বাংলাদেশে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফরের প্রতিবাদে প্রগতিশীল ছাত্র জোটের কর্মসূচিকে সংহতি জানিয়ে ও ছাত্রলীগের ঘৃণ্য আক্রমণকে ধিক্কার জানিয়ে অল ইন্ডিয়া ডেমোক্র্যাটিক স্টুডেন্ট অর্গানাইজেশনের (AIDSO) কেন্দ্রীয় কমিটি বার্তা পাঠিয়েছেন। গতকাল বুধবার (২৪ মার্চ) এআইডিএসওর নিজস্ব প্যাডে কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত বার্তাটি বাংলাদেশের প্রগতিশীল ছাত্রজোট বরাবর পাঠানো হয়েছে। খবর দ্য প্রিন্ট।
প্রগতিশীল ছাত্রজোটের ওপর হওয়া আক্রমণের প্রতিবাদে এআইডিএসও বলেন, আমরা ইতিমধ্যেই সংবাদ মাধ্যমে জেনেছি যে, গতকাল ২৩ মার্চ,২০২১, চরম সাম্প্রদায়িক ও ফ্যাসিবাদের প্রতিমূর্তি, কর্পোরেট পুঁজির দালাল ভারত সরকারের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে বাংলাদেশের বাম ও গণতান্ত্রিক ছাত্রদের ঐক্যবদ্ধ প্রগতিশীল ছাত্রজোট আহুত মোদি বিরোধী বিক্ষোভ আন্দোলনে আপনাদের দেশের মাটিতে ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদের দালাল শাসকদল আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ স্বাধীনতাকামী প্রতিবাদীদের ওপর বর্বরোচিত হামলা করেছে। কাপুরোষিত এই আক্রমণে আহত সকলের প্রতি সমবেদনা জানি ভারতের সংগ্রামী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি এআইডিএসওর পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে।
আগামী ২৬ মার্চ দুদিনের সফরে ঢাকায় পৌঁছানোর কথা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং সরকার-ঘোষিত মুজিববর্ষ উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর এই ঢাকা সফরকে ঘিরে প্রতিবাদ বিক্ষোভ দানা বেঁধেছে। দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের দুই মেরু, ডান এবং বাম উভয় দিক থেকে আপত্তি জানানো হচ্ছে।
২৩শে মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে মোদীর সফরের প্রতিবাদে প্রগতিশীল ছাত্র জোটের নেতৃত্ত্বে বিক্ষোভ করে বেশ কয়েকটি বাম দলের ছাত্র সংগঠন। বিক্ষোভে তারা নরেন্দ্র মোদীর ঢাকা সফর বাতিলের দাবি তোলে। বেলা সাড়ে চারটার দিকে বিক্ষোভ মিছিলটি টিএসসি থেকে শুরু হয়ে শাহবাগ ঘুরে আবার টিএসসি-তে এসে সমাবেশ শুরু করে।
এসময় টিএসসিতে মোদীর কুশপুত্তলিকা দাহের কর্মসুচী থাকলেও ছাত্রলীগের ১০-১২ জন কর্মী এসে কুশপুত্তলিকা ছিনিয়ে নিয়ে যায়। সেসময় বাম ছাত্র সংগঠনের সদস্যরা তাদের ধাওয়া দিলে জবাবে তারা ঢিল ছোঁড়ে। পরে ছাত্রলীগের অন্য সদস্যরাও এসে প্রগতিশীল ছাত্রজোটের নেতাকর্মীদের উপর মারধর করতে থাকে। এতে বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর ২০-২৫ জন নেতাকর্মী আহত হয়। তাদেরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের জরুরি বিভাগে সেবা দেয়ার পর হামলার প্রতিবাদে সন্ধ্যা সাতটার দিকে আরেকটি প্রতিবাদ মিছিল করা হয়।
প্রগতিশীল ছাত্রজোটের মোদীবিরোধী এই বিক্ষোভ আন্দোলের প্রতি সংহতি জানিয়ে এআইডিএসও জানায়, শাসকের হাতে আক্রান্ত বীরত্বপূর্ণ আন্দোলনকারী অকুতোভয় ছাত্রছাত্রীদের সংগ্রামের প্রতি আমাদের সংহতি ও কুর্নিশ জ্ঞাপন করছি। গৌরবময় সাম্রাজ্যবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতিধন্য ভারতীয় উপমহাদেশের মাটিতে সাম্রাজ্যবাদী, সাম্প্রদায়িক, ফ্যাসিস্ট ও কর্পোরেট শক্তির বিরুদ্ধে দলমত নির্বিশেষে দেশপ্রেমিক, স্বাধীনতাকামী ছাত্র শ্রমিক আপামর জনসাধারণের সংগ্রামী ঐক্য এখন সময়ের দাবি।
এদিকে গত ২৩ মার্চ মঙ্গলবার মোদীবিরোধী আন্দোলনে হামলা আক্রমণের ঘটনার পর গতকাল বুধবার(২৪ মার্চ) ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আগমনকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করেছে ছাত্রলীগ এবং ছাত্র অধিকার পরিষদ। বুধবার ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) এলাকায় এসব কর্মসূচি পালন করে সংগঠন দুটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।
মোদীকে স্বাগত জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ‘অদম্য অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ শীর্ষক ছাত্র সমাবেশ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ।
অপরদিকে মোদীর আগমন এবং মঙ্গলবার ঢাবি ক্যাম্পাসে মোদীবিরোধী কর্মসূচিতে ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে বিকেলে কালো পতাকা মিছিল করে ঢাবি ছাত্র অধিকার পরিষদ। পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী বিকেলে রাজু ভাস্কর্যে মিছিল অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও সেখানে আগে থেকে ছাত্রলীগ অবস্থান নেওয়ায় সমাবেশস্থল পরিবর্তন করে সংগঠনটি। পরে মিছিলটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে শুরু হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির সড়কদ্বীপ, রাজু ভাস্কর্য এবং শামসুন নাহার হল প্রদক্ষিণ করে ডাসের সামনে এসে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। মিছিলে তারা মোদীবিরোধী এবং হামলার বিচার দাবিতে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেয়।
এদিকে বুধবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে সিলেট নগরের চৌহাট্টা এলাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে সিলেটের বাম গণতান্ত্রিক জোটের কালো পতাকা প্রদর্শন ও বিক্ষোভ মিছিল পুলিশের বাধায় পণ্ড হয়ে গেছে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে দলটির নেতা-কর্মীদের ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটেছে। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে দুই নারীসহ সাতজনকে আটক করেছে পুলিশ। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আগমনের বিরোধিতা করে বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরির চেষ্টা, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের মতো ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ব্যাঘাতের চেষ্টার অভিযোগে সাতজনকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) বি এম আশরাফ উল্যাহ।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে মিছিল শুরুর আগেই রাজশাহীতে অন্তত ১০ জনকে আটকের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বুধবার বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে রাজশাহী নগরের সাহেব বাজার জিরো পয়েন্ট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে তাদের সবাইকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।
চলমান মোদীবিরোধী এইসব বিক্ষোভ আন্দোলন নিজেদের অনুপ্রেরণা জানিয়ে এআইডিএসও জানায়, ফ্যাসিস্ট মোদীর জনবিরোধী শিক্ষা স্বাস্থ্য, শ্রম, কৃষি নীতিসহ সকল জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে আমাদের দেশেও একেরপর এক আন্দোলনের ঢেউ উঠেছে, আন্দোলন ক্রমশ শক্তিশালী হচ্ছে, সেই চলমান আন্দোলনে আপনাদের এই রক্তাক্ত সংগ্রাম আমাদের দেশের সংগ্রামী চেতনাকে উদ্দীপ্ত করবে।
এসডব্লিউ/কেএইচ/১২৫৪
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগীতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগীতার অনুরোধ জানাচ্ছি।
[wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ