২০১৮ সালের ৪ অগাস্ট মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোডে সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারের বাড়ি থেকে বের হওয়ার পথে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের গাড়িতে হামলা হয়। হামলার প্রায় আড়াই বছর পর অবশেষে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পক্ষ থেকে সম্প্রতি আদালতে এ চার্জশিট দাখিল করা হয়। চার্জশিটে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়েছে।
আসামিরা হলেন- নাইমুল হাসান, ফিরোজ মাহমুদ, মীর আমজাদ হোসেন, মো. সাজু ইসলাম, রাজিবুল ইসলাম রাজু, শহিদুল আলম খান কাজল, তান্না ওরফে তানহা ওরফে মুজাহিদ আজমি তান্না, সিয়াম ও অলি আহমেদ ওরফে জনি। এছাড়া অজ্ঞাত আরও ১৫-২০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
ডিবির যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম বিষয়টি নিশ্চিত করে জাতীয় এক দৈনিককে বলেন, বেশ কিছুদিন আগেই চার্জশিট অনুমোদন করা হয়েছে। সম্প্রতি আদালতে তা দাখিল করা হয়।
একই ধরনের তথ্য জানিয়ে ডিবির উপকমিশনার গোলাম মোস্তফা রাসেল ওই দৈনিককে বলেন, সরকাবিরোধী ষড়যন্ত্রের সন্দেহে ওই হামলার ঘটনা ঘটেছিল।
চার্জশিটে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালে ৪ আগস্ট রাতে সুজনের (সুশাসনের জন্য নাগরিক) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের ইকবাল রোডের বাসায় নৈশভোজের দাওয়াতে গিয়ে মার্শা বার্নিকাট এ হামলার শিকার হন। ওই রাতে নৈশভোজের নামে তিনি গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেনসহ আরও কয়েকজনের সঙ্গে সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্র করছিলেন বলে খবর পায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। আনুমানিক রাত ১১টায় ছাত্রলীগের নাইমুল হাসান ওরফে রাসেলের নেতৃত্বে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের একটি দল ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। তারা মার্শা বার্নিকাটের গাড়ি ধাওয়া করলে রাষ্ট্রদূত দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। এ সময় সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের বাড়িতেও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। দলটি বাড়ির জানালার গ্লাস ভাংচুর করে বদিউল আলম, তার স্ত্রী ও ছেলে মাহবুব মজুমদারকে জীবননাশের হুমকি দেয়। মাহবুবকে ধাক্কা দিয়ে আঘাত করেন। বাড়ির প্রধান গেট ধাক্কাধাক্কি করে, ভয়ভীতি দেখিয়ে তারা চলে যান।
এ ঘটনায় ওই বছর ১০ আগস্ট রাতে ড. বদিউল আলম মজুমদার বাদী হয়ে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। দীর্ঘ তদন্ত শেষে গত ১৮ জানুয়ারি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. আবদুর রউফ ডিবির পরিদর্শক (নিরস্ত্র) চার্জশিট দাখিল করেন।
চার্জশিটে আরও উল্লে¬খ করা হয়, ২০১৮ সালে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন সংগঠন সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ড চালায়। ওই বছরের ৪ আগস্ট রাতে ড. কামাল হোসেন ও কয়েকজন মিলে সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের ইকবাল রোডের ১২/২ নম্বর বাড়িতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের বিদায়ী নৈশভোজ আয়োজন করেন। ড. বদিউল আলম মজুমদার এবং ড. কামাল হোসেন বিভিন্ন সময় সরকারের নানামুখী কঠোর সমালোচনা করে থাকেন। তারা দেশি-বিদেশি গণমাধ্যম ও সংস্থার কাছে সরকারবিরোধী বিরূপ মন্তব্য করে থাকেন বলে তদন্ত কর্মকর্তা চার্জশিটে উল্লেখ করেছেন।
মার্শা বার্নিকাট মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে ঢাকায় আসেন ২০১৫ সালের ২৫ জানুয়ারি এবং চার বছর এখানে দায়িত্ব পালন শেষে ২০১৮ সালের ২ নভেম্বর দেশে ফিরে যান। কূটনৈতিক সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশে দায়িত্ব পালনকালে এই মার্কিন কূটনীতিক রোহিঙ্গা সংকটকে ওয়াশিংটনের কাছে গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরেছেন। মার্শা বার্নিকাট ২০১৮ সালের ৪ আগস্ট রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারের বাসায় যান । সেখানে নৈশভোজ শেষে ফেরার পথে মোটরসাইকেল আরোহীসহ একদল সশস্ত্র লোক তার গাড়িতে হামলা চালায়। একাদশ সংসদ নির্বাচনের মাত্র সাড়ে চার মাস আগে হামলার ঘটনাটি ঘটে।
বদিউল আলম মজুমদারের বাড়িতে যে নৈশভোজে বার্নিকাট গিয়েছিলেন, তা নিয়ে তখন প্রশ্ন তুলেছিল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা।
সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে দাবি করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, “কোথায় কী হচ্ছে, সেটা আমরা জানি। দেশে হচ্ছে, বিদেশে হচ্ছে। প্রথম প্রহরে, মধ্য প্রহরে, শেষ প্রহরেও হচ্ছে রাতের অন্ধকারে।”
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, “এর মধ্যেও একটা ষড়যন্ত্র, সরকারকে ফেলে দিতে হবে। বদিউল আলম মজুমদারের ঘরে….। এগুলো কিসের আলামত? এগুলো হচ্ছে ওনারা কোনো একটা পেছনের দরজা দিয়ে যাতে ক্ষমতায় আসতে পারে।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একজন বিদেশি রাষ্ট্রদূতের গাড়িতে হামলা ঘটনাকে সাধারণ অপরাধ হিসেবে দেখলে ঠিক হবে না। এর সঙ্গে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ও মর্যাদার প্রশ্নটিও জড়িত। অতিথিপরায়ণ হিসেবে বহির্বিশ্বে যে বাংলাদেশের সুনাম আছে, সেই বাংলাদেশকে যারা লজ্জায় ফেলেছে, তাদের আইনের আওতায় আনতেই হবে। সরকার একজন রাষ্ট্রদূতের গাড়িতে সন্ত্রাসী হামলা ঠেকাতে পারেনি। অন্তত হামলাকারীদের শাস্তি দেওয়া হোক। এই অপরাধীদের বিচার ও শাস্তি না হলে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি কী হবে, তা নিশ্চয়ই সরকারের নীতিনির্ধারকদের অজানা নয়।
এসডব্লিউ/ডিজে/কেএইচ/১৯৪৪
আপনার মতামত জানানঃ