করোনাকালে ৩০ শতাংশ শিশু অনলাইনে নিপীড়ন বা নির্যাতনের শিকার হয়েছে। নিপীড়নের শিকার হওয়া শিশুদের ৫২ দশমিক ২৫ শতাংশ মেয়েশিশু। ৪৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ ছেলেশিশু। করোনাকালে অনলাইনে শিশু নির্যাতনবিষয়ক এক জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। রোববার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে এক সংবাদ সম্মেলনে এই জরিপের ফলাফল তুলে ধরা হয়। আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) জরিপটি করেছে। আর্থিক সহযোগিতা দিয়েছে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)।
সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির শিশু অধিকার ইউনিটের সমন্বয়ক ওম্বিকা রায় বলেন, ‘দেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ পাস হয়েছে ঠিকই কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য এই আইনে অনলাইনে শিশুদের দ্বারা শিশু নির্যাতন বিষয়টিকে চিহ্নিত করে আলাদা কোনও বিধান রাখা হয়নি, যার কারণে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে কন্যা শিশুর প্রতি সহিংসতা বেড়েই চলেছে।’
অনলাইনে শিশু নিপীড়নের ধরন সম্পর্কে বলা হয়, শিশুদের ব্যক্তিগত ও সংবেদনশীল তথ্য ইন্টারনেটে প্রকাশ, যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন, অশালীন প্রস্তাব, সাইবার বুলিং, ব্ল্যাকমেইলিং, পর্নোগ্রাফি এবং কোনো না কোনোভাবে যৌনতাবিষয়ক ছবি ও তথ্য দেখতে পাওয়া।
১০৮ জন শিশুকে মুঠোফোনে সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে জরিপটি করা হয়। জরিপে এসেছে, ৫৪ শতাংশ শিশুর নিজস্ব ডিভাইস (মুঠোফোন, কম্পিউটার, ট্যাব) আছে। অন্তত ৯৪ শতাংশ শিশু জানিয়েছে, করোনাকাল কোনো না কোনোভাবে তাদের জীবনে প্রভাব ফেলেছে। অনলাইনে নিপীড়ন-নির্যাতনের শিকার শিশুদের ৪১ শতাংশ পরবর্তীকালে তাদের অভিভাবক ও স্বজনদের বিষয়টি জানিয়েছে। তার মধ্যে ৬ শতাংশ শিশুর পক্ষ থেকে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
করোনকালে শিশুরা যেসব ধরনে নির্যাতিত হয়েছিল তার মধ্যে উল্লেখযাগ্য ছিল শিশুদের ব্যক্তিগত ও অসংবেদনশীল তথ্য ইন্টারনেটে প্রকাশ করা, অনলাইনে যৌন হয়রানি ও যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়া, অশালীন প্রস্তাব দেওয়া, সাইবার বুলিং ব্ল্যাকমেইলিং, পর্নোগ্রাফি এবং কোনো না কোনোভাবে অনলাইনে যৌনতা বিষয়ক ছবি বা তথ্য দেখতে পাওয়া ইত্যাদি।
আসক জানায়, গত জানুয়ারি মাসে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এর শিশু অধিকার ইউনিট চারটি বিভাগের পাঁচটি জেলায় একটি সংক্ষিপ্ত জরিপ পরিচালনা করেছে। ওই জরিপের মূল লক্ষ্য ছিল করোনাকালে শিশুদের অনলাইনে ঝুঁকির মাত্রা ভয়াবহতা সম্পর্কে বাস্তবিক তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করা। জরিপ কার্যক্রমটি যথাক্রমে ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং সাতক্ষীরা জেলায় পরিচালিত হয়েছে।
পুরো জরিপ কার্যক্রমে তথ্য সংগ্রহ অঞ্চল এবং তথ্যদাতা বাছাইয়ে প্রত্যাশা অনুযায়ী (পারপাসিভ স্যাম্পলিং) এবং স্বাধীনভাবে (র্যান্ডম স্যাম্পলিং) উভয় ধরনের গবেষণা নমুনায়ন করা হয়েছে। মোট ১০৮ জন তথ্য দাতার মধ্যে ৬১ জন কন্যা শিশু এবং ৪৭ জন ছেলে শিশুর কাছ থেকে এই তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। তথ্যদাতা শিশুদের মধ্যে ৮৩ শতাংশ শিক্ষার্থী এবং ১৭ শতাংশ কর্মজীবী শিশু। মোট তথ্যদাতার মধ্যে ৬ শতাংশ ছিল বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ২০২০ সালে আসকের এক গবেষণায় দেখা যায়, ৮ দশমিক ৩৯ শতাংশ মেয়েশিশু অনলাইনে যৌন হয়রানি বা নির্যাতনের শিকার হয়েছে। করোনাকালে জরিপে দেখা যায়, এই হার প্রায় চারগুণ বেড়ে গেছে।
আসক অনলাইনে শিশু নিপীড়নের ঘটনা প্রতিরাধ ও প্রতিকারে বেশ কিছু সুপারিশ করে। এর মধ্যে অন্যতম ছিল: শিশুদের নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহারে সচেতনতা, এসব বিষয় পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্তিকরণ, অভিভাবকসহ সকল পর্যায়ের সচেতনতা সৃষ্টি, প্যারেন্টাল কন্ট্রোল অ্যাপস ব্যবহারে উৎসাহী করা, প্রাসঙ্গিক আইনগুলোতে সংশোধনী আনা।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/২১০০
আপনার মতামত জানানঃ