষাকারী ভ্যাকসিন ব্যবহারের মানদণ্ড হয়, তবে পৃথিবীর অসংখ্য মানুষ এই মহামারি প্রতিরোধে টিকা নিতে অসমর্থ হবে।
তারা বলেন, বিজ্ঞানের অর্জন যেন মানুষের জীবনরক্ষাকারী না হয়ে শুধু ওষুধ কোম্পানিগুলোর মুনাফা অর্জনের পথ না হয়। তারা বলেন, এই মহামারিটি একটি বিশ্বব্যাপী সমস্যা, যার একটি বৈশ্বিক সমাধান প্রয়োজন। আর যতক্ষণ না পৃথিবীর বেশির ভাগ মানুষের এই ভ্যাকসিন নেওয়ার সামর্থ্য রইবে না, ততক্ষণ বিশ্বব্যাপী অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকবে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৪১৭
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগীতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগীতার অনুরোধ জানাচ্ছি।
[wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ