বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ‘বীর-উত্তম’ খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশ পুলিশের লাঠিপেটায় পণ্ড হয়ে গেছে। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গতকাল শনিবারের এই কর্মসূচি ঘিরে পুলিশ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এ সময় পুলিশ ও বিএনপি নেতাকর্মী মিলে শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছে। সমাবেশ থেকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন সরকার পতন আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন।
গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বক্তব্য দেয়ার সময় পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করে। এ সময় ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমানুল্লাহ আমান ও হাবিবুন্নবী খান সোহেলসহ কিছু নেতাকর্মীরা প্রেসক্লাবের ভেতরে চলে যান। বাকি শত শত নেতাকর্মীর উপর পুলিশ বেধড়ক লাঠিপেটা করে। নেতাকর্মীরা তখন দিগি¦দিক দৌড়াদৌড়ি করে যেদিকে পারেন পালিয়ে যান। সমাবেশ যখন শেষ পর্যায়ে কদম ফোয়ার দিক থেকে পুলিশ একযোগে সমাবেশের দিকে আসে। মুহূর্তের মধ্যে সমাবেশের নেতাকর্মীরা তোপখানা রোড, জাতীয় প্রেসক্লাবের গেইট ডিঙিয়ে পালাতে থাকে। পুলিশ লাঠিচার্জ করে পুরো সমাবেশ পন্ড করে দেয়। নেতাকর্মীদের পুলিশ এলোপাতারি লাঠিপেটা করে। নেতাকর্মীরাও ইটপাটকেল ছুঁড়ে মারে পুলিশের দিকে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, প্রেসক্লাবে বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশের হামলা, নেতাকর্মীদের গুরুতর আহত ও গ্রেফতার করার ঘটনায় দলের পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে গ্রেফতার নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবি জানাচ্ছি। আহত নেতাকর্মীদের আশু সুস্থতা কামনা করছি। বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য মতে পুলিশের হামলায় আহত হয়েছেন ১১৯ জনের অধিক নেতাকর্মী। পুলিশ গ্রেফতার করেছে ২১ জনের অধিক নেতাকর্মীকে। বিকেল সাড়ে চারটায় নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।
রিজভী বলেন, পুলিশের হামলায় আহত হয়েছেন- বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম, সহ-তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আমিরুজ্জামান শিমুল, তিতুমীর কলেজের সাবেক ভিপি হানিফ, ঢাকা মহানগর উত্তর সিনিয়র সহ-সভাপতি মুন্সি বজলুল বাসিত আঞ্জু, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলীম নকী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের বিএনপির মেয়র প্রার্থী প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক সরদার নুরুজ্জামান, কৃষক দল কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সফিকুল ইসলাম, ছাত্রদল উত্তর নেতা সাজ্জাদ হোসেন রুবেল।
দলটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন বলেন, কোনো কারণ ছাড়াই পুলিশ বিএনপির সমাবেশে অতর্কিত হামলা চালিয়েছে। এ ঘটনায় সিনিয়র নেতাসহ অনেকে আহত হয়েছেন। শান্তিপূর্ণ সমাবেশে পুলিশের বর্বর হামলার তিনি তীব্র নিন্দা জানান।
এর আগে সমাবেশে বক্তব্যে ড. মোশাররফ তার বক্তব্যে বলেন, জিয়াউর রহমানই এ দেশের মুক্তিযুদ্ধের সূচনা করেছেন। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের কোনো এখতিয়ার নেই এই খেতাব বাতিলের। জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের প্রথম সেক্টর কমান্ডার, মুক্তিযুদ্ধের প্রথম ফোর্স ‘জেড’ ফোর্সের কমান্ডার। তার অর্জিত খেতাব বাতিলের অধিকার কারো নেই। আমি আহ্বান জানাব, আগামী দিনে এই সরকার পতনের আন্দোলনে সবাই ঐক্যবদ্ধ হোন। আজ আমি সেই আন্দোলনের ডাক দিচ্ছি।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘দেশটা ভাষণে স্বাধীন হয়নি; স্বাধীন হয়েছে যুদ্ধে। আর সেই যুদ্ধের অপর নাম জিয়াউর রহমান। যুদ্ধ মানে জিয়া; গণতন্ত্র মানে জিয়া; দেশপ্রেম, সততা, আধুনিক-স্বনির্ভর বাংলাদেশ মানে জিয়া। জিয়ার খেতাব নিয়ে আমরা ব্যবসা করি না, গর্ব বোধ করি, উৎসাহিত হই।’
রাজধানীতে গতকালের এই বিক্ষোভ সমাবেশ ঘিরে মহানগর বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের কয়েক হাজার নেতাকর্মী জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের রাস্তায় সমবেত হন। সমাবেশ ঘিরে সকাল থেকেই সংশ্লিষ্ট এলাকায় জলকামান ও অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। সকালে সমাবেশ শুরুর পর পুলিশ লাইন ধরে দাঁড়িয়ে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে। ধীরে ধীরে নেতাকর্মীর উপস্থিতি বাড়তে থাকলে পুলিশ এক পাশে সরে যায় এবং সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে।
মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি ও দলের যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেলের সভাপতিত্বে এবং দক্ষিণের কাজী আবুল বাশার ও উত্তরের আবদুল আলীম নকীর পরিচালনায় সমাবেশে বিএনপির এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আমানউল্লাহ আমান, রুহুল কবীর রিজভী, তাবিথ আউয়াল, ইশরাক হোসেন প্রমুখ বক্তব্য দেন।
পুলিশ কর্মকর্তাদের দাবি, সমাবেশকারীদের হামলায় পুলিশের আট সদস্য আহত হয়েছেন। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সহকারী পুলিশ সুপার (এসি) শেখ মো. শামীম গতকাল সন্ধ্যায় বলেন, ঘটনাস্থল থেকে ৫০ জনকে আটক করা হয়েছে। যাচাই-বাছাই শেষে তাদের মধ্যে অনেককেই ছেড়ে দেওয়া হতে পারে।
শাহবাগ থানার ওসি মামুন উর রশীদ বলেন, ‘সমাবেশে জড়ো হওয়া লোকজন প্রথমে পুলিশের ওপর চড়াও হয়। তখন পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। হামলায় আমিসহ আট পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে ১৮ জনকে থানায় আনা হয়েছে।’
এসডব্লিউ/এমএন/এফএ/১৪০০
আপনার মতামত জানানঃ