বাঙলা কলেজের এক ছাত্রীকে যৌন হেনস্তা অতঃপর জিম্মি করে তিন হাজার টাকা আদায় করে মুক্তি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে সরকারি তিতুমীর কলেজের এক ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে।
গত বৃহস্পতিবার তিতুমীর ক্যাম্পাস কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে গিয়ে ওই ছাত্রী শ্লীলতাহানির শিকার হন।
জানা যায়, অভিযুক্ত শিক্ষার্থী তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্রলীগের উপ-মানব উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক ইমাম হাসান শুভ। এছাড়াও তিনি বনানী থানা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি।
ভুক্তভোগী অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ওই শিক্ষার্থী ফেসবুকে এক পোস্টে ঘটনার বিস্তারিত জানান। যোগাযোগ করা হলে গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, গত বৃহস্পতিবার পরীক্ষা শেষে কিছুক্ষণ তিতুমীর কলেজ মাঠে অবস্থান করেছিলেন তিনি। এ সময় ওই কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শুভ মাঠের মধ্যে তাকে উত্ত্যক্ত করে। সে বাজে ভাষায় টিজ করতে থাকে, একাধিকবার প্রেমের প্রস্তাব দেয়।
এর প্রতিবাদ করলে শুভ ও তার সহযোগীরা তার সঙ্গে থাকা ছেলে বন্ধুদের বেধড়ক মারতে থাকে। এরপর তাদের বাইকের ক্ষতি করার অভিযোগ তুলে ১০ হাজার টাকা দাবি করে। তা দিতে রাজি না হওয়ায় এক পর্যায়ে ২০-২৫ জন মিলে তাদের হেনস্তা করে। এ সময় তিনি অজ্ঞান হয়ে মাঠের মধ্যে পড়ে যান। এক পর্যায়ে ৩ হাজার টাকা দিয়ে বাড়ি ফিরতে হয়েছে।
প্রতিবাদ করলে শুভ ও তার সহযোগীরা তার সঙ্গে থাকা ছেলে বন্ধুদের বেধড়ক মারতে থাকে। এরপর তাদের বাইকের ক্ষতি করার অভিযোগ তুলে ১০ হাজার টাকা দাবি করে। তা দিতে রাজি না হওয়ায় এক পর্যায়ে ২০-২৫ জন মিলে তাদের হেনস্তা করে।
এ বিষয়ে গণমাধ্যম থেকে শুভর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তা সম্ভব হয়নি। তিতুমীর কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জুয়েল মোড়লকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, বিষয়টি তিনি ফেসবুকে দেখেছেন। ক্যাম্পাসে শুভর কোনো তৎপরতা নেই। এ বিষয়ে সভাপতিকে নিয়ে ভুক্তভোগী মেয়ের সঙ্গে কথা বলা হবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন বলেন, অভিযোগ প্রমাণিত হলে শুভর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই।
ছাত্রলীগ এখন কেবল ছাত্রসমাজের কাছে এখন আতঙ্কের নাম নয়, গোটা দেশের নিকট আতঙ্কের নাম। হত্যা ছাড়াও চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, অপহরণ, নির্যাতন, এমনকি ধর্ষণসহ আরও অনেক অভিযোগ রয়েছে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে৷
কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না ছাত্রলীগকে। বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ক্ষমতাসীন আ’লীগের সহযোগী সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একের পর এক সংঘর্ষ ও খুনের ঘটনাসহ বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য বারবার আলোচনায় আসে ছাত্রলীগ। মাদক ব্যবসা, টেন্ডার-বাণিজ্য, পুলিশকে মারধরসহ একের পর এক নানা অভিযোগ উঠেছে সংগঠনটির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। ছাত্রলীগ যে আদর্শ ও নীতিতে একটি সংগঠনে রুপ নিয়েছিল সেই আদর্শ এখন আর নেই। বিশ্লেষকরা বলেছেন, আদর্শের চর্চা না থাকার ফলে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের নেতারা দুর্নীতিসহ নানান অনিয়মের সাথে জড়িয়ে পড়ছে।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের দৌরাত্ম্য দিনদিন চাউর হয়ে উঠছে। ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে ক্ষমতার চূড়ান্তে বসবাস করেন। তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন ও সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে আগ্রহবোধ না করায় তাদের দৌরাত্ম্য আরও বেড়ে চলেছে। ছাত্রলীগের এই আইনের উর্ধে চলে যাওয়ার পেছনে অবশ্য রাজনৈতিক নেতা কুৎসিত হাতের ভূমিকা রয়েছে। তারা বলেন, ছাত্রলীগ সংগঠনটির ছাত্রদের ধীরে ধীরে উগ্র এবং একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীতে রুপদানের পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক নেতাদের অনৈতিক মদদ ও উস্কানি। এ বিষয়ে প্রশাসনের জরুরি পদক্ষেপ হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩৩৩
আপনার মতামত জানানঃ