নগদের অধিকাংশ বিনিয়োগ সিগমা গ্রুপের। বাংলাদেশ ডাক বিভাগের সাথে এমএফএস চুক্তির মাধ্যমে সেবা দিচ্ছে সিগমা গ্রুপ। কিন্তু এটা কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে লাইসেন্স পাওয়ার ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য নয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের এমএফএস নীতিমালা অনুযায়ী, লাইসেন্স পেতে হলে নগদের ন্যূনতম ৫১ শতাংশ অংশীদারি মালিকানা বাংলাদেশ ডাক বিভাগের অধীনে থাকতে হবে। মালিকানায় অংশীদারির বিষয়টি অমীমাংসিত থাকায়, প্রতিষ্ঠানটি গত দুই বছরে লাইসেন্সের জন্য আবেদন পর্যন্ত করতে পারেনি।
তবে এবার প্রতিষ্ঠানটি আবেদন করতে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী ৫১ শতাংশ মালিকানা নিচ্ছে ডাক বিভাগ। বাকি ৪৯ শতাংশ শেয়ার থাকবে বেসরকারি খাতের ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের হাতে। এর মধ্যে বিদেশি অংশগ্রহণও থাকবে।
গতকাল মঙ্গলবার(২৩ মার্চ) রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক আলোচনায় নগদের উদ্যোক্তা ও কর্মকর্তারা এ তথ্য জানান। এতদিন নগদের মুনাফার ৫১ শতাংশ পেত ডাক বিভাগ। তবে মালিকানা ও পরিচালনায় কোনো অংশগ্রহণ ছিল না।
অনুষ্ঠানে নগদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তানভীর আহমেদ বলেন, সরকার নগদের ৫১ শতাংশ শেয়ার নেবে। এজন্য প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আইন মন্ত্রণালয়ে যাচাই-বাছাইয়ের অপেক্ষায় আছে। সব প্রক্রিয়া শেষে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে চূড়ান্ত অনুমোদন পাবে নগদ। তানভীর আহমেদ নগদের সবচেয়ে বড় অংশীদার সিগমা গ্রুপের প্রতিনিধি।
সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের জন্য আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন নগদের অন্যতম মালিক ও পরিচালক নিয়াজ মোর্শেদ এলিট, নির্বাহী পরিচালক মো. সাফায়েত আলম ও ডাক বিভাগের অতিরিক্ত মহাব্যবস্থাপক জাকির হোসেন নুর এবং ডাক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ সিরাজ উদ্দীন।
নগদের মালিকানা সংকটের বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ডাক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ সিরাজ উদ্দীন জানান, থার্ড ওয়েভ টেকনোলজিসের সাথে কোম্পনি গঠনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
তিনি বলেন, “কিছু বিষয় নিয়ে সমাধানে আসতে আমাদের আরও দুই বা তিন দফায় আলোচনায় বসতে হবে। তারপর, আমরা মূল্যায়নের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ের নিকট আবেদনপত্র পাঠাব”।
তিনি জানান, ডাক বিভাগ প্রতিষ্ঠানটির ৫১ শতাংশ মালিকানা পেলেও কোনও বিনিয়োগ করবে না।
তথ্য এবং যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অধীনে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সদস্য এবং নগদের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ শাফায়েত আলম জানান, ডাক বিভাগের বিনিয়োগের বিষয় মূল্যায়নে কমিটি গঠন করা হয়েছে।
ডাক বিভাগ কীভাবে অবকাঠামোগত ব্যবস্থাকে বিনিয়োগ মূল্যে রূপান্তর করতে পারে তা নিয়ে ইতোমধ্যে কমিটি দিক-নির্দেশনা তৈরি করেছে বলে জানান তিনি।
নগদের শেয়ার সোনালী ব্যাংক কিনছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে নগদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তানভীর আহমেদ মিশুক বলেন, সোনালী ব্যাংক যে প্রস্তাব দিয়েছে, তা গ্রহণযোগ্য হয়নি। সোনালী ব্যাংক যে বিনিয়োগ করতে চেয়েছে, তা অনেক কম।
তিনি জানান, যখন ৮০ কোটি লেনদেন ছিল, তখন নগদের ভ্যালুয়েশন ছিল প্রায় ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। এখন লেনদেন ৪০০ কোটি টাকা, ভ্যালুয়েশনও পাঁচ গুণ বেড়েছে।
নগদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রাহেল আহমেদ বলেন, নগদের গ্রাহক ও লেনদেনে সাম্প্রতিক সময়ে বড় প্রবৃদ্ধি হয়েছে। গত নভেম্বরে গ্রাহক ছিল ২ কোটি, এখন তা বেড়ে হয়েছে ৩ কোটি ৮০ লাখ। লেনদেনও ১৫০ কোটি থেকে ৪০০ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস বা এমএফএস বাজারে নগদের শেয়ার ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ।
সাম্প্রতিক বিজ্ঞাপন বিতর্ক নিয়ে নগদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রাহেল আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে বিজ্ঞাপনে নতুনত্ব এনেছে নগদ। কাউকে আক্রমণ করে ‘ব তে বেকুব’ বিজ্ঞাপন প্রচার করা হয়নি। নতুনভাবে এই বিজ্ঞাপন আসছে বলে জানান তিনি।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে, আয়ের অংশ হিসেবে সরকারকে এক কোটি ১২ লাখ টাকা প্রদান করে নগদ। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ডাক বিভাগের নেট আয়ের হিসাবে এই অর্থ অন্তর্ভুক্ত হয়।
আয়ের অংশ শেয়ারের মাধ্যমে, ডাক বিভাগের অধীনে একমাত্র লাভজনক সেবা প্রদানকারী হওয়ার ইতিহাস গড়ে নগদ।
দৈনিক মোট লেনদেন ৪০০ কোটি টাকা হওয়ায় নগদের বর্তমান মূল্য এখন এক বিলিয়ন ডলারের বেশি বা প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি বলে দাবী করেন তানভীর আহমেদ মিশুক। তৃতীয় পক্ষের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সাহায্যে গত বছর জুনে তারা প্রতিষ্ঠানটির মূল্যায়ন যাচাই করান। তখন দৈনিক ৮০ কোটি টাকা লেনদেনের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠানটির মূল্য বা সম্পদের পরিমাণ ছিল দুই হাজার ৩০০ কোটি টাকা।
তবে, তিনি মূল্যায়নকারী প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশ করতে চাননি। ডাক বিভাগের ৫১ শতাংশ অংশীদারি ঐ প্রতিষ্ঠানটির মূল্যায়নের ভিত্তিতে হবে বলেও জানান তিনি। সরকার নগদ অর্থে এখানে বিনিয়োগ না করলেও তাদের সদিচ্ছা এবং সম্পদের বিষয়টি মূল্যায়ন করা হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তানভীর আহমেদ মিশুক বলেন, ‘কিছু গুজব বাজারে ভাসছে, খুব শিগগিরই মানুষ গুজবগুলো সম্পর্কে পরিষ্কার হয়ে যাবে। কারণ এমন একটি প্রতিষ্ঠান আরও ওপরে যাক, এটা অনেকেই চাইছে না। কিন্তু এ দেশের মানুষের আস্থা ও ভালোবাসার কারণে নগদ আজকের অবস্থানে দাঁড়িয়ে আছে। দেশের মানুষকে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে আনতে নগদ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।’
অনুষ্ঠানে মোবাইল আর্থিক সেবায় নতুন চমক আনার ঘোষণা দেয় প্রতিষ্ঠানটি। এ খাতের বিশ্বখ্যাত ‘জায়ান্ট’ কয়েকটি টেকনোলজি কোম্পানির সঙ্গে এখন কাজ করছে, যারা ‘নগদ’-এ বিনিয়োগ করবে। এসব কোম্পানি বাংলাদেশের আর্থিক খাতে আকর্ষণীয় অংকের বিনিয়োগ করাসহ অভিনব প্রযুক্তি নিয়ে আসবে বলে জানিয়েছে।
২০১৯ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশ ডাক বিভাগের ডিজিটাল আর্থিক সেবা ‘নগদ’-এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বতর্মানে দেশের মোবাইলে আর্থিক সেবার প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ লেনদেন নগদের মাধ্যমে হচ্ছে বলে কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রাহেল আহমেদ জানান।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৯০২
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগীতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগীতার অনুরোধ জানাচ্ছি।
[wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ