ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর থানাকে ব্যবহার করে এক আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি করার অভিযোগ উঠেছে। বাঞ্ছারামপুরে নারীসহ এক পরিবারের চার গ্রামবাসীকে বাড়ি থেকে গভীর রাতে আটক করে থানায় ৩ দিন আটকে রেখে পুলিশের নামে দেড় লাখ টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ওই আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে। গতকাল মঙ্গলবার(২৩ ফেব্রুয়ারি) ভুক্তভোগী কাঠমিস্ত্রি সেলিম মিয়া টাকা ফেরত ও নিরাপত্তা চেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের (নবীনগর সার্কেল) কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার সোনারামপুর ইউনিয়নের চর মরিচাকান্দি গ্রামের হতদরিদ্র হক সাহেবের বাড়িতে গত বছরের ১ নভেম্বর রাত দেড়টার সময় বাঞ্ছারামপুর মডেল থানার এসআই রফিকুল ইসলাম, এএসআই আশরাফুল আলম ও মনিরসহ একদল পুলিশ অভিযান চালায়। এসময় হকসাবের ছেলে সেলিম মিয়া, তার ভাই হালিম মিয়া, তার স্ত্রী স্মৃতি বেগম এবং মামাতো ভাই মোস্তফাকে ওসি ডেকেছেন বলে থানায় নিয়ে যান এবং ৪ নভেম্বর দুপুর পর্যন্ত আটকে রাখেন। পরে বাঞ্ছারামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য চর মরিচাকান্দি গ্রামের আরিফ বিল্লাহ মানিক থানা থেকে ছাড়াতে আটকদের পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে ১ লাখ ৪৯ হাজার টাকা নেন। পরে নিজে থানায় উপস্থিত থেকে আটকদের কাছ থেকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর রাখেন। পরে তাদের ছেড়ে দেয় পুলিশ।
অভিযোগকারী সেলিম মিয়া জানান, বাঞ্ছারামপুর থানার দারোগা রফিক, আরশাফুল ও মনিরসহ আরও কয়েকজন পুলিশ বিনা কারণে আমাদের উপজেলার সোনারামপুর ইউনিয়নের চর মরিচাকান্দি গ্রামের বাসিন্দা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আরিফ বিল্লাহ মানিকের উপস্থিতিতে আমার তিন ভাই ও ভাইয়ের বউকে ওসি ডেকেছেন বলে ১ নভেম্বর রাত দেড়টায় থানায় নিয়ে যায়। মানিক আমাদের থানা থেকে ছাড়াতে টাকা লাগবে বলে আমার পরিবারকে জানান। আমরা ধারদেনা ও সুদে এনে ৪ নভেম্বর থানায় উপস্থিত মানিককে ১ লাখ ৪৯ হাজার টাকা দিলে পুলিশ আমাদের সাদা কাগজে স্বাক্ষর রেখে থানা থেকে ছেড়ে দেয়। আমাদের ব্যবহৃ ত চারটি মোবাইল ও ভাইয়ের সঙ্গে থাকা জাতীয় পরিচয়পত্র মানিক মিয়ার কাছে রয়েছে বলে জানতে পেরে তার কাছে এগুলো চাইলে সে আমাদের কাছে আরও ১০ হাজার টাকা দাবি করে এবং হুমকি-ধমকি দেয়। তাই বাধ্য হয়েই অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ দিয়েছি।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতা মানিক জানান, তাদেরকে থানা থেকে আমি ছাড়িয়ে এনেছি এটা সত্য। তবে তাদের কাছ থেকে কোনো টাকা-পয়সা নিইনি। তাদের মোবাইল ও জতীয় পরিচয়পত্র আমার কাছে নেই। তাদের কোনো রকমের ভয়ভীতি আমি দেখাইনি, এটা মিথ্যা কথা। আমার বিরুদ্ধে ওরা লিখিত অভিযোগ করেছে, এটা আমি শুনেছি।
এ ব্যাপারে বাঞ্ছারামপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাজু আহমেদ জানান, চর মরিচাকান্দি গ্রাম থেকে চার জনকে থানায় আনা হয়েছিল জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। পরে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। তাদের ছাড়িয়ে নেওয়ার নামে চর মরিচাকান্দি গ্রামের মানিক তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন বলে শুনেছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখব।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্থানীয় থানার সাথে স্থানীয়ভাবে রাজনৈতিক ক্ষমতাশালীদের এক গোপন সম্পর্ক থাকে যার ফলে ক্ষমতাশালীরা ক্ষমতার অপব্যবহার করে থানাকে নিজেদের বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করে থাকে। বলা চলে, থানার পুলিশদের মাধ্যমে নিজেদের ব্যক্তিগত ইচ্ছা ও কাজের প্রতিফলন ঘটিয়ে থাকেন। এর ভাগ অবশ্য থানার কিছু পুলিশের পকেটেও যায়। থানাকে ব্যবহার করে বিরোধীদলকে বিভিন্ন মামলা ও আটকের মাধ্যমে হয়রানি ও চাঁদাবাজি চলে আসলেও এলাকার নিরীহ মানুষকে ফাঁসিয়ে টাকা আদায়ের বিষয়টাও প্রচলিত। স্থানীয়ভাবে রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের এটাও এক ধরনের আয় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। থানা ও পুলিশের সাথে সরকারদলীয় রাজনৈতিক নেতাদের এই লিয়াজু বেশ পুরোনোই। এর ফলে ভুক্তভোগী হোন বিরোধী দলের নেতাকর্মীসহ অন্যান্যরাও।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১২৪৬
আপনার মতামত জানানঃ