খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলায় স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে এক গৃহবধূকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় উপজেলার পাতাছড়া ইউনিয়ন পরিষদের ২নং ওয়ার্ড সদস্য মো. মহিউদ্দিনকে আসামি করে আজ মঙ্গলবার(১০ মার্চ) রামগড় থানায় মামলা করেছেন ভুক্তভোগী গৃহবধুর পিতা। এরপর থেকে ইউপি সদস্যের হুমকিতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন ওই নারী ও তার বাবা।
মহিউদ্দিন উপজেলার পাতাছড়া ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য এবং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি।
গৃহবধূর বাবা অভিযোগ করে বলেন, ‘পাঁচ মাস আগে পাতাছড়ার মো. ফয়েজের সাথে তার মেয়ের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই মাদকাসক্ত স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সহযোগিতায় দিনের পর দিন আমার মেয়েকে ধর্ষণ করে আসছে ইউপি সদস্য ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মহিউদ্দিন। গত পাঁচ মাসে চার বার ধর্ষণ করেছে ইউপি সদস্য মহিউদ্দিন। লজ্জায় আত্মহত্যা করতে গিয়েছে আমার মেয়ে।
তিনি আরও বলেন, নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে আমার মেয়ে (ধর্ষিত গৃহবধূ) গত বৃহস্পতিবার (৪ মার্চ) তার মামার বাড়িতে চলে গেলে বিষয়টি জানাজানি হয়। পরে ইউপি সদস্য মো. মহিউদ্দিন, ভুক্তভোগীর স্বামী মো. ফয়েজ, শ্বশুর মো. ওমর ফারুক ও শাশুড়ি নূরজাহানের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করি।
তিনি আরও বলেন, রামগড় থানায় মামলা করতে গেছেন কিন্তু ইউপি সদস্যের নাম শুনে রামগড় থানার ওসি তদন্ত মনির হোসেন মামলা না নিয়ে তাদেরকে গত শনিবার (৬ই মার্চ) দিনব্যাপী থানায় বসিয়ে রেখে হয়রানি করেছেন। মামলা দিতে গেলে মামলা নিতে চাননি রামগড় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-তদন্ত) মনির হোসেন।
এব্যাপারে রামগড় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-তদন্ত) মনির হোসেন বলেন, মামলা দিলেই নিতে হবে এমন কোথাও লেখা নেই। অভিযোগে সন্দেহ আছে। যাচাই করে দেখব; মামলা নেওয়া যায় কিনা। ঘটনাটি আমার কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি বিধায় মামলা নিইনি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শনিবার সন্ধ্যায় তদন্তের অজুহাতে অভিযুক্ত ইউপি সদস্যের বাড়িতে গিয়ে দুই ঘণ্টার বৈঠক শেষে ফিরে যায় পুলিশ। এরপর থেকে ইউপি সদস্যের হুমকিতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন ওই নারী ও তার বাবা।
তবে ধর্ষণের অভিযোগ অস্বীকার করে মহিউদ্দিন বলেন, ‘আমার প্রতিপক্ষ গ্রুপ আমাকে আগামী নির্বাচন থেকে দূরে রাখতেই মিথ্যা ষড়যন্ত্র করছে। আমি এই ধরনের ঘটনার সাথে জড়িত না।’
রামগড় থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মনির হোসেন জানান, ধর্ষণের অভিযোগে মঙ্গলবার থানায় একটি মামলা হয়েছে। গৃহবধূকে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্যে খাগড়াছড়ি পাঠানো হয়েছে। তদন্ত চলছে। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা জানান, দলীয় প্রভাব খাটিয়ে স্থানীয় নেতারা ধর্ষণসহ বহু অপকর্মই করে থাকেন, যার বিরুদ্ধে স্থানীয়রা অভিযোগ করতেও ভয় পান। স্থানীয় পদপ্রাপ্ত প্রভাবশালী নেতাদের বিরুদ্ধে থানা প্রশাসনও এক প্রকার নমনীয় থাকেন। সেটা হোক ভয় অথবা কোনো বিনিময় মাধ্যমে। খুব ঠেকায় না পড়লে স্থানীয় প্রশাসন মামলা নেন না। ফলে স্থানীয় নেতারাও লিপ্ত থাকেন লাগাম ছাড়া অপরাধকর্মে। এক্ষেত্রে প্রশাসনের দায়িত্বে অবহেলা বা অনিয়মসহ স্থানীয় নেতাদের ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন সংশ্লিষ্টরা। তারা মনে করেন, ক্ষমতার কারণে স্থানীয় নেতাদের কুদৃষ্টির শিকার হোন গ্রামের অসহায় নারীরা এবং ধর্ষণের শিকার হলেও অভিযোগ তুলতে কিংবা মামলা করতে ভয় পান। দেশে আইনের অনুশাসনের অভাব রয়েছে বলে এসব ঘটনা ঘটে বলে মনে করেন তারা।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ক্ষমতা বলে তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ থেকে পার পেয়ে যান বলে তারা স্থানীয় পর্যায়ে নানা অপকর্মে উৎসাহী হয়ে ওঠেন। তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া চললে এমনটি হবার ঘটনা অনেকটাই নেমে আসবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এবিষয়ে সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনের যথাযথ ভূমিকা পালনের দাবি জানান তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/ ২০১২
আপনার মতামত জানানঃ