বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বছরব্যাপী আয়োজিত কর্মসূচি করছে না বিএনপি। দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার বাড়ায় আগামী ৩০ মার্চ পর্যন্ত স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দলীয় সব কর্মসূচি স্থগিত করেছে। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে কর্মসূচির নতুন তারিখ নির্ধারণ করে বাস্তবায়ন করা হবে বলে দলটি জানিয়েছে।
আজ বুধবার (২৪ মার্চ) বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের স্বাধীনতা সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন এই ঘোষণা দেন। গুলশানের চেয়ারপারসন কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এই সময় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, দলটির স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব আবদুস সালাম ও দলের প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি উপস্থিত ছিলেন।
খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘বর্তমানে দেশে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি বিপজ্জনক অবস্থায় উপনীত হয়েছে। সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধিতে জনমনে আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠাকে অগ্রাধিকার দিয়ে বিএনপির গৃহীত সুবর্ণজয়ন্তীর কর্মসূচি ৩০ মার্চ পর্যন্ত স্থগিত করা হলো। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে কর্মসূচিগুলো বাস্তবায়ন করা হবে।’
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বিএনপির কর্মসূচির মধ্যে ২৫ মার্চ আলোচনা সভা, ২৬ মার্চ স্বাধীনতার শোভাযাত্রা ৩০ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ ছিলে। এসব কর্মসূচি পালনে এখনও অনুমতি পাওয়া যায়নি বলেও জানান খন্দকার মোশাররফ।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে আমরা মনে করছি, এই মুহূর্তে সমাবেশ বন্ধ করা দরকার। যে কারণে আমরা সব স্থগিত করছি। দেশবাসী এবং নেতা-কর্মীদের প্রতি একটাই অনুরোধ থাকবে, সবাই মাস্ক পরবেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন। অতিরিক্ত ভিড়ে গিয়ে নিজেকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলবেন না। সরকারের উচিত হবে অবিলম্বে সমস্ত কর্মসূচি স্থগিত করে করোনার দিকে দৃষ্টি দেওয়া এবং করোনার সংক্রমণ যেন কমে, তার ব্যবস্থা করা। দেশের মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে উৎসাহিত করার জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বানও জানান তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘করোনার ভয়ংকর দ্বিতীয় পর্যায়ের আক্রমণ শুরু হয়েছে। এই আক্রমন আগের মতো দুবর্ল না। আরও বেশি শক্তিশালী। যারা আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের অল্প সময়ের মধ্যে হাসপাতালে যেতে হচ্ছে, শ্বাসকষ্ট হচ্ছে এবং সেখানে আইসিইউ না পেয়ে এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ঘুরে বেড়াচ্ছে।’
সরকার জনগণকে বাদ দিয়ে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠান করছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত সুবর্ণজয়ন্তীর কোনো অনুষ্ঠান দেখতে পাইনি। মুজিববর্ষ বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগের কোনো প্রোগ্রাম নেই। আসলে সরকার কর্মসূচিতে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে পারেনি। শুধু বিদেশি প্রভুদের সন্তুষ্ট করার জন্য, তাদের তুষ্ট করার জন্য সুবর্ণজয়ন্তীর নামে অনুষ্ঠান করছে।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আজকে আমার একজন সিনিয়র ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি তো আমার ওপরে রেগেই গেলেন যে, এখনও কেন আপনারা এই সমস্ত করছেন? এই মুহূর্তে বন্ধ করেন এগুলো। গোটা জাতি আজকে ঝুঁকির মধ্যে আছে। ভয়াবহ আক্রমণ করছে এই ভাইরাস। তাই সরকারের উচিৎ হবে অবিলম্বে সমস্ত কর্মসূচি স্থগিত করে করোনার দিকে দৃষ্টি দেওয়া এবং করোনা সংক্রমণ যাতে কম হয় এর ব্যবস্থা করা।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা তো সরকারকে সব কর্মসূচি, অনুষ্ঠান বন্ধ করতে বলছি। সারা বিশ্ব করোনা সংক্রমণ মোকাবিলাকে অগ্রাধিকার দিয়ে বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। কিছু দিন আগে আমি সিঙ্গাপুরে গিয়েছিলাম। সেখানে দেখলাম, সবাই মাস্ক পরেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেন। সেখানে কিন্তু এরকম প্রবণতাই নয় যে, তারা স্বাস্থ্যবিধি মানবেন না। সেটা করতে তারা সক্ষম হয়েছেন একটা ওরিয়েন্টেশনের মাধ্যমে, সচেতনতা তৈরি মাধ্যমে। যেটা এখানে আমাদের সরকার কোনো সচেতনতাই তৈরি করতে পারেনি।’
ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সফর নিয়ে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রীর রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে যোগদানের চেয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে সকল মহল মনে করছে। কাশিয়ানী উপজেলার ওরাকান্দি গ্রামের মন্দিরসমূহ এবং সাতক্ষীরা শ্যামনগরে যশ্বোরেশ্বরী কালীমন্দির পরিদর্শনকে পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনের প্রচারের অংশ হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছে। অথচ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বহু অমিমাংসিত বিষয়- বিশেষ করে তিস্তা চুক্তি নিয়ে কোনো পক্ষেরই কোনো মাথাব্যথা নেই।’
এদিকে আজ বুধবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে ’৯০ এর ডাকসু ও সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগই দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করেছে বলে অভিযোগ করেছেন।
তিনি দাবি করে বলেন, বিএনপি নয়, বরং হিন্দু সম্প্রদায়ের বেশিরভাগ বাড়িই দখল করেছেন আওয়ামী লীগের নেতারা।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হয়েছে শাল্লায়। ওবায়দুল কাদের সাহেব বললেন, এটা বিএনপি করেছেন। কিন্তু ধরা পড়ল কে? ১ নম্বর আসামি যুবলীগের স্বাধীন মেম্বর। আসলে সমস্যাটা হয়েছে, ওরা তো প্রতিরাতে দুঃস্বপ্ন দেখে, এই বিএনপি এল। সুতরাং ওদের বিএনপি ছাড়া কোনো কথা বের হয় না। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সব আওয়ামী লীগের আমলে হয়েছে।’
রোহিঙ্গা শিবিরে অগ্নিকাণ্ড প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের চেষ্টা না করে এটাকে ব্যবহার করছে সরকার। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান না হওয়া সরকারের কূটনৈতিক ব্যর্থতা বলে উল্লেখ করেন তিনি।
করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, করোনা নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। তারা টিকা নিয়েও করছে নানা দুর্নীতি।
দেশে আবার করোনা ছড়িয়ে পড়ছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, নিয়ন্ত্রণের জন্য কাজ করা দরকার ছিল। কিন্তু সরকার তা করেনি।
বিএনপি টিকার বিরুদ্ধে কখনো কথা বলেনি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা ভ্যাকসিনের পক্ষে। আমরা বলতে চেয়েছি, ভ্যাকসিন নিয়ে দুর্নীতি করেছেন।’
এ ছাড়া বলেন, করোনা নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে সরকার সচেতনতা সৃষ্টি করতে পারেনি।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২১২২
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগীতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগীতার অনুরোধ জানাচ্ছি।
[wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ